Advertisement
০৪ মে ২০২৪

বড়দিনে ঘর ফিরে পেলেন দেবকীনন্দন

রক্তপাতের ভয় মানুষটা বরাবরই পায়। তাই আপনভোলা দেবকীনন্দন যাদবকে অস্ত্রোপচার করানোর কথা গোপন করেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু তাঁদের হাবভাব দেখেই প্রৌঢ় দেবকীনন্দন বোধহয় কী ঘটতে যাচ্ছে তা আঁচ করেছিলেন।

থানা চত্বরে স্ত্রী-র সঙ্গে। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

থানা চত্বরে স্ত্রী-র সঙ্গে। বৃহস্পতিবারের নিজস্ব চিত্র।

সমীর দত্ত
বোরো শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

রক্তপাতের ভয় মানুষটা বরাবরই পায়। তাই আপনভোলা দেবকীনন্দন যাদবকে অস্ত্রোপচার করানোর কথা গোপন করেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু তাঁদের হাবভাব দেখেই প্রৌঢ় দেবকীনন্দন বোধহয় কী ঘটতে যাচ্ছে তা আঁচ করেছিলেন। তাই বাড়ির লোকজন যখন তাঁকে বাইরে বেঞ্চে বসিয়ে ভিতরে চিকিত্‌সকের সঙ্গে অস্ত্রোপচার করা নিয়ে কথা বলছিলেন, তখনই ভেগে যান তিনি।

গত জুন মাসে ওই ঘটনার পর চারদিকে খোঁজ খোঁজ করেও বিহারের পটনা জেলার বাড় থানার চৌধুরীচক গ্রামের ৫৪ বছরের দেবকীনন্দনের হদিস পরিজনেরা পাচ্ছিলেন না। ছ’মাস পরে ঠিক বড়দিনের দিনই সেই দেবকীনন্দনকে তাঁরা ফিরে পেলেন সুদূর পুরুলিয়ার বোরো থানা চত্বরে। স্বামীকে ফিরে পেয়ে দু’চোখের জল বাঁধ ভাঙে স্ত্রী ভারী যাদবের। ধরা ধরা গলায় তিনি বলেন, “কোথায় না কোথায় স্বামীর খোঁজ করেছি। ওকে যে ফিরে পাব, ভাবিইনি।”

পরিবার সূত্রে জানা যায়, খেতিবাড়ি দেখাশোনা আর ধর্মকর্ম নিয়েই থাকতেন দেবকীনন্দন। বরাবরই তাঁর রক্ত বা কাটা ছেঁড়া নিয়ে ভয় ছিল। কিন্তু হাইড্রোসিলের সমস্যায় তিনি কষ্ট পাচ্ছিলেন। পরিবারের লোকজন তাঁকে অস্ত্রোপচারের কথা আগাম না জানিয়েই গত জুন মাসে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিত্‌সকের সঙ্গে পরিবারের লোকেদের কথাবার্তা শুনেই তিনি বুঝতে পারেন কী জন্য তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে। সুযোগ বুঝেই তিনি পালান।

বোরো থানার ওসি অভিজিত সিংহ জানান, কয়েক দিন আগে স্থানীয় আঁকরো গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা তাঁকে জানান, উটকো একটা লোক ঝোলাঝুলি নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই তেড়ে আসছে। আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন। ওসি বলেন, “পুলিশ গিয়ে ওঁকে থানায় নিয়ে আসে। কথাবার্তা অসঙ্গতিপূর্ণ মনে হলেও গোলমেলে মনে হয়নি। দু’দিন থানায় খাওয়াদাওয়া ও ঘুমানোর পরে ধীরে ধীরে তিনি নিজের পরিচয় ও বাড়ির ঠিকানা জানান। পটনার বাড় থানায় যোগাযোগ করে জানা যায়, সেখানে দেবকীনন্দনের নামে নিখোঁজের ডায়েরি হয়েছিল। ওঁর বাড়ির লোকজনদের সহজেই যোগাযোগ করা যায়।”

বৃহস্পতিবার বারবেলাতেই স্বামীকে নিতে ভারীদেবী বোরোয় আসেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর জামাই কাশীনাথ প্রসাদ যাদব, আত্মীয় জগদীশ প্রসাদ যাদব। কাশীনাথ বলেন, “শ্বশুরমশাইয়ের খোঁজে আমরা ওই এলাকায় তন্নতন্ন করে সন্ধান চালিয়েছিলাম। এমনকী দৈনিক সংবাদপত্রেও নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। সোমবার রাতে থানা থেকে খবর দেয় শ্বশুরমশাইকে পুরুলিয়ার বোরো থানার পুলিশ উদ্ধার করেছে।” জগদীশপ্রসাদ জানান, পুরুলিয়ার বদলে প্রথমে তাঁরা পূর্ণিয়ায় চলে গিয়েছিলেন। ভুল ভাঙতে তাঁরা পুরুলিয়ার ট্রেন ধরেন।

এতদিন কোথায় ছিলেন? প্রশ্ন শুনে মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে তাকান। কিন্তু মুখ খোলেননি। থানার ওসি বলেন, “পুরো ঘটনা তিনি জানাতে পারেননি। যে কোনও কারণে তিনি মানসিক আঘাত পেয়ে অনেককিছুই ভুলে গিয়েছেন। তবে স্ত্রী ও জামাইকে পেয়ে তাঁকে বেশ উত্‌ফুল্ল দেখাচ্ছিল। কেন তাঁকে এখান থেকে নিয়ে যেতে দেরি করেছে তা নিয়ে ওঁদের একটু চোটপাটও করলেন দেখলাম।” কলকাতার রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের অধ্যাপক, মনোবিদ গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওঁর সম্ভবত ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিভ্রম হয়েছে। কোনও ব্যাপারে ভয় পেয়ে তাঁর স্মৃতিভ্রম হয়ে থাকতে পারে। সারতে কিছু সময়ও লাগতে পারে। এ ধরনের রোগীকে দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সেলিং করতে হয়।”

আবার কি অস্ত্রোপচারের কথা ভাবছেন? ভারীদেবী বলেন, “উনি যখন চাইছেন না তখন এ সব কথা তুলে লাভ কী?’’ স্বামীর হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরলেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

debakinandan boro samir dutta home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE