Advertisement
E-Paper

ভুতুড়ে দুর্গ থেকে হীরক রাজার দেশে

এ বার পুজোয় ভানগড়ের ভুতুড়ে দুর্গ দেখতে বাঁকুড়াবাসীকে আর রাজস্থানের ট্রেনের টিকিট কাটার দরকার পড়ছে না। জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পোয়াবাগানে হাজির খোদ সেই দুর্গই! রাজস্থানে ছুটে গিয়ে দুর্গের ভিতরে ভূতের দর্শন মিলবে বলে কোনও গ্যারান্টি না থাকলেও পোয়াবাগান সর্বজনীন পুজো কমিটির এই দুর্গ-মণ্ডপের ভিতরে ভূতের স্বর অবশ্যই শোনা যাবে।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৪ ০১:১৭
‘দড়ি ধরে মারো টান’। কেন্দুয়াডিহিতে।

‘দড়ি ধরে মারো টান’। কেন্দুয়াডিহিতে।

এ বার পুজোয় ভানগড়ের ভুতুড়ে দুর্গ দেখতে বাঁকুড়াবাসীকে আর রাজস্থানের ট্রেনের টিকিট কাটার দরকার পড়ছে না। জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পোয়াবাগানে হাজির খোদ সেই দুর্গই! রাজস্থানে ছুটে গিয়ে দুর্গের ভিতরে ভূতের দর্শন মিলবে বলে কোনও গ্যারান্টি না থাকলেও পোয়াবাগান সর্বজনীন পুজো কমিটির এই দুর্গ-মণ্ডপের ভিতরে ভূতের স্বর অবশ্যই শোনা যাবে।

দুর্গটি অবশ্য থার্মোকলের। শিল্পী চন্দন রায় ও প্রকাশ রায় থার্মোকলের উপরে রং দিয়ে ভানগড়ের দুর্গের আদলে গড়ে তুলেছেন পোয়াবাগান সর্বজনীনের প্যান্ডেল। ভিতরে ভৌতিক পরিবেশ তৈরি করার জন্য বেশ কিছু অন্ধকার ঘর তৈরি করা হয়েছে। ভিতরে সাদা সুতো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাকড়শার জাল, যা দেখে দর্শকদের মনে হতে পারে ঘরগুলি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। প্যান্ডেলে ঢুকলেই কানে আসবে নানা ভৌতিক আওয়াজ। ওই পরিবেশ ফুটিয়ে তুলতে বিশেষ লাইটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এই পুজো কমিটির প্রতিমার পোশাকেও রাজস্থানী সংস্কৃতি। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী এখানে ঘাগরা-চোলি পরিহিতা, অসুর ও কার্তিকের মাথায় রাজস্থানী পাগড়ি শোভা পাচ্ছে। প্রতি বছরই পোয়াবাগান পুজো কমিটি বাঁকুড়া শহরের পুজো কমিটিগুলিকে সমানে সমানে লড়াই দেয়। এ বছরও শহরের দর্শক ভুতুড়ে দুর্গ দেখতে ছুটে আসবেন বলেই উদ্যোক্তারা।

কেন্দুয়াডিহি পশ্চিমে মহামায়াকুঞ্জ সর্বজনীনের দৌলতে শহরের বুকে পুজোর চার দিনই রাজত্ব করবেন হীরকরাজ। এই পুজো কমিটির থিমই ‘হীরক রাজার দেশে’। সেই দেশে দেখা মিলবে হীরক রাজার মন্ত্রিসভার, যেখানে সুদৃশ্য গোঁফ জোড়া নিয়ে উঁচু আসনে বসে আছেন খোদ হীরকরাজা। পরনে তাঁর রাজপোশাক। তাঁকে ঘিরে বসে রাজপুরোহিত ও মন্ত্রী-সান্ত্রীরা। আর সামনে দাঁড়িয়ে ময়লা পোশাকের এক প্রজা। দেখে মনে হবে, রাজার ‘কড়া’ ধমক খাচ্ছেন তিনি। আর একটু এগিয়ে গেলেই রাজার কোষাগারের সামনে দেখা মিলবে বাঘমামার। হাতে বল্লম নিয়ে দুই রক্ষীও সেখানে মোতায়েন। এর পরই যন্তরমন্তর। সেখানে মগজ ধোলাই চলছে। দেবীর উল্টো দিকে তাকালেই চোখে পড়বে, ‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান’! সবই অবশ্য তৈরি হয়েছে মাটির মূর্তি দিয়ে। বেরিয়ে যাওয়ার পথটা আবার হীরকরাজার হিরের খনির মধ্যে দিয়ে। সেখানে শ্রমিকদের পুরোদমে কাজ করতে দেখা যাবে। ষষ্ঠীর দিন দুপুর থেকেই এই এই থিমের টানে ভিড় এই পুজো মণ্ডপে। পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বিকাশ পাইন বলেন, “সকলেই আমাদের থিমের প্রশংসা করছেন। মনে হচ্ছে পুজোর চার দিন ভিড়ের চাপে তিলধারণের জায়গা মিলবে না।” কচিকাঁচাদের মনোরঞ্জনের কথা মাথায় রেখেই বাঁকুড়ার রবীন্দ্র সরণি সর্বজনীন এবং কমরারমাঠ সর্বজনীনও থিম সাজিয়েছে। রবীন্দ্রসরণির পুজোর থিম, ‘পুতুলের দেশ’। মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন ধরনের পুতুল। কমরার মাঠের থিম এ বার মোবাইল গেম। এই পুজো কমিটির কর্তারা জানাচ্ছেন, পরিচিত মোবাইল গেমের বিভিন্ন চরিত্র মণ্ডপে তুলে ধরা হয়েছে। যাদের এতদিন মোবাইল স্ক্রিনেই দেখতে অভ্যস্ত খুদেরা, এ বার তাদের প্যান্ডেলে দেখার সুযোগ মিলবে। এই থিম বাচ্চাদের নজর কাড়বে বলে নিশ্চিত পুজো কমিটির কর্তারা। বাঁকুড়া শহরের লালাবাজার পুজো কমিটির থিম এ বার ‘গ্রামবাংলা’। এখানে পুজো দেখতে এসে লালমাটির রাস্তা ও খড়ের চালার বাড়ি দেখে অনেকেরই জেলার জঙ্গলমহলের কোনও গ্রামের কথা মনে পড়তে পারে। ঘিঞ্জি শহরের একঘেয়ে পরিবেশ থেকে মনকে একটু শান্তি দিতেই এই থিমের চিন্তাভাবনা বলে জানাচ্ছেন পুজো উদ্যোক্তারা।

পোয়াবাগানে উঠে এসেছে ভুতুড়ে দুর্গ হিসাবে পরিচিত ভানগড়।
বিষ্ণুপুরের রঘুনাথ সায়রে মশারূপী অসুর।

পিছিয়ে নেই জেলার পর্যটন শহর বিষ্ণুপুরও। সেখানে থিমের সম্ভার নিয়ে হাজির বিভিন্ন পুজো কমিটি। এখানকার রাজবাড়ির টানে ফি-বছর পুজোতেই বহু মানুষ ছুটে আসেন মল্লরাজাদের এই গড়ে। শহরের দলমাদল সর্বজনীন পুজো কমিটির এ বারের থিম রাজস্থান। পুজো মণ্ডপের চারদিকে রাজস্থানী ঘরানার ছোঁয়া। উদ্যোক্তারা জানালেন, মণ্ডপে এলেই কানে ভেসে আসবে রাজস্থানী সংগীত। মণ্ডপ সাজানো হয়েছে রাজস্থানী হস্তশিল্প দিয়ে। দুর্গার প্রতিমাতেও রাজস্থানী সংস্কৃতির ছোঁয়া। সব মিলিয়ে মনে হবে মল্লরাজাদের ঐতিহাসিক দলমাদল কামানের সামনে যেন এক টুকরো রাজস্থান উঠে এসেছে। শহরের আইশ বাজার সর্বজনীনের পুজোয় আবার লোকসংস্কৃতির ছোঁয়া। দেবী প্রতিমা গড়া হয়েছে ছৌ মুখোশের আদলে। মণ্ডপের কারুকাজও নজর কাড়বে দর্শকদের।

—নিজস্ব চিত্র

bankura rajdeep bandyopadhyay pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy