প্রচারের ফাঁকে গলা ভিজিয়ে নেওয়া। ছবি: অনির্বাণ সেন।
নেই কোনও শ্লোগান। গাড়ির আগে কোনও ফ্ল্যাগ বা ফেস্টুনও নেই। কোনও রকম চিৎকার, চেঁচামেচি ছাড়া রামপুরহাট থানার মাসড়া অঞ্চলের মাহাপাড়া গ্রাম ছাড়িয়ে সেনবাঁধা গ্রামের দিকে ছুটছে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কামরে ইলাহির গাড়ি। একটা মোটরবাইকে দু’জন আরোহী পথ চিনিয়ে নিয়ে গেলেন প্রার্থীকে। দুপুরে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। পথে সিপিএম প্রার্থীর কাছে মাহাপাড়া গ্রামের এক যুবক বলেই ফেলনেন, “শতাব্দী রায়কে তো কোনও দিন এলাকায় আসতেই দেখিনি।”
এই সব নানা ক্ষোভ, অভিযোগের কথা শোনার পরে গাড়ি যখন সেনবাঁধা গ্রামের নামোপাড়ায় থামল, ঘড়িতে তখন বেলা সাড়ে ১১টা। গাড়ি থেকে নামতেই কামরে ইলাহিকে দেখতে ১০-১২ জন আদিবাসী মহিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন। তখন জেলাপরিষদের সিপিএম সদস্য হাসিনা মমতাজ, মাসড়া পঞ্চায়েতের প্রধান কণিকা সোরেন, দলের কাষ্টগড়া লোকাল কমিটির সদস্য স্বপন পাল গাড়ির ভিতরে ভাঁজ করে রাখা প্রার্থীর নাম লেখা বড় মাপের ফ্লেক্স বের করে মেলে ধরলেন তাঁদের সামনে। প্রার্থী মহিলাদের নমস্কার করে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, “জ্যোতি বসুর নাম শুনেছেন তো? আমি তাঁর দলের হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছি।” খালু মুর্মু নামে এক মাঝ বয়সী মহিলাকে বলতে শোনা গেল “কেদে-হাতুড়িতেই ভোট দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের এলাকায় জলের কষ্ট খুব। রাস্তার অবস্থা খারাপ।” জল বা রাস্তার প্রসঙ্গে না গিয়ে কামরে ইলাহি বললেন, “আমরা আপনাদের জন্য বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা চালু করেছিলাম। এখন সে সব তো বন্ধই করে দিয়েছে সরকার। এখন নানারকম মেলা, উৎসবের নামে সরকারি টাকা নষ্ট করা হচ্ছে। বেকার ছেলেমেয়েদের চাকরি নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে সরকার। আপনারা এ বারে ভাবুন কাকে ভোট দেবেন।” এই কথাগুলি কি মানুষ ভাল ভাবে নিচ্ছে? প্রার্থীর জবাব, “আজকাল টিভি’র দৌলতে গ্রামের মানুষ অনেক খবর রাখেন। আমার ভুল এলাকার মানুষ শুধরে দিয়েছেন।”
সেনবাঁধা গ্রামের নামোপাড়ায় মিনিট পনেরো থাকার পরে গ্রামের ঘোষ পাড়ায় প্রাথমিক স্কুলের পাশে গাড়ি গিয়ে থামল, তখন দুপুর সাড়ে ১২টা। গ্রামের চার-পাঁচ জন বয়স্ক মানুষ বেরিয়ে আসতেই কামরে ইলাহি তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে বয়স্করা তাঁর কাছে অভিযোগের সুরে বললেন, “এই গ্রাম থেকে তৃণমূল কোনও দিন জিততে পারেনি। সে জন্য আমাদের উপর তৃণমূলের লোকেদের রাগ আছে। কিছুদিন আগে পুলিশ গ্রাম থেকে চার জন বেকার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল।” এই কথা শুনে বর্তমান সরকারের নানা দোষ-ত্রুটির কথা তুলে ধরেন সিপিএম প্রার্থী। তাঁর কথা শেষ না হতেই আশ্বাস দিয়ে গ্রামবাসী নির্মল ঘোষ, নিতাই ঘোষরা বলেন, “এখান থেকে আপনাকে আমরাই লিড দেব।” গ্রামবাসীদের কথায় ভরসা পেয়ে চিকিৎসক কামরে ইলাহিকে দেখা গেল, ফোনে সিউড়িতে তার নার্সিং হোমে ভর্তি থাকা একজন রোগীর জন্য ওষুধ এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
কিন্তু বিরোধী প্রার্থীরা যখন নানা রকম ভাবে প্রচারে ঝড় তোলার চেষ্টা করছে, তখন আপনি একা কেন? কামরে ইলাহির জবাব, “মাইক ব্যবহার মিছিল করে গ্রামে গ্রামে একটা উৎসবের পরিবেশ তৈরি হয়। আমি নিজে মনে করি তাতে মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ হয় না। আর তিন বছরে মানুষ ভালভাবেই প্রতিরোধের ভাষা চিনে নিয়েছে। তারা যা করবে সেটা ভিতরে ভিতরে করবে। সামনে এলেই তো চিহ্নিত হয়ে যাবে। আমরা চাই সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন। এতে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। তাতে যা রায় হবে, আমরা মাথা পেতে নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy