Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বাসস্ট্যান্ড না বাজার, প্রশ্ন ক্ষুব্ধ যাত্রীদের

ঘিঞ্জি পথ পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকলেই চমক লাগতে পারে। একি বাসস্ট্যান্ড, না বাজার! বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড দেখে এমনই বিভ্রান্তি হয় অনেক যাত্রীর। এবড়ো খেবড়ো বাসস্ট্যান্ড চত্বর। তার যত্রতত্র জুড়ে শুধুই গুমটি। কোনওটায় ফল বিক্রি হচ্ছে, কোথাও বিক্রি হচ্ছে চপ-তেলেভাজা কিংবা পান-বিড়ি-গুটখা। যাত্রীদের স্বস্তিতে বসার উপযুক্ত জায়গাও নেই।

বাসস্ট্যান্ডেই বসেছে ফলের বাজার। ছবি: শুভ্র মিত্র।

বাসস্ট্যান্ডেই বসেছে ফলের বাজার। ছবি: শুভ্র মিত্র।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৫
Share: Save:

ঘিঞ্জি পথ পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢুকলেই চমক লাগতে পারে। একি বাসস্ট্যান্ড, না বাজার!

বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ড দেখে এমনই বিভ্রান্তি হয় অনেক যাত্রীর। এবড়ো খেবড়ো বাসস্ট্যান্ড চত্বর। তার যত্রতত্র জুড়ে শুধুই গুমটি। কোনওটায় ফল বিক্রি হচ্ছে, কোথাও বিক্রি হচ্ছে চপ-তেলেভাজা কিংবা পান-বিড়ি-গুটখা। যাত্রীদের স্বস্তিতে বসার উপযুক্ত জায়গাও নেই। দু’টি যাত্রী প্রতীক্ষালয় থাকলেও যাত্রীর সংখ্যার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। আবার যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের আশপাশ গুমটিতে ঘেরা থাকায় অচেনা লোকের পক্ষে যাত্রী প্রতীক্ষালয় খুঁজতেও সমস্যা হয়। একই অবস্থা শৌচাগারের ক্ষেত্রেও। এখানে দু’টি শৌচাগার রয়েছে। কিন্তু সেগুলির আশপাশে এত গুমটি রয়েছে যে তা খুঁজতে যাত্রীদের হিমসিম অবস্থা।

আরামবাগের এক যাত্রী দীপক দাস বলেন, “অনেকক্ষণ ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বাস ঢোকেনি। প্রতীক্ষালয়ে যে বসব তারও উপায় নেই। চারপাশে নানা দোকানে সব আড়াল হয়ে আছে। প্রতীক্ষালয়ে বসলে দেখতেই পাওয়া যায় না, আমার গন্তব্যের বাসটি এল না কি বেরিয়ে গেল।” সপরিবার কলকাতা থেকে বাসস্ট্যান্ডে নেমে বাথরুমের খোঁজ করছিলেন অতনু রায়। তিনি বলেন, “অনেকক্ষণ বাস থেকে নেমেছি। শৌচাগারে যাওয়া দরকার। কিন্তু সহযাত্রীদের কেউই বলতে পারলেন না শৌচাগার কোথায়। পরে একজন দেখিয়ে দিলেন গুমটিগুলোর পিছনে শৌচাগার রয়েছে। এমন বাসস্ট্যান্ড কোথাও দেখিনি।”

এই বাসস্ট্যান্ডে এলে দেখা যায়, ব্যাগপত্তর নিয়ে রোদে-জলে সমানে প্রতীক্ষালয়ের বাইরে যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকেন। বিশেষত বয়স্ক ও শিশুদের এ জন্য কষ্ট হয়। কিন্তু প্রশাসনকে সব দেখেও যাত্রীদের স্বার্থে এই বাসস্ট্যান্ডের চেহারা পাল্টাতে দেখা যায়নি। বৃষ্টি নামলে আবার এই বাসস্ট্যান্ডে অন্য বিপত্তি হয়। খানাখন্দে ভরে গিয়েছে বাসস্ট্যান্ড চত্বর। কবে পিচ পড়েছিল স্থানীয় বাসিন্দারাও মনে করতে পারেন না। ফলে বৃষ্টি হলেই বাসস্ট্যান্ড চত্বরে জল থইথই অবস্থা। নিকাশি ব্যবস্থাও অথৈবচ। ফলে জমা জল নামে না। সেই জলকাদা মাড়িয়েই যাত্রীদের বাসে ওঠানামা করতে হয়। নোংরা জল পোশাকেও কখনও সখনও ছিটকে আসে। এ নিয়ে যাত্রীদের মাঝেমধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করতে দেখা যায়। যাত্রীদের ক্ষোভ, “বর্ষায় এই বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকাও একটা সমস্যা। বাসের চাকায় জমা জলের ছিটে লেগে জামা-কাপড়ের দফারফা। কতদিন যে বাসস্ট্যান্ডটি সংস্কার করা হয়নি কে জানে!” বাসচালকরা জানান, বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি ঢোকা ও বের করার পথে পিচ-পাথর উঠে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি হলে ছোটোখাটো ডোবার চেহারা নেয়। এক বাসচালক মজা করে বলেন, “এখানে ঢুকলে চারপাশে শুধু জল দেখে মনে হয় গাড়ি নয়, নৌকো চালাচ্ছি।”

বামফ্রন্ট সরকারের সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা থেকে বামবিরোধী বিষ্ণুপুর পুরসভা শহরের অনুন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগত। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এখন তো তৃণমূলের সরকার চলছে। তাহলেও কেন বিষ্ণুপুর এখনও অবহেলিত? বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডটি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাংসদ তহবিল থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে।” বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁর আশ্বাস, বাসস্ট্যান্ডের বেহাল দশার তথা তিনি জানেন। সাংসদের উন্নয়ন তহবিল থেকে বাসস্ট্যান্ডটির জন্য তিনি টাকা বরাদ্দ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “বাসস্ট্যান্ডের সমস্যা মেটাতে কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিষ্ণুপুরের বিডিও এই নিয়ে একটি খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করছেন। আশা করছি শীঘ্র কাজ শুরু করা যাবে।” বিষ্ণুপুরের বিডিও প্রশান্ত মাহাতো বলেন, “বাসস্ট্যান্ডে উন্নয়নের জন্য খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে। তাতে যাত্রীদের সুবিধার দিকটি বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। নিকাশি ব্যবস্থাও তৈরি করা হবে। শৌচাগার নিয়ে সমস্যাও কাটবে।”

এই আশ্বাসে অবশ্য অনেকের মন ভিজছে না। তাঁদের বক্তব্য, বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়ন নিয়ে আশ্বাসের কথা বছর-বছর শুনে আসছি। তাই এ বার না আঁচিয়ে আর বিশ্বাস করছি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE