ছয় মাওবাদী শীর্ষ নেতার ছবি দিয়ে পোস্টার প্রকাশ করছেন পুরুলিয়ার এসপি। —নিজস্ব চিত্র।
বিক্রম ওরফে অর্ণব দাম, জাগরী বাস্কে, রাজারাম সোরেনরা পুলিশের নাগালে চলে এসেছেন। কিন্তু এখনও অধরা অযোধ্যা স্কোয়াডের বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাওবাদী নেতা। তারা কোথায়? এই প্রশ্নের সঙ্গেই এ বার লোকসভা নির্বাচনের মুখে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের প্রশ্ন, নির্বাচনটা নির্বিঘ্নে যাবে তো?
ক’দিন আগেই পুরুলিয়ার সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের জেলাগুলির পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনায় বসেছিল পুরুলিয়া পুলিশ। সেখানে মাওবাদী নাশকতা এড়িয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন করার জন্য দুই রাজ্যের পুলিশের মধ্যে নিরাপত্তার রূপরেখা তৈরি হয় বলে জানা গিয়েছে। তারপরেই বুধবার অধরা ছয় শীর্ষ মাওবাদী নেতা-নেত্রীর ছবি সংবলিত পোস্টার ছাপিয়ে প্রকাশ করল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বরও দেওয়াা রয়েছে। জানানো হয়েছে, ওই ছ’জনকে ধরার ব্যাপারে পুলিশকে সাহায্য করলে পুরস্কার দেওয়া হবে। একদা মাও অধ্যুষিত এই জেলার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন গ্রামে, রাস্তার ধারে, হাটে-বাজারে, বাসস্ট্যান্ডে এই পোস্টারগুলি দ্রুত সাঁটানো হবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। রঙিন এই পোস্টারে ছয় শীর্ষ মাও নেতা-নেত্রীর ছবি দিয়ে তাঁদের খোঁজ দিতে পারলে পুরস্কৃত করা হবে বলেও পোস্টারে ঘোষণা করা হয়েছে।
এই পোস্টারে বাঁকুড়ার বারিকুল থানা এলাকার খেজুরখেন্না গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত পাল ওরফে নীতিন ওরফে প্রভাতজি ওরফে সিরাজ, বলরামপুরের কেরোয়া গ্রামের হলধর গড়াই ওরফে হলধর ওরফে গোপাল, ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার নিমডি থানা এলাকার টেংগাডি গ্রামের বীরেন ওরফে সাগর সিংহ সর্দার, পূর্ব সিংভূম জেলার পটমদা থানা এলাকার ঝুঁঝকা গ্রামের সচিন ওরফে রামপ্রসাদ মান্ডি ওরফে রাম মান্ডি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম থানার সোনাচূড়ার অনিতা ওরফে অপর্ণা এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থানা এলাকার জামিরডিহা গ্রামের মদন মাহাতোর ছবি ছাপানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মদন মাহাতো সরাসরি অযোধ্যা স্কোয়াডে কাজ করতেন না। তিনি মাওবাদীদের বেলপাহাড়ি স্কোয়াডের শীর্ষ নেতা। বাকিরা সকলেই ছিলেন অযোধ্যা স্কোয়াডে। উল্লেখ্য জেলায় যখন মাওবাদীরা সক্রিয় ছিল তখনও বছর চারেক আগে একবার একই ভাবে কয়েকজন মাওবাদী নেতা-নেত্রীর ছবি সংবলিত পোস্টার বিভিন্ন গ্রামে লাগিয়েছিল পুলিশ।
জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “মাওবাদীরা ফের তাঁদের অযোধ্যা স্কোয়াড পুনর্গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই জন্য মাওবাদীদের শীর্ষ নেতা রঞ্জিত পাল এখনও এলাকায় না ঢুকলেও অন্যরা এলাকায় ঢুকতে পারে। সে কারনেই আমরা এই পোস্টার বিভিন্ন গ্রামে লাগাচ্ছি।” আর বেলপাহাড়ির জামিরডিহা গ্রামের মদন মাহাতো সরাসরি অযোধ্যা স্কোয়াডে কাজ না করলেও বেলপাহাড়ি থেকে বান্দোয়ানে ঢুকে সংগঠন গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জেনেছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, “এ রকম খবর আমাদের কাছেও রয়েছে। তাই আমরা পোস্টারে মদন মাহাতোর ছবিও রেখেছি।”
বিক্রম গ্রেফতারের পরে সাগেন, জাগরী, ললিতা, দুযোর্ধন, লম্বোদর, করণ, রমেশ, ছোট বিজয়, ঘনশ্যাম ও হেমন্তদের মতো স্কোয়াড সদস্যেরা আত্মসমপর্ণ করলেও উপরোক্ত নেতা-নেত্রীরা এখনও পুলিশের কাছে অধরা। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরের উপরে ভিত্তি করে নানা জায়গায় অভিযান চালানো হলেও তাঁদের কোন হদিশই পায়নি পুলিশ।
এক সপ্তাহ পরেই লোকসভা নির্বাচন।
আর পুরুলিয়া ও ঝাড়খণ্ড গা ঘেঁষে রয়েছে প্রায় ৩৮০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। গোয়েন্দা সূত্রে পুলিশ জেনেছে, মাওবাদীদের রাজ্য মিলিটারি কমিশনের প্রধান রঞ্জিত পালের বর্তমান অবস্থান ঝাড়খণ্ডের সারান্ডা লাগোয়া কোনও এলাকায়। পুরুলিয়ার বা এই রাজ্যের সীমানা থেকে ওই এলাকা খুব দূরে নয়। তাই নির্বাচনের আগে ওই পোস্টার সাঁটিয়ে বাড়তি সতর্কতা নিচ্ছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিসগঢ়ে মাওবাদীরা এ বার ভোটের সময় নাশকতা চালিয়েছে। রেইকি করতে সম্প্রতি মাওবাদীরা পুরুলিয়ায় ঢুকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। এই পোস্টারের পাশাপাশি আরও কয়েকটি পোস্টার লাগাবে পুলিশ। তাতে একটিতে মাওবাদীদের কাছে পুলিশ কর্মীদের পক্ষ থেকে আবেদন রাখা হয়েছে, পুলিশ কর্মীরা সাধারণ ঘর থেকেই উঠে আসে এবং তাঁরা পেশার জন্য পুলিশের কাজ করে, তাই পুলিশ টার্গেট না করার জন্য বলা হয়েছে। কেউ ভোট না দেওয়ার আহ্বান জানালে তাতে কান না দিতেও মানুষজনকে আবেদন জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy