অন্য দলের পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে প্রধান হয়েছিলেন তৃণমূলের এক সদস্য। বছর ঘুরতে অন্য দলের সদস্যদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেই প্রধানকেই সরিয়ে দিলেন তৃণমূলের সদস্যেরা। আড়শার হেঁসলা পঞ্চায়েতের ঘটনা। আড়শার বিডিও মাধব বিসাই শুক্রবার বলেন, “আগেই হেঁসলার প্রধান দীপক মাহালির বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা গৃহীত হওয়ায় তাঁকে অপসারিত করা হয়েছিল। এ দিন নতুন প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন অনিল হেমব্রম। তাঁকে সমর্থন জানিয়েছেন পঞ্চায়েতের সাত সদস্য।”
আড়শার এই পঞ্চায়েতে মোট ১২টি আসন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ৬টি আসনে জেতে। সিপিএম ৩টি, ফরওয়ার্ড ব্লক, কংগ্রেস ও নির্দলের প্রার্থী একটি করে আসনে জেতে। কিন্তু তৃণমূল সদস্য দীপকবাবু বামপন্থী, কংগ্রেস ও নির্দল সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচিত হন। সেই থেকে গোলমালের সূত্রপাত। সেই সময়ে দলবিরোধী কাজের জন্য দীপকবাবুর বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রকাশ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তা কার্যকর করে উঠতে পারেনি। ফলে দীপকবাবুকে সামনে রেখেই বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও নির্দল সদস্য এতদিন পঞ্চায়েত পরিচলনা করছিলেন।
তবে সম্প্রতি এক সিপিএম ও নির্দল সদস্যকে নিজেদের দিকে টেনে দীপকবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল তৃণমূলের পাঁচ সদস্য।.গত ২৪ নভেম্বর অনাস্থা আনার পরে ৪ ডিসেম্বর তলবি সভায় প্রধান পদ থেকে অপসারিত হন দীপকবাবু। ওই সভায় দীপকবাবু-সহ সিপিএমের দুই ও ফরওয়ার্ড ব্লক এবং কংগ্রেসের সদস্যেরা অনুপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার নতুন প্রধান নির্বাচনের দিনেও অনাস্থা আনা সাত সদস্যই উপস্থিত হয়ে অনিলবাবুকে প্রধান নির্বাচিত করেছেন। অনিল হেমব্রম বলেন, “পঞ্চায়েতে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও পদের মোহে আমাদেরই এক সদস্য দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে অন্যান্য দলের সমর্থন নিয়ে প্রধান হয়েছিলেন। দলীয় নির্দেশেই অনাস্থায় তাঁকে সরিয়ে পঞ্চায়েতের দখল নেওয়া হয়েছে।”
এ দিকে তাঁদের দলের এক সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন জানানোয় স্বভাবতই বিড়ম্বনায় পড়েছে সিপিএম। দলের আড়শা জোনাল সম্পাদক গোবিন্দ মাঝি বলেন, “তৃণমূলকে সমর্থন করার বিষয়টি কখনই কাঙ্খিত নয়। কেন আমাদের এক সদস্য এই ঘটনায় জড়াল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আড়শার তৃণমূলের অন্যতম নেতা আনন্দ মাহাতো অবশ্য সিপিএমের সমর্থন নিয়ে পঞ্চায়েতের দখল নেওয়ার প্রশ্নের কার্যত কোন সদুত্তর দেননি।
এ দিনই মানবাজার ২ ব্লকের আঁকরো-বড়কদম পঞ্চায়েতেও নতুন প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। ওই পঞ্চায়েতে এতদিন প্রধান ছিলেন রেখা মণ্ডল। তিনি তৃণমূলের মানবাজার ২ ব্লকের প্রাক্তন সভাপতি প্রভাস মণ্ডলের পুত্রবধূ। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে তাঁকে সপ্তাহ দুয়েক আগে সরায় দলেরই বাকি পঞ্চায়েত সদস্যেরা। এ দিন দলের ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্য প্রধান হিসাবে নিবাসী মণ্ডলকে নির্বাচিত করেন।
আঁকরো-বড়কদম পঞ্চায়েতে সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। তৃণমূলের ১৩ ও সিপিএমের ১ জন সদস্য। রেখাদেবী প্রধান নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তৃণমূলের সদস্যদের মধ্যে বিরোধ বাধে। প্রধানের বিরুদ্ধে তৃণমূলের বাকি সদস্যরা এককাট্টা হন। তাঁকে সরানোর দাবি ওঠে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অনিল মাহাতো বলেন, “রেখাদেবী পঞ্চায়েতে নিয়মিত আসতেন না। প্রকল্প উন্নয়নে আমাদের মতামত নিতেন না। কেবলমাত্র প্রভাসবাবুর পুত্রবধূ হওয়ায় আমাদের দাবি ব্লক ও জেলা নেতৃত্বও মানত না। তাই বাধ্য হয়ে তাঁকে সরাতে অনাস্থা নিয়ে আসা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না।”
পদ্ধতি মেনে নতুন প্রধান নির্বাচিত হলেও দলের ব্লকস্তরের নেতারা একে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না। দলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি প্রভাস মণ্ডলের দাবি, “প্রধান বদল করে ওরা দলীয় নির্দেশ অমান্য করেছেন। দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করলে সংগঠন দুর্বল হয়ে পড়ে। ওরা ঠিক কাজ করলেন না।” তাঁর সুরেই মানবাজার ২ ব্লক তৃণমূল নেতা তথা জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য শ্রীপতি মাহাতো দাবি করেছেন, “ওরা যা করলেন তা দলীয় নির্দেশের পরিপন্থী। দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
আবার জেলা নেতা নবেন্দু মাহালি প্রধান বদলের ঘটনায় পঞ্চায়েত সদস্যদের দলীয় নির্দেশ অমান্য করার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি দাবি করেন, “এখন যিনি প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন, পঞ্চায়েত গঠনের সময় তাঁরই প্রধান হওয়ার কথা ছিল। সেই সময় তিনি কী কারণে বাদ পড়েছিলেন, তা পরিষ্কার নয়। প্রধান নির্বাচন নিয়ে অশান্তি এড়ানোর জন্য জেলা থেকে আমরা প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy