দলত্যাগী বিজেপি কাউন্সিলরের সঙ্গে পূর্ণচন্দ্র বাউরি। —নিজস্ব চিত্র
পুরুলিয়া জেলায় রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রেই লোকসভা ভোটে সর্বোচ্চ ভোট টেনেছিল বিজেপি। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে সেই বিজেপিরই এক কাউন্সিলর-সহ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে নিজেদের দলে টেনে নিয়ে রঘুনাথপুরে বিজেপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করল তৃণমূল। বুধবার রঘুনাথপুর পুরসভার বিজেপির একমাত্র কাউন্সিলর শুভঙ্কর কর-সহ রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বেশকিছু নেতা যোগ দিলেন তৃণমূলে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির প্রাক্তন ব্লক সভাপতি পরমেশ্বর চক্রবর্তী, ব্লক সাধারণ সম্পাদক অতুল বাউরি-সহ দলের জেলা কমিটির দুই সদস্য। সব মিলিয়ে ১০জন পদাধিকারী বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এলেন।
তবে বিজেপির জেলা সভাপতি বিকাশ মাহাতো দাবি করেছেন, ‘‘রঘুনাথপুর ১ ব্লকের যে সব বিজেপির লোকজন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁরা বর্তমানে কেউই দলের কোনও পদে নেই। ওই দলবদলে এলাকায় বিজেপির সংগঠনের ক্ষতি হবে না।” ঘটনা হল মুখে এ কথা বললেও জেলার তিন পুরসভার মধ্যে একমাত্র রঘুনাথপুরেই বিজেপির একমাত্র কাউন্সিলর ছিল। কিন্তু তিনি নির্বাচনের মুখে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় যথেষ্ট বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে গেরুয়া শিবিরকে। শুভঙ্করবাবুর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে বিকাশবাবুর মন্তব্য, “রঘুনাথপুরে আমাদের দলীয় কাউন্সিলর দীর্ঘদিন ধরেই দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন না। তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন এমনটা আগেই শুনেছিলাম আমরা।” তাঁদের তৃণমূলে স্বাগত জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমা করতে যান রঘুনাথপুরের তৃণমূলের বিদায়ী বিধায়ক তথা প্রার্থী পূর্ণচন্দ্র বাউরি। তাঁর কটাক্ষ, ‘‘লোকসভা ভোটের পরিস্থিতি এখন নেই। ওই নেতারা তৃণমূলে চলে আসায় রঘুনাথপুর শহর-সহ রঘুনাথপুর ১ ব্লকে বিজেপি কার্যত সাইনবোর্ডে পরিণত হয়ে গেল।’’ অন্যান্য ব্লক থেকেও বিজেপির বেশ কিছু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বলে এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছেন পূর্ণচন্দ্রবাবু।
শুভঙ্করবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যে যে ভাবে বিজেপির দলীয় কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে তাতে হতাশ হয়েই এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।” বস্তুত সম্পন্ন ব্যবসায়ী শুভঙ্করবাবু বিজেপির হয়ে পুরসভার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জেতার কয়েকমাস পরেই বিভিন্ন কারণে দলের সঙ্গে সম্পর্ক কার্যত ছেদ করেছিলেন। বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে রঘুনাথপুর ১ ব্লক সহ পুরসভায় গেরুয়া শিবিরে বড়সড় ভাঙনের পিছনে কিন্তু আদতে দলের গোষ্টী বিবাদই দায়ী বলে বিজেপি সূত্রেই জানা যাচ্ছে। দলের এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার আক্ষেপ, ‘‘দিনে দিনে আমাদের দলের বিভাজন বাড়ছে। আর তার সুবিধা নিচ্ছে তৃণমূল।”
সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট হওয়ার পরে রাজ্য জুড়েই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে শাসকদলকে। ব্যতিক্রম নয় রঘুনাথপুরও। লোকসভার ভোটের নিরিখে রঘুনাথপুর বিধানসভায় বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেসের মিলিত ভোটের থেকে অল্প সংখ্যক ভোটেই এগিয়ে রয়েছে শাসকদল। জেলার রাজনীতি নিয়ে ওয়াকিবহালদের মতে, রঘুনাথপুরে তৃণমূলের ভোট কেটেই আশাতীত ফল করেছিল গেরুয়া শিবির। সেই প্রেক্ষিতেই বিজেপির ভোট নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল। বুধবার তারই সূত্রপাত হল বলে ইঙ্গিত মিলছে শাসক শিবির থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy