Advertisement
E-Paper

পুরনো সঙ্গীকেই ‘বহিরাগত’ তকমা কংগ্রেসের

পাঁচ বছর আগে ওই প্রার্থীর সমর্থনেই তাঁরা গলা ফাটিয়েছেন। পাড়ায় পাড়ায় মিছিল, সভায় ‘সেলেব্রিটি’ প্রার্থীর পাশে ভিড় জমিয়েছেন দলের প্রায় সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীই। কালের দশচক্রে পড়ে এ বার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সেই একই প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ তৃণমূলের শতাব্দী রায়কে ‘বহিরাগত’ তকমায় বিঁধে জোর প্রচারে নেমেছে একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেস।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫৫
সিউড়িতে তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে উন্নয়নের খতিয়ান। —নিজস্ব চিত্র।

সিউড়িতে তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে উন্নয়নের খতিয়ান। —নিজস্ব চিত্র।

পাঁচ বছর আগে ওই প্রার্থীর সমর্থনেই তাঁরা গলা ফাটিয়েছেন। পাড়ায় পাড়ায় মিছিল, সভায় ‘সেলেব্রিটি’ প্রার্থীর পাশে ভিড় জমিয়েছেন দলের প্রায় সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীই। কালের দশচক্রে পড়ে এ বার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সেই একই প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ তৃণমূলের শতাব্দী রায়কে ‘বহিরাগত’ তকমায় বিঁধে জোর প্রচারে নেমেছে একদা জোটসঙ্গী কংগ্রেস। তাঁদের দাবি, সুযোগ পেলেও ওই ‘বহিরাগত’ সাংসদ কেন্দ্রের উন্নয়ন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন।

অথচ ২০০৯ সালে শতাব্দীর বিরুদ্ধে প্রচারে বামেদের এটাই ছিল অন্যতম হাতিয়ার। জোট ভেঙে যাওয়ার পরে এ বার ওই একই কৌঁশল নিয়েছে কংগ্রেসও। তাই কেন্দ্রের দেওয়ালে দেওয়ালে দল শ্লোগান তুলেছে— ‘কলকাতা হঠান, বীরভূম বাঁচান’। ‘বহিরাগত আর নয়, এ বার ঘরের ছেলে চাই’ এই শ্লোগান লেখা ফ্লেক্স সাঁটানো রিকশায় ছেয়ে গিয়েছে রামপুরহাট শহর। দলীয় প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মির সমর্থনে মিছিল থেকে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরাও বলছেন, “আমার আপনার ঘরের ছেলে, কাজের ছেলে জিম্মিদাকে হাত চিহ্নে ভোট দিন।” এ ভাবেই এক দিকে ‘অনুন্নয়ন’ অন্য দিকে, ‘বহিরাগত’— দু’টিকেই রাজনৈতিক ইস্যু করে এ বারের ভোটযুদ্ধে পালে হাওয়া তুলতে চায় জেলা কংগ্রেস। জিম্মির স্পষ্ট বক্তব্য, “আগের সাংসদ এখানকার লোক ছিলেন না। এখানে তিনি কেবল নিজের প্রয়োজনে আসতেন। এলাকার সাধারণ মানুষ ফোন করেও তাঁর নাগাল পাননি। তিনি তো ফোন ধরেননি, উল্টে অন্য কেউ তা ধরতেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে সেই জনবিচ্ছিন্ন মহিলাই ফের এই কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন।” শতাব্দীকে নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়াতেই প্রচারে এসে তিনি বারবার বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন বলেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস প্রার্থী।

তারকা প্রার্থীদের নিয়ে সমাজের একটা অংশের বরাবরের ক্ষোভ, এক জন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁরা তেমন জনসংযোগ গড়তে পারেন না। ভোটের প্রচারে মানুষ তাঁদের যত দেখতে পান, জেতার পরে আর তেমন নজরে পড়েন না। গত বার শতাব্দীর ক্ষেত্রে বিরোধীরাও ওই একই অভিযোগ তুলেছিলেন। তৃণমূল প্রার্থীর বিরোধিতায় ওই বক্তব্যগুলিই তাঁরা তুলে ধরে ছিলেন। জেতার পর থেকে শতাব্দী কি বিরোধীদের সেই আশঙ্কাকে ভুল প্রমাণ করতে পেরেছেন? তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ‘বহিরাগত’র তকমা ঝেড়ে ফেলে শতাব্দী এই জেলারই এক জন হয়ে উঠেছেন। সে কথা অবশ্য মানছে না কংগ্রেস। জিম্মির দাবি, “নায়ক-নায়িকাদের সিনেমা বা যাত্রাশিল্পেই মানায়। যিনি সব সময় এলাকার মানুষের পাশে থাকেন, তিনিই আসল। তাঁকেই তো মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে চান। জনবিচ্ছিন্ন, কলকাতা থেকে উড়ে আসা ফিল্মি তারকাদের সঙ্গে মানুষ থাকবেন না।”

কংগ্রেসের ওই প্রচারকে অবশ্য আমলই দিচ্ছেন না শতাব্দী। তাঁর দাবি, “ভোটে আমার বিরুদ্ধে বলার মতো কোনও কিছু খুঁজে পাচ্ছে না বিরোধীরা। তাই বোকার মতো ওই সব ঠুন্কো কথা বলছে।” বীরভূমের বিদায়ী সাংসদের প্রশ্ন, “স্থানীয় মানুষ হয়েই কি এলাকার উন্নয়ন করা যায়? দূরে থেকে কি মানুষের সেবা করা যায় না?” সাংসদ হিসেবে এলাকার উন্নয়নের যাবতীয় সব দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন বলে শতাব্দীর দাবি। তাঁর নিজের ভাষায়, “গত পাঁচ বছর নিয়মিত ভাবে বীরভূমের প্রত্যন্ত সব এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাঁদের দাবির কথা শুনেছি। সাধ্যমতো পূরণও করেছি। সেই উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের জন্যই মানুষ এ বারও আমাকে জেতাবেন।”

দুই পুরনো সঙ্গীর এমন কাজিয়ার মাঝে চুপচাপ বসে নেই সিপিএমও। দলের প্রার্থী কামরে ইলাহি এলাকারই লোক। মুরারই বিধানসভার দু’বারের বিধায়ক। তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লিখনে অবশ্য সরাসরি শতাব্দীর বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য নজরে পড়ছে না। কামরে ইলাহির বক্তব্য, “দেখুন কে কীভাবে প্রচার করবে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। আমরা বামপন্থীরা মানুষের উপর বিশ্বাস রেখে মানুষের কাছে রাজনৈতিক কথা বলেই ভোট চাইছি।” এ ক্ষেত্রে সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকার এবং রাজ্যের মমতা সরকারের নানা জনবিরোধী কার্যকলাপের কথাই তাঁরা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, তিনি বলেন, “তার মানেই এই নয় যে শতাব্দী রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কোনও অভিযোগ নেই। ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি এই জেলায় সব সময় থাকেননি। কোনও উন্নয়নও করতে পারেননি।” অন্য দিকে, কংগ্রেসের প্রতি তাঁর কটাক্ষ, “ওদের এখন এ সব বলার কোনও অধিকারই নেই। শতাব্দী তো গত বার ওদেরই জোটপ্রার্থী ছিলেন। কই, তখন তো তাঁকে কংগ্রেস বহিরাগত বলে মনে করেনি!”

শতাব্দীর মতো ততটা হেভিওয়েট না হলেও এই প্রচারে ‘বহিরাগত’র তকমা জুটেছে বিজেপি প্রার্থী অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। যা শুনে ‘হীরক জয়ন্তী’ সিনেমার নায়ক বলছেন, ‘যে দলের নেত্রী সোনিয়া গাঁধী, তাদের মুখে এ সব কথা মানায় না।” তাঁর দাবি, “প্রচারে বীরভূমের মানুষ আমাকে বুকে টেনে নিচ্ছেন। তাতে নিজেকে বাইরের কেউ বলে মনেই হচ্ছে না।” ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে বিরোধীদের এই তর্জাকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না রামপুরহাট কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক অরিন্দম সিংহ। তাঁর বিশ্লেষণ, পঞ্চায়েত বা পুর এলাকায় স্থানীয় স্তরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে মানুষ নির্দিষ্ট করে স্থানীয় কাউকেই ওই পদে দেখতে চান। তবে, লোকসভা-বিধানসভা ভোট হয় জাতীয় ও রাজ্য স্তরের ইস্যু নিয়ে। “সে ক্ষেত্রে একটা বড় অংশের মানুষই নির্বাচনে স্থানীয় না বহিরাগত কে প্রার্থী হলেন, তা নিয়ে ততটা মাথা ঘামান না। তাঁরা বরং রাজনৈতিক দলগুলির প্রতীককেই প্রাধান্য দেন,”— মত অরিন্দমবাবুর।

lok sabha election rampurhat apurba chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy