Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাওবাদীদের রুখতে ফের কমিটির মিছিল

দু’বছর পরে ফের মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বিরাট মিছিল করতে হল ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি’-কে। এক সময় মাওবাদী উপদ্রুত বলে পরিচিত বলরামপুরের বির্স্তীণ এলাকায় বৃহস্পতিবার তৃণমূল প্রভাবিত ওই কমিটি মোটরবাইক নিয়ে বিরাট মিছিল বের করে। মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহের মধ্যে এই মিছিল আদতে মাওবাদীদের শক্তিপ্রদর্শন বলেই মত বাসিন্দাদের।

প্রশান্ত পাল
বলরামপুর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১৭
Share: Save:

দু’বছর পরে ফের মাওবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে বিরাট মিছিল করতে হল ‘জঙ্গলমহল উন্নয়ন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি’-কে। এক সময় মাওবাদী উপদ্রুত বলে পরিচিত বলরামপুরের বির্স্তীণ এলাকায় বৃহস্পতিবার তৃণমূল প্রভাবিত ওই কমিটি মোটরবাইক নিয়ে বিরাট মিছিল বের করে। মাওবাদীদের শহিদ সপ্তাহের মধ্যে এই মিছিল আদতে মাওবাদীদের শক্তিপ্রদর্শন বলেই মত বাসিন্দাদের।

১০ বছর আগে এই সেপ্টেম্বর মাসেই জনযুদ্ধ ও এমসিসি— এই দুই সংগঠন মিশে গড়ে উঠেছিল সিপিআই (মাওবাদী)। সম্প্রতি বলরামপুরের বড়উরমায় তৃণমূল কাযার্লয়ের অদূরে এবং আড়শার দু-একটি গ্রামে মাওবাদীদের নামাঙ্কিত কিছু পোস্টার ও ব্যানার পড়ে। তাতে অপারেশন গ্রিনহান্ট ধ্বংস করা ও সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। তার উপরে মাওবাদীদের গতিবিধিও ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এই জেলায় বেড়েছে বলে দলের নীচুতলার কর্মীদের কাছে খবর আসছে। এর প্রেক্ষিতেই ওই কমিটির বকলমে তৃণমূলের প্রতিরোধের ডাক।

কমিটির ব্যানার ও তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে ওই মিছিলে প্রায় ৫০০টি মোটরবাইক ছিল। বড়উরমায় যে তৃণমূলের অফিসের কাছে পোস্টার পড়েছিল, সেখানেই মিছিলের সূচনা করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। মিছিলে ছিলেন তাঁর ছেলে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ মাহাতো, প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অঘোর হেমব্রম, সম্পাদক সন্তোষ মাহাতো, রাজেন সিং সর্দার প্রমুখ। মিছিলে দেখা যায়, একদা আদিবাসী মূলবাসী জনগণের কমিটির সঙ্গে থাকা লোকজনকেও। কমিটির পক্ষ থেকে ‘আবেদন’ শীর্ষক প্রচারপত্রে ‘মাওবাদী নামধারী শান্তি বিনষ্টকারীদের’ বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। মিছিল দু’টি বলরামপুরের ঘাটবেড়া, গেঁড়ুয়া ও আড়শার বলরামপুর লাগোয়া চাটুহাঁসা গ্রাম পঞ্চায়েতের জঙ্গলঘেরা একাধিক গ্রাম দাপিয়ে বেড়ায়। দু’টি মিছিল শেষ হয় ঘাটবেড়া-কেরোয়া অঞ্চলের মিরমিতে।

অযোধ্যা পাহাড়ের পাদদেশে একদা মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল ঘাটবেড়া-কেরোয়া ও গেঁড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি জঙ্গলপথে মিছিলে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে— ‘মাওবাদীদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে একসাথে’, ‘মাওবাদীরা হুঁশিয়ার’, ‘লিঙ্কম্যানেরা হুঁশিয়ার’। মিছিল থেকে মাইকে পুরনো দিনের ঘটনার উদাহরন তুলে ধরে এলাকায় সেই আগের পরিবেশ না ফেরে সে জন্য মানুষজনকে অনুরোধও জানানো হয়। তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রচারপত্র। মিছিলের শেষে বেশ খানিকটা তফাতে অবশ্য ছিল পুলিশি প্রহরা। গ্রামের মেঠো পথ ধরে ধুলো উড়িয়ে শতাধিক বাইকের মিছিল যে সমস্ত গ্রাম

প্রচারপত্রে অতীত দিনের অতঙ্কের পরিবেশের কথা উল্লেখ করে রাজ্যে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক যুবক-যুবতি মূলস্রোতে ফিরে এসে বহিরাগত কুমন্ত্রণাদাতাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সৃষ্টিধর মাহাতো বলেন, “কিছু লোক জঙ্গলমহলের শান্তির পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছে। রাতের অন্ধকারে পোস্টার দিচ্ছে। রাজ্যে পরিবর্তনের পরে এই এলাকায় শান্তি ফিরেছে। তাছাড়া এই এলাকার মানুষ দেখেছেন কেমন ছিল এই বলরামপুরের পরিবেশ। দিনের পর দিন খুন, বন্ধ মানুষের জীবনযাত্রাই অচল হয়ে গিয়েছিল। মানুষই শান্তি ফিরিয়েছেন।”

বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বলেন, “বলরামপুরের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষজনই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। কারণ সবাই শান্তি চান।” এই কমিটির সভাপতি অঘোর হেমব্রম বলেন, “২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কমিটি গড়ে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হয়েছিলাম। এ বারও সে ভাবেই আন্দোলনে নেমেছি। আমরা লিঙ্কম্যানদের সতর্ক করছি তাঁরা যেন শান্তি বিনষ্টকারী কোনও মানুষকে স্থান না দেন।”

কমিটির সম্পাদক সন্তোষ মাহাতো বলেন, “কিছু মানুষ জঙ্গলমহলের শান্তি নষ্ট করার চক্রান্ত শুরু করেছে। আমরা এ দিন মিছিল থেকে তাঁদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়েছি যে এলাকায় যে শান্তির পরিবেশ রয়েছে তা নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি মানুষজনকেও অনুরোধ জানিয়েছি তাঁরা এই শান্তির পরিবেশ বজায় রাখুন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

prashanta pal balarampur maoist committee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE