সাংসদ হয়েও কি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারেন? লিয়েনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও কি তাঁকে কাজে যোগ দিতে দেওয়া যায়? অধ্যাপনার বেতন-ভাতা কি অফিস অব প্রফিটের আওতায় পড়ে না? উত্তর খুঁজে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব ফের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরেই চাপাল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরাকে কাজে যোগ দেওয়ার জন্য চরমপত্র পাঠিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই এখন সঙ্কটে। সংসদের অধিবেশন ফেলে অনুপমবাবু দু’দিন কাটিয়ে যান শিলচরে। তখনই রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্য একগুচ্ছ প্রশ্ন রাখেন তাঁর সামনে। বিশ্বভারতীও যে এই প্রশ্নগুলিই তুলেছিল এক সময় এবং জবাব তাঁর পক্ষেই মিলেছিল, কাগজপত্র দিয়ে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন সাংসদ-অধ্যাপক।
তবু সংশয় কাটেনি সঞ্জীববাবুদের। কারণ লিয়েন সংক্রান্ত প্রশ্নটি বিশ্বভারতীর ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক ছিল না। বাকি-দুটির জবাবও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একই হবে, এমন কথারও উল্লেখ নেই কোথাও। এ ছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইন রয়েছে।
এক দিকে, আইনি জটিলতা, অন্য দিকে বিপক্ষে রয়েছেন লোকসভার সদস্য। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরামর্শ চেয়েছিল কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। তাঁরাও স্পষ্ট বা অস্পষ্ট কোনও মন্তব্যের রাস্তায় না গিয়ে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার বলে জানিয়ে দিয়েছে। সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কেই। অতঃকিম? উপাচার্য দিলীপচন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, ‘‘এককভাবে নয়, সংঘবদ্ধ আলোচনায় এর আইনি ব্যাখ্যাগুলি খতিয়ে দেখা হবে। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্ম সমিতির পরবর্তী সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
অনুপমবাবু বলেন, ‘‘আগেই জানতাম, মন্ত্রক কিছু বলবে না। কারণ তাঁদের সে ব্যাপারে কিছু বলার নেই। লোকসভার অফিস অব প্রফিট কমিটি সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পর মন্ত্রক আবার আলাদা করে কী বলবে!’’ তাঁর কথায়, এ শুধু বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রেখে অহেতুক বিলম্ব করার একটা চেষ্টা। তাতে কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি নিশ্চিত, আইন মেনেই কর্ম সমিতি তাঁর পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে। উল্লেখ করা যেতে পারে, ঠিক এক বছর আগে সংসদের ‘অফিস অব প্রফিট’ সংক্রান্ত যৌথ কমিটি এই অনুপম হাজরা প্রসঙ্গেই নির্দিষ্ট করে বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোফেসর’ কোনও ভাবেই অফিস অব প্রফিটের আওতায় পড়ে না। প্রশ্ন এখানেই, তারপরেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংসদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ কেন জানাচ্ছেন? তবে কি এর পিছনেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি কাজ করছে?
প্রসঙ্গত, অনুপম হাজরা আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের (সোশ্যালওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট) সহকারী অধ্যাপক পদে চার বছর নিযুক্ত ছিলেন। পরে বিশ্বভারতীতে একই পদে সুযোগ পেয়ে যান। তিনি তখন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের লিয়েন নিয়ে বিশ্বভারতীতে যোগ দেন। কোনও কারণে সেখানে ভাল না লাগলে বা অন্য কোনও সমস্যা হলে এক বছরের মধ্যে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবেন, এই ছিল লিয়েনের শর্ত। এরই মধ্যে তিনি গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বোলপুর আসনে জিতে যান। পরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও এক বছরের বিশেষ লিয়েন চেয়ে নেন। ও দিকে, অনুপস্থিতির দরুন বিশ্বভারতী তাঁকে চাকরি থেকে ‘বরখাস্ত’ করে। এর প্রতিলিপি পাঠায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়েও। তখনই শিলচরে অনুপম হাজরার ফাইল নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়। সাতদিনের মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চরমপত্র পাঠানো হয়েছিল সাংসদ-শিক্ষক অনুপম হাজরাকে। আবার তিনি কাজে যোগ দিতে গেলেও আটকে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিলই হয়ে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy