Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ব্লক কমিটির নেতৃত্ব বদলের দাবিতে বিক্ষোভ তৃণমূলে

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে লাগাতার নির্দেশ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলে কিন্তু লড়াই থামার কোনও লক্ষণ নেই। এক দিকে, দলেরই পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনল তৃণমূলের একাংশ। অন্য দিকে, ব্লক কমিটির নেতৃত্ব বদলের দাবিতে খোদ জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির কাছে বিক্ষোভ দেখালেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৪ ০০:১৮
Share: Save:

দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে লাগাতার নির্দেশ দিচ্ছেন শীর্ষ নেতৃত্ব। রঘুনাথপুর ১ ব্লক তৃণমূলে কিন্তু লড়াই থামার কোনও লক্ষণ নেই।

এক দিকে, দলেরই পরিচালিত তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা আনল তৃণমূলের একাংশ। অন্য দিকে, ব্লক কমিটির নেতৃত্ব বদলের দাবিতে খোদ জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও রঘুনাথপুরের বিধায়ক পূর্ণচন্দ্র বাউরির কাছে বিক্ষোভ দেখালেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। সোমবার বেশ কয়েকটি গাড়িতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে পুরুলিয়ায় শান্তিরামবাবুর কাছে যান ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রদীপ মাজির বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা। এ দিন সকালে পুরুলিয়ার সার্কিট হাউসে ওই কর্মীদের হাতে কার্যত ঘেরাও হয়ে পড়েন রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরামবাবু।

বস্তুত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই রঘুনাথপুর ১ ব্লকে তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্ব তুঙ্গে উঠেছে। লোকসভা ভোটে এই কারণেই ওই ব্লকে তৃণমূলের ফল যথেষ্ট খারাপ হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধে কড়া নির্দেশ দেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। এবং তারই জেরে পরপর অনাস্থা এসেছে তিনটি পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের প্রধান ও উপ-প্রধানদের অপসারণের দাবিতে ব্লকের বেড়ো, আড়রা ও চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতে অনাস্থা এনেছেন পঞ্চায়েতগুলির তৃণমূল সদস্যদেরই একাংশ। বিডিও (রঘুনাথপুর ১) সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “তিনটি পঞ্চায়েতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে এ নিয়ে সভা ডাকা হবে। সভাতে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হলে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন প্রধান নির্বাচন করা হবে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্রথম অনাস্থা এসেছে বেড়ো পঞ্চায়েতে। এখানে মোট সদস্য ১১। কিন্তু, উপপ্রধান শ্রীকান্ত মাহাতোর মৃত্যুর পরে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা দশে দাঁড়িয়েছে। যার মধ্যে তৃণমূলের ৬ এবং সিপিএমের ৪ জন। বেড়োতে সিপিএমের চার জনকে নিয়ে তৃণমূলের দুই সদস্য অনাস্থা এনেছেন প্রধানের বিরুদ্ধে। এর এক দিন পরেই অনাস্থা আনা হয় আড়রা পঞ্চায়েতে। এখানে ২০ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলেরই ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে সাত জন অনাস্থা এনেছেন দলেরই প্রধানের বিরুদ্ধে। ঘটনা হল, বেড়ো ও আড়রা পঞ্চায়েত পরিচালনা করেন ব্লক সভাপতির অনুগামীরাই।

ওই দুই পঞ্চায়েতে অনাস্থা আসার পরেই পাল্টা হিসাবে অনাস্থা এসেছে প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধ হিসাবে পরিচিত জেলা পরিষদের সদস্য হাজারি বাউরির ঘরের পঞ্চায়েত চোরপাহাড়িতে। সোমবার বিডিওর কাছে ওই প্রস্তাব জমা পড়েছে। চোরপাহাড়ি পঞ্চায়েতের ১১টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ৮টি। সিপিএমের আসন তিন। চোরপাহাড়িতেও সিপিএমের সদস্যদের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলের চার জন অনাস্থা এনেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দলীয় প্রধানদের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত পরিচালনার কাজে দুর্নীতি, স্বজনপোষনের মতো অভিযোগ এনেছেন তৃণমূলের সদস্যরা। সিপিএম সূত্রের খবর, দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে তৃণমূলের সদস্যরা অনাস্থা আনলে কৌশলগত কারণে সেই অনাস্থাতে সমর্থন জানাবেন সিপিএমের সদস্যরা। তবে প্রধান নির্বাচনে তৃণমূলের কাউকেই তাঁরা সমর্থন করবেন না বলে জানিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ রায়।

তবে এ সবকে ছাপিয়ে ব্লকের সভাপতি বদলের দাবিতে খোদ জেলা সভাপতির কাছে গিয়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের বিক্ষোভের ঘটনায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে তৃণমূলের জেলা নেতারা। রবিবারই রঘুনাথপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ও পঞ্চায়েতের কিছু সদস্যদের নিয়ে পুরুলিয়ায় শান্তিরাম মাহাতোর কাছে গিয়েছিলেন প্রদীপ মাজি। তারই পাল্টা হিসাবে প্রায় পাঁচশো কর্মীকে নিয়ে সোমবার শান্তিরামবাবুর কাছে হাজির হন বিরুদ্ধে গোষ্ঠীর নেতারা। প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলে তাঁকে ব্লকের নেতৃত্ব থেকে সরানোর দাবি জানানো হয়। জেলা পরিষদের সদস্য অনাথবন্ধু মাজি বলেন, “রঘুনাথপুর ১ ব্লক এলাকায় যে ভাবে দল পরিচালনা করা হচ্ছে, তাতে দলের নিচুতলার কর্মীরা হতাশ বলেই ব্লক নেতৃত্ব বদলের দাবি জানানো হয়েছে।” আর প্রদীপবাবুর বলেন, “আমাদের জেলা পরিষদের দুই সদস্য সিপিএমের সদস্যদের নিয়ে পঞ্চায়েতগুলিতে অনাস্থা আনছেন। যা দলবিরোধী কাজ। সব জেলা সভাপতিকে জানিয়েছি।”

শান্তিরামবাবু অবশ্য বলেন, “অনাস্থার প্রস্তাবের বিষয়ে জানা নেই। খোঁজ নেব। ব্লক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যা অভিযোগ উঠেছে, তাও খোঁজ নিয়ে দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathpur tmc group clash agitation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE