Advertisement
E-Paper

প্রধানের বিরুদ্ধে নালিশ তৃণমূলেরই

পঞ্চায়েত পরিচালনায় দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ আগেই প্রশাসনের কাছে জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের পাঁচ তৃণমূল সদস্য। এ বার গ্রামবাসীরাও প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানালেন প্রশাসনের কাছে। ঘটনাটি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের। শুক্রবার জনা তিরিশ গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর করে ইন্দিরা আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান পূর্ণিমা মুদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৯

পঞ্চায়েত পরিচালনায় দলীয় প্রধানের বিরুদ্ধে বেনিয়মের অভিযোগ আগেই প্রশাসনের কাছে জানিয়েছিলেন পঞ্চায়েতের পাঁচ তৃণমূল সদস্য। এ বার গ্রামবাসীরাও প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তদন্তের দাবি জানালেন প্রশাসনের কাছে।

ঘটনাটি রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েতের। শুক্রবার জনা তিরিশ গ্রামবাসী গণস্বাক্ষর করে ইন্দিরা আবাস যোজনা-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান পূর্ণিমা মুদির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়েছেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের কাছে।

তবে, মহকুমাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা এ দিন দফতরে না থাকায় গ্রামবাসীদের অভিযোগ নিয়েছেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “ওই গ্রামবাসীরা প্রধানের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ জানিয়েছেন। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান।

প্রধানের বিরুদ্ধে মূলত অভিযোগ উঠেছে ইন্দিরা আবাস যোজানা নিয়ে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই প্রকল্পে পঞ্চায়েতের দশটি সংসদ এলাকায় ১৪টি করে বাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল পঞ্চায়েতের সভায়। সেই সভায় কোন এলাকার কোন বাসিন্দা বাড়ি পাবেন, তা-ও স্থির হয়েছিল। অভিযোগ, সভায় স্থির হওয়া তালিকা অনুযায়ী বাড়ি তৈরির টাকা দেওয়া হয়নি।

দিন দশেক আগে পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শম্ভু গরাই-সহ পাঁচ তৃণমূল সদস্য প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগও করেন। সেখানে বলা হয়, ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি নির্মাণের অর্থ বরাদ্দ করার ক্ষেত্রে বেনিয়ম হচ্ছে। প্রকৃত প্রাপক গরিব মানুষরা বঞ্চিত হচ্ছেন। ওই পঞ্চায়েত সদস্যরা প্রশাসনের কাছে ঘটনার তদন্ত না হওয়া অবধি ইন্দিরা আবাস যোজনায় টাকা বরাদ্দ বন্ধ রাখার দাবিও জানান। ওই লিখিত অভিযোদে অবশ্য প্রধান পূর্ণিমাদেবীর নাম ছিল না। কিন্তু, এ দিন যখন গ্রামবাসীরা মহকুমাশাসকের দফতরে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন, সেই সময়েও তাঁদের সঙ্গে দেখা গিয়েছে অভিযোগকারী ওই সদস্যদের।

তৃণমূল সূত্রের খবর, দল পরিচালিত পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে তৃণমূলের নিচুতলায় নানা ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এ দিন গ্রামবাসীদের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে অভিযোগ জানাতে নিয়ে আসার পিছনেও রয়েছেন নতুনডি পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের কিছু নিচুতলার কর্মী। ওহিদ আনসারি, আজিজ আনাসারি, সঞ্জয় মণ্ডলদের মতো স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, “ইন্দিরা আবাস থেকে বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি করছেন আমাদেরই প্রধান। প্রকৃত গরিবরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল পরিবার। ঘটনাটি দলের বিভিন্ন স্তরে জানিয়েও ফল হয়নি। অথচ গ্রামবাসীরা আমাদের কাছে বারবার অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁদের নিয়ে আমরা মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাতে এসেছি।”

কী ধরনের অভিযোগ উঠেছে পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে?

অভিযোগকারী গ্রামবাসী ও তৃণমূল কর্মীদের দাবি, ইন্দিরা আবাস যোজনার সুবিধা পেতে হলে বিপিএল তালিকায় একটি নির্দিষ্ট নম্বর (স্কোর) থাকা প্রয়োজন। কিন্তু, দেখা যাচ্ছে যাঁরা ওই প্রকল্পে বাড়ি তৈরির টাকা পাচ্ছেন, তাঁদের স্কোর অনেক বেশি। অথচ মিয়ম অনুযায়ী অনেক কম স্কোর থাকা ব্যক্তিরা টাকা পাওয়ার প্রথম দাবিদার। ওহিদ, আজিজদের অভিযোগ, “প্রকৃত প্রাকদের বদলে ইন্দিরা আবাসের অর্থ পাচ্ছেন মদের দোকান বা ইটভাটার মালিক, সরকারি কর্মী, ব্যবসায়ীরা।” এমনকী, তৃণমূলের রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির এক কর্মাধ্যক্ষ পর্যন্ত নিজের আত্মীয়দের নামে ছ’টি বাড়ি অনুমোদন করিয়েছেন বলে অভিযোগ।

এ দিন প্রশাসনে অভিযোগ জানাতে আসা গ্রামবাসী মেহেরুন বিবি, পুতুল মুদিদের দাবি, “আমাদের নাম ইন্দিরা আবাস যোজনায় প্রাপকদের তালিকায় ছিল। কিন্তু, প্রধান আমাদের বদলে সেই টাকা দিয়েছেন অন্যদের।” এ ছাড়াও সরকারি ত্রাণের গম খোলা বাজারে বিক্রি, পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ কাজ করা ঠিকাদারদের বিল দেওয়ার আগে টাকা চাওয়ার মতো অভিযোগ করা হয়েছে প্রশাসনের কাছে। তৃণমূলেরই উপপ্রধান শম্ভু গরাই বলেন, “অভিযোগগুলির যথেষ্ট সারবত্তা রয়েছে।”

প্রধান পূর্ণিমাদেবীর অবশ্য বলেছেন, “আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা হচ্ছে। নিয়ম মেনেই প্রকৃত প্রাপকদের ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।” তাঁর আরও দাবি, উপপ্রধান-সহ পঞ্চায়েতের ওই পাঁচ সদস্যই চাপ দিয়ে বেশি স্কোর থাকা কিছু ব্যক্তির নাম ইন্দিরা আবাস যোজনার তালিকায় ঢুকিয়েছেন। এখন তাঁর বিরুদ্ধে কুৎসা করা হচ্ছে। এই অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন উপপ্রধান।

এই ব্লকে দলের সংগঠনের দায়িত্বে থাকা রঘুনাথপুরের তৃণমূল বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরি এ দিন ফোন ধরেননি। তবে, জেলা তৃণমূলের অন্যতম নেতা নবেন্দু মাহালি বলেন, “কোনও ভাবেই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। নতুনডিতে প্রধানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলি নিয়ে দলীয় স্তরে তদন্ত করা হবে।”

raghunathpur raghunath pur block1 tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy