একশো দিন প্রকল্পে কাজের হিসেব চেয়ে তালা বন্ধ করে আড়াই ঘণ্টার বেশি পঞ্চায়েতের ভিতর কর্মীদের আটকে রাখল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ। নলহাটি ২ ব্লকের শীতল গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পঞ্চায়েতের মূল গেটে তালা ঝোলানোর পরে যুগ্ম বিডিও সৌমেন মণ্ডল এলাকায় পৌঁছে তালা খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। পরে যুগ্ম বিডিও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা চালিয়ে যান।
নলহাটি ২ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত তার মধ্যে একমাত্র ভদ্রপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত কংগ্রেস ও তৃণমূলের দখলে। বাকী শীতলগ্রাম অঞ্চল সহ পাঁচটি পঞ্চায়েত বামেদের দখলে। শীতল গ্রাম অঞ্চলের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য তাজুদ্দিন মণ্ডলের নেতৃত্বে লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলে যোগ দেন। এ দিন তাজুদ্দিন মণ্ডলের নেতৃত্বে পঞ্চায়েতের গেটে তালা ঝোলানো হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তাজুদ্দিন মণ্ডল বলেন, “১০০ দিন প্রকল্পে কোথায় কত দিনের কাজ চলছে, কত শ্রমিক কোথায় কাজ করছে প্রধানের কাছে জানতে চাই। তিনি হিসাব দিতে পারেননি। পরে পঞ্চায়েত সচিবের কাছে একই বিষয় জানতে চাই। তিনিও কিছু জানাতে চান নি। এর জন্য এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তালা লাগিয়ে দেন।”
পঞ্চায়েতের গেটে যখন তালা ঝোলানোর ফলে পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির একজন সদস্য, পঞ্চায়েত সচিব, পঞ্চায়েতের নির্বাহী আধিকারিক, জব অ্যাসিস্ট্যান্ট-সহ পঞ্চায়েতের সাত কর্মী নিয়ে মোট দশ জন আটকে পড়েন। প্রধান সিপিএমের নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, “পঞ্চায়েতের উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য সমস্ত সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েতে আলোচনা সভা ছিল। দুপুর দুটো পর্যন্ত সভা চলে। সভা চলাকালীন কোনও গণ্ডগোল হয়নি।” তিনি জানান, পঞ্চায়েত বন্ধ হওয়ার সময় বিকেল পাঁচটা নাগাদ তাজুদ্দিন মণ্ডল তাঁর কাছে ১০০ দিন প্রকল্পের কোথায় কী কাজ চলছে এবং সেই সমস্ত কাজের কত দিনের কত জন শ্রমিক কাজ করছে তা জানতে চায়। তাঁকে তিনি জানান, ১০০ দিনের কাজ নির্মাণ সহায়ক দেখভাল করেন। তিনি বাইরে আছেন, ফিরলে তাঁকে জানাবেন। এই শুনে তাজুদ্দিন চলে যান।
নারায়ণবাবুর দাবি, “পরে কখন উনি পঞ্চায়েত কর্মীদের তালা মারার হুমকি দিয়ে পঞ্চায়েতের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বুঝতে পারিনি।’’ প্রধান আরও জানান, পঞ্চায়েতে তালা মারা হয়েছে, পঞ্চায়েত কর্মীরাও আটক থাকার খবর বিডিও-কে জানিয়ে তাঁকেই তালা খোলার ব্যপারে যা ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন তিনি। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে সেই তালা খোলা হয়। পঞ্চায়েত সচিব অচিন্ত্য দাস বলেন, “তাজুদ্দিনবাবু আমার কাছে এসে ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ নিয়ে জানতে চান। আমি তাঁকে বলি, পঞ্চায়েতের হিসাব নিকাশ দেখি, ওই কাজ অন্য জন দেখেন। মঙ্গলবার পঞ্চায়েতে এলে জানাতে পারব। উনি তালা মারার হুমকি দিয়ে চলে যান।”
রামপুরহাট মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায় বলেন, “একজন পঞ্চায়েতের সদস্য হয়ে কেউ পঞ্চায়েতে তালা লাগাতে পারেন না। বিডিও-কে ঘটনার খোঁজ নিয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছি।”