Advertisement
E-Paper

বাড়িতে মন টেকে না, চার মাস পরে ফিরল রথু

ছেলেকে যে আবার ফিরে পাবেন এ ভরসা খুব একটা ছিল না। তাই প্রায় চার মাস পরে মানবাজার থানার পুলিশ যখন সেই ছেলেকে সামনে হাজির করল, তখন ওঁদের দু’চোখে বান ডাকল। মঙ্গলবার মানবাজার থানা চত্বরে ১২ বছরের ছেলে রথুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন মা বুলু সিং। রথুর বাবা দিনমজুর নীলকণ্ঠও তখন বিহ্বল দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বুলুদেবী বলছিলেন, “কোথায় ছিলি বাবা। আমাদের কথা কি একবারও তোর মনে পড়েনি?”

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৫
উদ্ধারের পরে রথু সিং।

উদ্ধারের পরে রথু সিং।

ছেলেকে যে আবার ফিরে পাবেন এ ভরসা খুব একটা ছিল না। তাই প্রায় চার মাস পরে মানবাজার থানার পুলিশ যখন সেই ছেলেকে সামনে হাজির করল, তখন ওঁদের দু’চোখে বান ডাকল।

মঙ্গলবার মানবাজার থানা চত্বরে ১২ বছরের ছেলে রথুকে আঁকড়ে ধরেছিলেন মা বুলু সিং। রথুর বাবা দিনমজুর নীলকণ্ঠও তখন বিহ্বল দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখছিলেন। কাঁদতে কাঁদতে বুলুদেবী বলছিলেন, “কোথায় ছিলি বাবা। আমাদের কথা কি একবারও তোর মনে পড়েনি?” রথুকে তখন চোখ বুজে মায়ের বুকে মুখ গুঁজেছিল। কে বলবে এই ছেলেই ঘরে মন টেকে না বলেই ঘর ছেড়েছিল। ছেড়ে গিয়েছিল বাড়ি, মা, বাবা ও দুই দাদা-ভাই, স্কুল, বন্ধুদের। পাড়ি দিয়েছিল অজানার খোঁজে। কারণ একটাই। রথুর কথায়, “বাড়িতে মন টিকছিল না। গ্রামে থাকতে ইচ্ছে করছিল না বলেই বাসে চড়ে বসেছিলাম।”

মানবাজার থানার ঘাসতোড়িয়া গ্রামে রথুর বাড়ি। সে স্থানীয় হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। বাবা দিন মজুর। মা পরিচারিকার কাজ করেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে রথু হল মেজো। ১১ এপ্রিল থেকে সে নিরুদ্দেশ হয়। নীলকণ্ঠ বলেন, “আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই কাজে বাড়ির বাইরে ছিলাম। বাড়ি ফিরে দেখি দুই ছেলে থাকলেও রথু নেই। কেউ কোনও হদিস দিতে পারল না। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেও ছেলে বাড়ি না ফেরায় দুশ্চিন্তা শুরু হয়। পড়শিদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েছিলেন। কোথাও সন্ধান পাইনি।” তাঁরা ভেবেছিলেন কোথাও সে পালিয়েছে। দু’দিন পরেই ফিরে আসবে। নীলকণ্ঠ জানান, আগেও একবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিল তাঁদের মেজো ছেলে। তিন-চার দিন পরে নিজেই ফিরে এসেছিল। তিনি বলেন, “এ বারও সে রকমই হবে বলে আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু ফিরে আসেনি।” ছেলের খোঁজ করতে থানা-পুলিশ পর্যন্ত তাঁরা যাননি।

কিন্তু মাস দু’য়েক পরে পুলিশই এলো তাঁদের কাছে ছেলের খবর নিয়ে। মানবাজার থানার ওসি শেখর মিত্র ওই দম্পতিকে থানায় ডেকে জানান, তাঁদের রথু মানবাজার থেকে বহু দূরে উত্তরপ্রদেশের কানপুরের একটি হোমে রয়েছে। টেলিফোনে সেখান থেকে ছেলের সঙ্গে ওসি কথাও বলিয়ে দেন। কিন্তু ছেলের হদিস পেলেও দরিদ্র এই দম্পতির ছেলের নাগাল পেতে আরও মাসখানেক লেগে গেল।

পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন, “কানপুরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি আমাদের জানায় মানবাজার থানার ঘাসতোড়িয়া গ্রামের একটি ছেলেকে উদ্ধার করে একটি হোমে রাখা হয়েছে। মানবাজার থানার ওসিকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়েছিল।” মানবাজার থানা জানিয়েছে, ওই হোমে যোগাযোগ করে রথুর সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু হোম কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, ছেলেকে ফিরে পেতে হলে বাবা মা দু’জনকেই উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করে কানপুরে যেতে হবে। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তাঁরা সেখানে যেতে পারেননি। তখন মানবাজার থানা রথুকে পুরুলিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

কানপুর বয়েজ হোমের সুপারিন্টেডেন্ট নীলম বর্মা ফোনে বলেন, “রথুকে কানপুর স্টেশন থেকে জিআরপি উদ্ধার করেছিল। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির হাত ধরে ওকে আমাদের হোমে পাঠানো হয়। পরে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আমরা ওকে পুরুলিয়ার একটি হোমে রেখে আসি। প্রশাসনিক স্তরে কথা বলে হোমে রেখে আসার সিদ্ধান্ত নিতে সময় লেগেছে।” রবিবার রথুকে আদ্রার মণিপুরের হোমে আনা হয়। এ দিন সকালে তাকে চাইল্ড লাইনের পুরুলিয়ার অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় মানবাজারে।

বাড়ি ছেড়েছিলে কেন? মায়ের গা ঘেঁষে রথু বলে, “বাইরে ঘুরতে ভাল লাগে। গ্রামে মন টিকছিল না। একদিন বাসে চড়ে পুরুলিয়া চলে যাই। সেখানে বাসস্ট্যান্ডে এক কাকুর সঙ্গে দেখা। তিনি রাঁচিতে একটা বাড়িতে কাজ করলে ভাল খাবার, মাইনে দেবেন বলেছিলেন। সেখানে কাজে ঢুকিয়ে দেন। কিন্তু সেখানে দিনরাত খেটেও পেট ভরে খেতে পেতাম না। একদিন ওদের বাড়ি থেকে পালিয়ে দিয়ে ট্রেনে চেপে বসি।” সেখান থেকে কানপুর।

কানপুরের বন্ধুদের জন্য মন খারাপ করে না? রথু বলে, “করে তো। সেখানে হোমে আমরা ৫৫ জন আবাসিক ছিলাম। পড়াশোনাও শুরু করেছিলাম। তবে হিন্দিতে সব পড়তে হত বলে ভাল লাগছিল না। বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলার পরে আর মনও টিকছিল না।”

rathu singh back home after 4 months samir dutta manbajar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy