Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভোটার তালিকায় নাম নিয়ে কাজিয়া তৃণমূল-বিজেপির

তৃণমূলের পুরপ্রধান ওয়ার্ডে থাকেন না। তাই ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি। আর তাই নিয়েই বৃহস্পতিবার জোর ধস্তাধস্তি বেধে গেল পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির সঙ্গে বিজেপির সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share: Save:

তৃণমূলের পুরপ্রধান ওয়ার্ডে থাকেন না। তাই ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি। আর তাই নিয়েই বৃহস্পতিবার জোর ধস্তাধস্তি বেধে গেল পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির সঙ্গে বিজেপির সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরির। ঘটনাস্থল রামপুরহাট ১ ব্লক চত্ত্বর। পুলিশের কাছে কেউ কারোও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করলেও এ দিন সকালে এই ঘটনার জেরে রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে আগামী পুরসভা ভোট ঘিরে বিশেষ দিক নির্দেশ এই ঘটনা।

প্রসঙ্গত, বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম এই পুরসভায় তৃণমূলের সঙ্গে মিলিঝুলি ভাবে বোর্ড চালায়। এর আগে পুরসভার বোর্ড ভাঙা-গড়ার খেলায় কখনও সিপিএমের পাশে অশ্বিনী তিওয়ারি সঙ্গে শুভাশিসবাবুকে দেখা গিয়েছে। রাজনৈতিকমহলের একাংশ বলছে, ২০১২ সালে তৃণমূলের পুরপ্রধান নির্মল বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে তত্‌কালীন নির্দল কাউন্সিলর অশ্বিনী তিওয়ারিকে পুরপ্রধান করার ক্ষেত্রে এবং তৃণমূলের উপপুরপ্রধান আব্বাস হোসেনকে সরিয়ে তৃণমূলের অনিন্দ্য সাহাকে উপ-পুরপ্রধান করার ক্ষেত্রে শুভাশিসবাবুর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তাঁদের প্রশ্ন, রাজনীতির ময়দানে এমন হরিহর আত্মার সম্পর্ক হলেও কিভাবে সেই সম্পর্কে মোড় ঘুরল? কেনই বা, অশ্বিনী তিওয়ারির নাম নিজের ওয়ার্ড থেকে বাদ দিতে চাইলেন শুভাশিষবাবুপ্রশ্ন সে নিয়েও।

দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির দখলে রয়েছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডটি। শুভাশিষবাবু এই ওয়ার্ডে দু’ বারের কাউন্সিলর। এখন শুভাশিস চৌধুরির স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরি ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শহর তৃণমূল মনে করছে, অশ্বিনী তিওয়ারি হয়তো দলের নির্দেশে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারে। সেই জন্য তার আগেই শুভাশিসবাবু ওই ওয়ার্ডের ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

শুভাশিসবাবু অবশ্য বলেন, “চলতি মাসে ভোটার তালিকা সংযোজন-বিয়োজন কাজ চলার সময় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় নাম থাকা ২০-২১ জনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন জানায় মহকুমাশাসকের কাছে। কারণ তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ওই সমস্ত বাসিন্দারা ৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকেন না। পুরপ্রধান তার মধ্যে একজন।”

তাঁর দাবি, একজন পুরপ্রধান অন্য বাসিন্দাদের শংসাপত্র সাক্ষর করার সময় সেই ওয়ার্ডে তিনি থাকেন কিনা দেখে নেন। তখন পুরপ্রধান কেন নিজে দীর্ঘদিন ধরে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বগটুই মোড়ে বাস করলেও ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভোটার তালিকায় নাম রাখবেন। তিনি মনে করিয়ে দেন , “নির্বাচন বিধি অনুযায়ী যে কোনও বাসিন্দা অন্তত ৬ মাস কোনও জায়গায় না থাকলে তার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। যদি এরপরও ভোটার তালিকায় নাম থেকে যায় তাহলে নির্বাচনের কমিশনের দ্বারস্থ হব।”

কি বলছেন পুরপ্রধান? অশ্বিনীবাবু বলেন, “৫ নম্বর ওয়ার্ডে আমার একটি বাড়ি আছে। কিন্ত আমি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভাড়া বাড়িতে থাকি। সেই মতো ভাড়া বাড়ির ভাড়াটে রসিদ-সহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। দেখা যাক আইন মাফিক যা হবে সেটা মেনে নিতে হবে।” নিজের বাড়ি থাকতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন কেন তিনি? সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি পুরপ্রধান। তাঁর দাবি, ‘‘৭ নম্বর ওয়ার্ডে আমার স্ত্রীর নামে বাড়ি।”

এ দিন রামপুরহাট ১ ব্লক চত্ত্বরে প্রথমে পুরপ্রধান তাঁকে গালিগালাজ করেন বলে শুভাশিসবাবুর অভিযোগ। তিনি জানান, মা-বাবার নাম করে গালিগালাজ দেওয়ার জন্য পুরপ্রধানের উপর চড়াও হতে তিনি বাধ্য হন। যদিও মারধরের কথা স্বীকার করতে চাননি অশ্বিনীবাবু। তিনি বলেন, “শুভাশিস চৌধুরির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। উনি আমার নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করায় দুঃখ পেয়েছি। সেই জন্য কিছু কথা ওনার উদ্দেশ্যে বলে ফেলেছিলাম। তবে মারধর বা হাতাহাতি কিছু হয়নি।”

রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও নীতিশ বালা বলেন, “অভিযোগের আইন গত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

voter list clash tmc-bjp rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE