Advertisement
০৫ মে ২০২৪
তদন্তের নির্দেশ বিডিও-র

পুকুর সংস্কারে গরমিলের সন্দেহ জেলা প্রশাসনেরও

তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেছেন, হুড়ার লায়েকডি গ্রামের ওই পুকুর একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটা হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রশাসন জানিয়ে দিল, একশো দিনের প্রকল্পে ওই পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতের দেওয়া রির্পোটে ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, শ্রমিক না পাওয়ায় ওই সংস্কারের কাজ এখন বন্ধ! এতেই একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠে এসেছে প্রশাসনের অন্দরে।

হুড়ার লায়েকডি গ্রামের সেই পুকুর। —নিজস্ব চিত্র

হুড়ার লায়েকডি গ্রামের সেই পুকুর। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান দাবি করেছেন, হুড়ার লায়েকডি গ্রামের ওই পুকুর একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটা হয়নি। কিন্তু প্রাথমিক খোঁজ খবর নিয়ে প্রশাসন জানিয়ে দিল, একশো দিনের প্রকল্পে ওই পুকুর সংস্কারের কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, পঞ্চায়েতের দেওয়া রির্পোটে ব্লক প্রশাসনকে জানানো হয়েছে, শ্রমিক না পাওয়ায় ওই সংস্কারের কাজ এখন বন্ধ! এতেই একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠে এসেছে প্রশাসনের অন্দরে।

লক্ষণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের লায়েকডি গ্রামের পবন ধীবরের ওই পুকুরে বুধবার রাতে মেশিন দিয়ে মাটি কাটার ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হন আনন্দবাজারের চিত্র সাংবাদিক। এ নিয়ে হইচই শুরু হতেই প্রশাসন ওই কাজ নিয়ে খোঁজখবর শুরু করে। তাতেই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। হুড়ার বিডিও সুব্রত পালিত শুক্রবার বলেন, “এই পুকুরটির সংস্কারের জন্য মাস্টার রোল গত ২৪ তারিখ পঞ্চায়েত থেকে পাঠানো হয়েছে। সেই তালিকায় ৮৭ জন শ্রমিকের নাম ছিল। পঞ্চায়েত থেকে জানিয়েছে, তারপর থেকে শ্রমিক না পাওয়ায় ওই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাই পুকুরের মালিক নিজেই মেশিন নামিয়ে পুকুর খননের কাজ করছিলেন।” বিডিও জানান, ওই তথ্য সম্পর্কে তদন্তে নামছে প্রশাসন।

যদিও বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে গিয়ে পুকুর মালিককে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাড়ির এক মহিলা জানিয়েছিলেন, পুকুরটি সংস্কার কে করাচ্ছে তা তিনি জানেন না। অন্য দিকে, ওই পুকুর থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে পঞ্চায়েত অফিসে বসে প্রধান শেফালি মাহাতো দাবি করেছিলেন, “এই কাজ পঞ্চায়েতের কাজই নয়।” তাহলে কে এই কাজ করাচ্ছে? জানতে চাওয়ায় শেফালিদেবী জানিয়েছিলেন, কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কাজ করাচ্ছেন। কে কাজ করাচ্ছিল? কারা মারধর করেছে? প্রশ্ন করায় প্রধানের অফিসের মধ্যেই কিছু লোকজনের বাধার মুখেও পড়তে হয়। তৃণমূলের অঞ্চল নেতা লালমোহন মাহাতো বলেন, “দুষ্কৃতীরাই ওই চিত্র সাংবাদিককে মারধর করেছে।” বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশে হামলার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। যদিও শুক্রবার পর্যন্ত পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করেনি।

কিন্তু প্রধানের ব্লক প্রশাসনকে ওই রির্পোট দেওয়া এবং সংবাদমাধ্যমে অন্য রকম তথ্য দেওয়াকে ঘিরে কিছু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যেমন, পুকুরটি যে একশো দিনের প্রকল্পে সংস্কার করা হচ্ছে, সে কথা কেন প্রধান সংবাদ মাধ্যমের কাছে গোপন করে গেলেন? একই সঙ্গে ৮৭ জন শ্রমিক কাজ করতে করতে হঠাত্‌ কেন বন্ধ করে দিলেন? প্রধানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, পুকুর মালিকই কেন মেশিন দিয়ে সাত তাড়াতাড়ি পুকুর কাটাতে গেলেন? দিনের বেলায় না করে রাতের অন্ধকারেই কেন কাজ চলছিল? তাতে অন্যায় যদি না হয়ে থাকে, তা হলে কেনই বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে মারধর করা হল?

প্রশাসনের আধিকারিকদের কয়েকজন এর মধ্যে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, একশো দিনের প্রকল্পে মেশিন দিয়ে মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধানরা তা বিলক্ষণ জানেন। তার উপরে গত জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জন প্রতিনিধিদের পরিষ্কার ভাষাতেই জানিয়ে দেন যে এ ধরনের কাজে কোনও ভাবেই যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। মানুষকে কাজ দিতে হবে। তা হলে এই ভুল কেন ওই প্রধান বা দলের স্থানীয় নেতৃত্ব করলেন? তৃণমূলের এক জেলা নেতা বলেন, “ঘটনাটি দলীয় ভাবে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এতে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

ঘটনার নিন্দা করে ও মারধরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে শুক্রবার জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় হিউম্যান রাইটস ফোরামের পুরুলিয়া জেলা শাখা। সংগঠনের মুখপাত্র আবু সুফিয়ান বলেন, “সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহের অধিকার খর্ব করার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। জেলাশাসকের কাছে দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি করেছি।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, যাঁরা এই ঘটনায় জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

investtigation bdo purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE