দেখি তো মানাচ্ছে কি না! বাঁকুড়ার বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মেঘ বৃষ্টির বালাই ছিল না ঠিকই, তবে প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে অবস্থা কাহিল!
তাতে অবশ্য দমে যাননি বাঁকুড়ার ক্রেতারা। রুমালে ঘাম মুছতে মুছতেই ভিড়ে ঠাসা দোকানে ঢুকে জামা-কাপড় কেনাকাটি সারলেন ক্রেতারা। সকাল থেকে সন্ধ্য— এক ছবি দেখা গেল বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, খাতড়ায়। মফস্সলের বাজারেও ভিড়ভাট্টা ছিল।
সকাল থেকেই বাঁকুড়া শহরের চকবাজারে জমাটি ভিড় চোখে পড়ে। রেডিমেড জামা কাপড়ের দোকানই হোক বা জুতো কিংবা প্রসাধনী সামগ্রীর দোকান, সর্বত্রই মেয়েদের ভিড় বেশি দেখা যায়। মিষ্টি, রোল, চাউমিন, ঠান্ডা পানীয়ের দোকানেও ক্রেতাদের প্রায় লাইন দিয়ে ঢুকতে দেখা গিয়েছে।
বহু দোকানে দেখা যায়, ভিড়ের চাপে ক্রেতারা ঢুকতে না পেরে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন। ভিতরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও কিনে বেরোনোর জন্য হাঁকপাক করছেন। ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারাও। চকবাজারের একটি কসমেটিক দোকানি গৌতম চন্দ বলেন, “মহালয়ার পর থেকে ব্যবসায় গতি এসেছে। রাত ১০টার পরেও ক্রেতাদের ভিড় থাকছে। গত বছরের তুলনায় এ বার অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে।” তৃপ্তি ঝরে পড়ে তাঁর মুখে। তিনি জানান, পুজোর জন্য যা মালপত্র তুলেছিলেন, সবই প্রায় শেষ। একই বক্তব্য এই এলাকারই অন্য একটি কসমেটিক দোকানের মালিক বুড়া দত্তেরও। তিনি বলেন, “গত বছর বৃষ্টিতে পুজো ও পুজোর বাজার দু’টোই মাটি হয়। এ বার ব্যবসায় হালে পানি পেয়েছি।”
বাঁকুড়া শহর এখন অনেকটাই নামি ব্র্যান্ডমুখী হয়েছে। মাচানতলার একটি নামিদামি ব্র্যান্ডের জুতো ব্যবসায়ী অসিতবরণ কুণ্ডু বলেন, “পুজোয় এ বার ভালই ব্যবসা হল। শহরের মানুষ ব্র্যান্ডেড জিনিসপত্রের দিকে ঝুঁকছেন। বিক্রি বাড়ছে।” বড়বাজারের জুতো ব্যবসায়ী অরূপ দত্ত বলেন, “আগে এই শহরের মানুষ দাম দেখে জিনিস কিনতেন। এখন কোম্পানির নাম দেখে কিনছেন। মানুষের পছন্দ বদলাচ্ছে। দামি ব্র্যান্ডের জুতোর বিক্রিও তাই বেড়েছে।” রেডিমেড পোশাক দোকানের মালিকরাও জানাচ্ছেন, দামি কোম্পানির জামা-কাপড়ের বিক্রি তুলনামূলক বেড়েছে।
প্রায় একমাস আগে থেকেই পুজোর কেনাকাটার ভিড় শুরু হয়েছে বাঁকুড়া শহরে। প্রতিদিন বিকেল থেকেই ট্রাফিক সামলাতে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে পুলিশকে। এক পুলিশ কর্মী বলেন, “দিন যত গড়িয়েছে, ভিড়ও ক্রমশ বেড়েছে। তবে সব ভিড়কে ছাপিয়ে গেল এ দিনের ভিড়। গরমের চোটে লোকজনকে সামলাতে হিমসিম খেতে হল।” জেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকেও বহু মানুষ সপরিবারে এ দিন বাঁকুড়া শহরে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন। রেডিমেড ব্যবসায়ী মিলন পাল, গোপাল দত্তরা জানান, তাঁরাও অনেকটাই গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল। বাঁকুড়া ১ ও বাঁকুড়া ২ ব্লক তো বটেই, এ ছাড়াও ওন্দা, ছাতনা, তালড্যাংরার মতো ব্লক থেকেও বহু মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন বাঁকুড়া শহরে। চলতি বছরে পুজোর বাজারে প্রথমদিকে গ্রামাঞ্চলের মানুষের ভিড়টা বেশ কম ছিল। বর্ষা দেরিতে আসায় চাষের কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে। তবে শেষের দিকে গ্রামের ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। তাঁরা বলেন, “শহরের বেশিরভাগ মানুষেরই পুজোর কেনাকাটার পর্ব প্রায় সারা। এ বছর গ্রামাঞ্চলের ক্রেতাদের ভিড় জমতে বেশ দেরি হল। মনে হচ্ছে আগামী ক’দিনও গ্রামাঞ্চলের মানুষেরই ভিড় থাকবে বাজারে।”
জেলার আর এক মহকুমা শহর বিষ্ণুপুরের বাজারও এ দিন সকাল থেকে জমে উঠতে দেখা গিয়েছে। শহরের চকবাজার এলাকার দোকানগুলিতে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। চকবাজারের একটি রেস্তোঁরার অন্যতম মালিক আকাশ নন্দী বলেন, “দিনের দিকে ঠান্ডা লস্যির বিক্রি বেড়েছে। সন্ধ্যায় দেদার বিকোচ্ছে ভেটকি মাছের ফিসফ্রাই, কাটলেট। কেনাকাটা করতে এসে রেস্তোঁরায় ভিড় জমাচ্ছেন অনেকেই। পুজোর বাজারকে কেন্দ্র করে আমাদেরও ব্যবসা বেশ ভালই হল এ বার।” শহরের বাহাদুরগঞ্জ এলাকার রেডিমেড ব্যবসায়ী কিশোর সূত্রধর জানান, এই শহরে পুজোর বাজার জমতে একটু দেরি হয়েছে এ বার। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজার বেশ জমাটি রয়েছে। খাতড়া মহকুমার বাজারের চিত্রটাও এ দিন ছিল জমাটি। দক্ষিণ বাঁকুড়ার এই মহকুমা শহরের বাজারে এ দিন ভিড় জমাতে দেখা গেল সিমলাপাল, রাইপুর ব্লকের বহু মানুষকে। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, সপ্তমীর দিন পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy