Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

নজর নেই, নষ্ট হচ্ছে প্রেক্ষাগৃহ

সাতের দশক থেকে নয়ের দশক পর্যন্ত সিউড়িতে নাট্য বিপ্লব হয়েছে বলা যায়। ওই সময়ে উন্নত মানের প্রচুর নাটক মঞ্চস্থ করেছে ‘আনন’ এবং কয়েকটি নাট্য সংস্থা। তবে আনন শুধু নিজেরাই নয়, তারা কলকাতা, বহরমপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নামী নাট্য দলকে এনে বিভিন্ন নাটক দেখিয়েছে দর্শকদের।

কবে খুলবে রবীন্দ্রসদন। উত্তর নেই কারও কাছে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

কবে খুলবে রবীন্দ্রসদন। উত্তর নেই কারও কাছে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

অরুণ মুখোপাধ্যায়
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

সাতের দশক থেকে নয়ের দশক পর্যন্ত সিউড়িতে নাট্য বিপ্লব হয়েছে বলা যায়। ওই সময়ে উন্নত মানের প্রচুর নাটক মঞ্চস্থ করেছে ‘আনন’ এবং কয়েকটি নাট্য সংস্থা। তবে আনন শুধু নিজেরাই নয়, তারা কলকাতা, বহরমপুর-সহ রাজ্যের বিভিন্ন নামী নাট্য দলকে এনে বিভিন্ন নাটক দেখিয়েছে দর্শকদের। কুমার রায়, মনোজ মিত্র, অরুণ মুখোপাধ্যায়, মেঘনাথ ভট্টাচার্যরা সিউড়িতে নাটক পরিবেশন করে গিয়েছেন।

তবে নাট্যপ্রেমীদের ক্ষেদ, ‘আনন’-এর এখন আর সেদিন নেই। গত কয়েক বছর ধরে একটি-দু’টি নাটক পরিবেশন করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে মাত্র। তাঁদের মতে, ‘আনন’-এর জন্মলগ্ন থেকে জড়িত রজ সাহা এবং বাবুন চক্রবর্তীর মতো অনেকেই ‘আনন’ ছেড়ে ‘এখনই’ ও ‘বীরভূমের আনন’ নামে নাট্যদল করেছেন। ‘বীরভূমের আনন’ নাট্যদল প্রথম দিকে কয়েকটি ছোটখাটো নাটক প্রযোজনা করার পর, গত বছরে বাদল সরকারের ছ’টি ধ্রুপদী নাটক মঞ্চস্থ করেছে। তাতে ওই নাট্য দল যেমন সমাদৃত হয়েছে, তেমনি শহরের নাট্য বিমুখ দর্শকদের আস্থা অর্জন করেছে। এরই মাঝে ‘এখনই’ নাট্য সংস্থা থেকে বেরিয়ে এসে মুকুল সিদ্দিকি প্রতিষ্টা করেছেন ‘আত্মজ’ নাট্য সংস্থা। ওই সংস্থা রাজ্যের বিভিন্ন নাট্য দলের গত তিন বছরে ৬৭টি নাটক মঞ্চস্থ করেছে।

সিউড়ির থিয়েটারের বয়স শতাধিক বছর। তক্তাপোষের মঞ্চ করে প্রথম দিকে এই শহরের নাট্যচর্চার ইতিহাসের সূচনা বড়বাগান মেলাকে কেন্দ্র করে। ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও দেশাত্মবোধ কাহিনি নির্ভর নাটক মঞ্চস্থ হত তখন। ‘এখনই’ নাট্য সংস্থার কর্ণধার পরিচালক ও অভিনেতা রজ সাহা জানিয়েছেন, সিউড়ির অভয় দাস, দেবরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, মোহিত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ নাট্যব্যক্তিত্ব ছাড়াও লাভপুরের নির্মল শিব নাট্য সমাজ সিউড়ির নাট্য জগতকে সমৃদ্ধ করেছে। তখন নাটক দেখার জন্য দর্শক ব্যকুল হতেন।

কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ দর্শকই নাটক দেখার জন্য উত্‌সাহী নন। কেন? রজবাবু, আনন-এর স্বপন রায়, বীরভূম আনন-এর বাবুন চক্রবর্তী, থিয়েটার অভিযানের সুবিনয় দাসদের মতো অনেক নাট্য কর্মীর অভিমত, “তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য নাটক মঞ্চস্থ করা যাচ্ছে না। তার অন্যতম কারণ মঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ সমস্যা।” বোলপুরে গীতাঞ্জলি ও শান্তিনিকেতনের লিপিকা, সাঁইথিয়াতে রবীন্দ্রভবন, রামপুরহাট রক্তকরবী পুরমঞ্চের মতো নাট্যমঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে। অথচ সদর শহর সিউড়িতে যে সব মঞ্চ এবং প্রেক্ষাগৃহ আছে তা প্রায় ব্যবহারের অযোগ্য। পুরনো সার্কিট হাউসে সিধো-কানহু মুক্ত মঞ্চে কোনও আলোর ব্যবস্থায় নেই। বহু সংস্থাকেই এর জন্য হুকিং করে আলোর ব্যবস্থা করতে হয় বলে অভিযোগ। শীততাপ ডিআরডিসি হলের ভাড়া মাত্রাধিক। সেটি আবার তিন তলার উপরে। এর ফলে অনেক বয়স্ক দর্শক ইচ্ছে থাকলেও সেখানে পৌঁছতে পারেন না। উল্লেখ্য, গুরু সদয় দত্ত জেলাশাষক থাকার সময়ে দীননাথ দাসের নামে একটি মঞ্চ ও প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করেছিলেন। সেটি সিউড়ির প্রথম নাট্যমঞ্চ এবং প্রেক্ষাগৃহ। বর্তমানে সেটি এখন একটি সিনেমাহল।

রবীন্দ্রসদনে পরিবেশিত নাটকের একটি দৃশ্য। ফাইল চিত্র।

আর রবীন্দ্রসদন? তার বেহাল অবস্থা যেন কাটতেই চাইছে না। রবীন্দ্র সদন বিনোদন মঞ্চ বা প্রেক্ষাগৃহটির প্রতিষ্ঠা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের জন্ম শতবার্ষিকির সময়ে। গত এক বছর ধরে সেটি সংস্কার কাজ চলছে। এই নিয়ে শহরের নাট্যকর্মী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা বেজায় ক্ষুব্ধ। কবে সেটির সংস্কারের কাজ শেষ হবে প্রশাসন তা জানাতে পারেনি। নাট্য কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের অভিযোগ, গত বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে রবীন্দ্রসদন বন্ধ রয়েছে। সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে এরপর। তারও বছর কয়েক আগেই তত্‌কালীন জেলাশাসক সঞ্জয় কৃষ্ণ থাড়ের তত্‌পরতায় ওই রবীন্দ্রসদনের সংস্কার হয়েছিল প্রচুর টাকা ব্যয়ে। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই রবীন্দ্রসদনের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে। কিন্তু উপযুক্ত প্রশাসনিক নজরদারির অভাবে কাজ চলেছে ধীর গতিতে। এখনও পর্যন্ত রবীন্দ্রসদনের বৈদ্যুতিক কাজের দরপত্র ডাকা হয়নি। এ দিকে বৈদ্যুতিক কাজ শেষ না করে বাকি কাজ করা যাবে না বলে পূর্ত দফতর জানিয়ে দিয়েছে।

রবীন্দ্রসদন সংস্কার নিয়ে ফের দিন কয়েক আগে জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে দেখা করলেন সিউড়ি শহরের বিভিন্ন নাট্য সংস্থার কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা। ছিলেন সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক স্বপন কান্তি ঘোষ এবং সাংসদ শতাব্দী রায়। সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী আশ্বাস দিয়েছেন, “৩১ মার্চের মধ্যে রবীন্দ্র সদনের সংস্কার যাতে শেষ হয়, তার চেষ্টা চলছে।” নাট্য কর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আশা, সাংসদ বিধায়ক ও সভাপতির হস্তক্ষেপে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করে রবীন্দ্রসদনটি চালু হবে।

নাট্যকর্মীদের ক্ষোভ, এই অবস্থায় এখন প্রদীপের সলতের মতো কাজ করছে অবৈজ্ঞানিক ভাবে নির্মিত শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ সভাগৃহ। ওই মঞ্চ দেখভালের দায়িত্বে থাকা রবীন্দ্রনাথ দাস অবশ্য বলছেন, “নাটকের জন্য এই মঞ্চ তৈরি করা হয়নি। মূলত এটি সভাগৃহ। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন এই সভাগৃহে নানা অনুষ্ঠান হচ্ছে।” এই দুরবস্থা কাটিয়ে কবে সুদিন ফিরবে সে দিকেই তাকিয়ে সকলেই।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর-বীরভূম’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বীরভূম বিভাগ, জেলা দফতর
আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE