Advertisement
E-Paper

নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে বিরোধীরা

মাওবাদীদের অস্তিত্ব সে ভাবে না থাকলেও পুরুলিয়ার একসময়কার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের থেকেও বেশি আঁটোসাঁটো করছে প্রশাসন। ভোটের দিনে বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার ইতিহাস থাকায় সে দিকেও বাড়তি নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এই জেলার বহু এলাকায় ভোটের দিনেও আধা সেনার টহল আগের নির্বাচনগুলির মতো নজরে না পরায় বিরোধী দলগুলি অসন্তুষ্ট।

প্রশান্ত পাল ও দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৪ ০১:৪৫

মাওবাদীদের অস্তিত্ব সে ভাবে না থাকলেও পুরুলিয়ার একসময়কার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের থেকেও বেশি আঁটোসাঁটো করছে প্রশাসন।

ভোটের দিনে বাঁকুড়ায় রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার ইতিহাস থাকায় সে দিকেও বাড়তি নজর রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু এই জেলার বহু এলাকায় ভোটের দিনেও আধা সেনার টহল আগের নির্বাচনগুলির মতো নজরে না পরায় বিরোধী দলগুলি অসন্তুষ্ট। তাঁদের প্রশ্ন, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় আধা সেনা দেখতে পাওয়া যাবে তো? অবাধ রিগিং, ছাপ্পা ভোট চলবে না তো? তাই ভোট-পর্ব না মেটা পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার আমজনতা।

ক’দিন আগে দুই জেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখতে এসে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন, “এখানে সুষ্ঠু ও অবাধ নিবার্চনই হবে। সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী না হলেও সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী থাকবে। কোথাও কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তৎক্ষণাও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুরুলিয়ার প্রশাসন জানাচ্ছে, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই জেলায় ৫৫ কোম্পানি আধা সেনা এসেছিল। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এ বার এই জেলায় ৯১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। সঙ্গে রয়েছে রাজ্যপুলিশের সাড়ে ছয় হাজার পুলিশ। পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “মোট ১৮ হাজার নিরাপত্তারক্ষী থাকছে। তার সঙ্গে রয়েছে জেলায় আগে থেকেই মোতায়েন আরও ১১ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।” ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকের পরে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ কর্মীদের তরফে মাওবাদীদের ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে তাঁদের নিশানা না করার জন্য পুরুলিয়ার মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার গ্রামে গ্রামে পোস্টার সাঁটা হয়েছে।

জেলাশাসক বলেন, “মাওবাদী প্রভাবিত আড়শা, বাঘমুণ্ডি, বলরামপুর, বান্দোয়ান, বরাবাজার ও ঝালদার কিছু বুথে মঙ্গলবার রাতে ভোটকর্মীদের পাঠানো হচ্ছে না। ভোটকর্মীদের রাতে এলাকার জনবহুল এলাকায় রাখার জন্য মোট ১৪টি ক্লাস্টার খোলা হয়েছে। বুধবার সকালে এই রকম ৬৩টি বুথে ভোটকর্মীদের পাঠানো হবে।” পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সাবধানতা অবলম্বনের জন্য অনেক জায়গাতেই নিরাপত্তা রক্ষীরা আগে হেঁটে গিয়ে রিপোর্ট করার পরে তবেই ভোটকর্মীরা সেই রাস্তা দিয়ে যাবেন।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

পুরুলিয়ার মতোই বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের আকাশে ভোটের সময় চক্কর মারবে হেলিকপ্টার। বাঁকুড়া জেলার মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত ব্লক হল রানিবাঁধ, রাইপুর, সারেঙ্গা ও সিমলাপাল। ওই চারটি ব্লকের ৫০২ টি বুথের মধ্যে ৩২৬ টি বুথকে বিশেষ ভাবে মাওবাদী প্রভাবিত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। খাতড়ার মহকুমাশাসক শুভেন্দু বসু বলেন, “রানিবাঁধের ৯৭টি, রাইপুরের ১১২টি, সারেঙ্গার ৬৬টি, সিমলাপালের ৫১টি বুথকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওইসব বুথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। এক অফিসারের নেতৃত্বে আধা সামরিক বাহিনীর ৮ জন করে সশস্ত্র জওয়ান থাকবেন।” তিনি জানান, বাকি ‘স্পর্শকাতর’ ১৭৬টি বুথে চারজন করে সশস্ত্র জওয়ান মোতায়েন করা হচ্ছে। এরই পাশাপাশি প্রতিটি সেক্টরে বাড়তি সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী মজুত থাকছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট ১,০৩২টি বুথে কেন্দ্রীয় আধা সেনা থাকছে। ২২৫৩টি বুথে রাজ্য পুলিশ রয়েছে। ৪৯টি বুথে যৌথবাহিনী থাকছে। যে সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকবে না, সেখানে অবশ্যই ভিডিও ক্যামেরা থাকছে। এ ছাড়া মাইক্রো অবর্জারভার থাকছে। জেলায় ৭৫ কোম্পানি বাহিনী এসেছে। এ ছাড়া রাজ্য পুলিশও রয়েছে। তা ছাড়া জঙ্গলমহলে ৩ কোম্পানি ছিল। ‘অতিস্পর্শকাতর’ বলে চিহ্নিত বুথগুলিতে চারজন করে আধা সামরিক বাহিনীর সশস্ত্র জওয়ান মোতায়েন থাকছে। ‘স্পর্শকাতর’ বুথগুলিতেও চারজন করে সশস্ত্র পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। সাধারণ বুথগুলির প্রত্যেকটিতে থাকছেন দু’জন করে সশস্ত্র এবং একজন লাঠিধারী পুলিশ কর্মী।

কিন্তু এক সময় রাজনৈতিক সংঘর্ষের বার বার উত্তপ্ত হয়ে ওঠা পাত্রসায়র, ইন্দাস, কোতুলপুর, জয়পুর, তালড্যাংরা প্রভৃতি এলাকায় এ দিনই আধা সেনার টহল দেখা যায় বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। কিন্তু কমিশনের নির্দেশ অন্তত তিন দিন আগে থেকে টহল দিতে হবে। তাই বিজেপি-র প্রার্থী সুভাষ সরকার বলেন, “আগেও দাবি করেছিলাম। কিন্তু টহলদারি সর্বত্র নেই।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র অবশ্য বলছেন, “দেখা যাক ভোটের দিনটা কেমন যায়।”

যদিও দুই জেলা প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে, “প্রশাসনিক ভাবে পাওয়া রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে অতি স্পর্শকাতর ও স্পর্শকাতর বুথের তালিকা তৈরি করেছি। সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে।”

সহ প্রতিবেদন: শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

lok sabha election prashanta pal debabrata das purulia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy