Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

বাবার স্মৃতিতে স্কুলে অর্থদান

বাবা ছিলেন বিষ্ণুপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নৈশ প্রহরী। যৎসামান্য আয়ে চার ছেলেকে পড়িয়েছেন। ছেলেদের পড়াশোনা চালানোর জন্য তিনি বিঁড়ি বাঁধারও কাজ করেছেন। চার ছেলে এখন প্রতিষ্ঠিত। তিনজন বিদেশে। একজন কলকাতায় থাকেন। বাবাকে সম্মান জানিয়ে তাঁর স্মৃতিতে চার ছেলে গ্রামের স্কুলের উন্নয়নের জন্য তুলে দিলেন ৮ লক্ষ টাকা। স্বভাবতই জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলে সোমবার ছিল খুশির আমেজ।

পড়ুয়াদের মাঝে সমীর বিশ্বাস। ছবি: শুভ্র মিত্র

পড়ুয়াদের মাঝে সমীর বিশ্বাস। ছবি: শুভ্র মিত্র

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৪ ০২:০৮
Share: Save:

বাবা ছিলেন বিষ্ণুপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের নৈশ প্রহরী। যৎসামান্য আয়ে চার ছেলেকে পড়িয়েছেন। ছেলেদের পড়াশোনা চালানোর জন্য তিনি বিঁড়ি বাঁধারও কাজ করেছেন। চার ছেলে এখন প্রতিষ্ঠিত। তিনজন বিদেশে। একজন কলকাতায় থাকেন। বাবাকে সম্মান জানিয়ে তাঁর স্মৃতিতে চার ছেলে গ্রামের স্কুলের উন্নয়নের জন্য তুলে দিলেন ৮ লক্ষ টাকা। স্বভাবতই জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের জয়কৃষ্ণপুর হাইস্কুলে সোমবার ছিল খুশির আমেজ।

প্রধান শিক্ষক প্রধান শিক্ষক ঘনশ্যাম রক্ষিত বলেন, “এই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সুকুমার বিশ্বাস। তাঁর চার ছেলেই এই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র। সকলেই প্রতিষ্ঠিত। আগেই বাবার স্মৃতিতে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে স্কুলের কম্পিউটার রুম বানিয়ে দিয়েছেন। এ দিন আরও ৮ লক্ষ টাকার চেক তুলে দিলেন। ওই টাকা ব্যাঙ্কে রেখে বার্ষিক সুদে গরিব, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের সুকুমারবাবুর নামে স্কলারশিপ দেওয়া হবে।”

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুকুমারবাবুর মৃত্যুর পর গ্রামে ওই পরিবারের কেউ এখন আর থাকেন না। তবে তাঁর ছেলেরা যে নিজের গ্রামকে ভোলেননি সে কথা ফের মনে করিয়ে দিলেন সমীর বিশ্বাসরা। গ্রামবাসী নারায়ণ প্রামাণিক বলেন, “স্কুলের উন্নয়নে ওঁরা নিজের ইচ্ছেই এ ভাবে এগিয়ে আসায় আমরা গর্ব বোধ করছি।” স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রি বর্ণালী গরাই, দশম শ্রেণির ছাত্র রমেশ দে ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী বৈশাখী দাসের প্রতিক্রিয়া, “এই স্কুলে অনেক গরিব, মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, যারা টাকার অভাবে ঠিক মতো এগোতে পারছে না। সুকুমারবাবুর নামাঙ্কিত স্কলারশিপ অনেকটাই সাহায্য করবে।”

এ দিন চেক প্রদানের জন্য কলকাতা থেকে গ্রামে এসেছিলেন প্রয়াত সুকুমারবাবুর মেজো ছেলে সমীরবাবু। তিনি বলেন, “আমার বড়দা কেনিয়ায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। আমার পরের দুই ভাই কাতার ও বাহারিনে সিভিলের কাজেই যুক্ত। আমি কলকাতায় একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। বাবা খুব কষ্ট করে আমাদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। এই স্কুলেই আমরা পড়েছি। ছাত্রাবস্থায় দারিদ্র কাকে বলে আমরা জানি। তাই বাবার স্মৃতিতে গরিব, মেধাবীদের জন্য একটা স্কলারশিপ চালুর উদ্দ্যেশে ৮ লক্ষ টাকার চেক এ দিন দিলাম। আমরা গ্রামে কেউই আর থাকি না। কিন্তু মনটা পড়ে থাকে গ্রামেই। এই স্কুলকে ঘিরেই কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। সেই স্কুলের জন্য কিছু করতে পারলে কার না ভাল লাগে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE