Advertisement
E-Paper

মোটের ওপর শান্তিতেই ভোট মিটল বীরভূম কেন্দ্রে

ছোটখাটো অশান্তি বা শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ বাদ দিলে বুধবার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটল। গত পঞ্চায়েত ভোটেও শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটানো এবং সন্ত্রাস চলিয়ে ক্ষমতা দখল করার যে অভিযোগ তুলেছিলেন জেলা বাম নেতৃত্ব এ বারের লোকসভা ভোটের ছবি যে তার চেয়ে বেশ খানিকটা অন্য রকম সেটা প্রাকাশ্য বা আড়ালে স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার বাম নেতারা। শুধু বামেরা নন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই কেন্দ্রে ভোট যে শান্তি পূর্ণ হয়েছে সেটা মেনে নিয়েছেন জেলা বিজেপি ও কংগ্রেস নেতৃত্বও। দিনের শেষে বীরভূম কেন্দ্রে ৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় ও দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৪ ০২:৩৪
সদাইপুরের গ্রামে হাত সিপিএম সমর্থক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

সদাইপুরের গ্রামে হাত সিপিএম সমর্থক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছোটখাটো অশান্তি বা শাসকদলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ বাদ দিলে বুধবার বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবেই মিটল। গত পঞ্চায়েত ভোটেও শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটানো এবং সন্ত্রাস চলিয়ে ক্ষমতা দখল করার যে অভিযোগ তুলেছিলেন জেলা বাম নেতৃত্ব এ বারের লোকসভা ভোটের ছবি যে তার চেয়ে বেশ খানিকটা অন্য রকম সেটা প্রাকাশ্য বা আড়ালে স্বীকার করে নিয়েছেন জেলার বাম নেতারা। শুধু বামেরা নন, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এই কেন্দ্রে ভোট যে শান্তি পূর্ণ হয়েছে সেটা মেনে নিয়েছেন জেলা বিজেপি ও কংগ্রেস নেতৃত্বও। দিনের শেষে বীরভূম কেন্দ্রে ৮৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা।

তবে অভিযোগ কি নেই? আছে। ভোট দিতে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে আসার পথে সদাইপুর থানা এলাকার পিরিজপুর গ্রামের এক সিপিএম সমর্থকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। ঘটনায় জখম মুজিবুর মোল্লা নামে ওই সিপিএম সমর্থক বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূল এই ঘটনার দায় অবশ্য স্বীকার করেনি। এ ছাড়া বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের বেশ কিছু বুথে বিরোধী দলের নির্বাচনী এজেন্টেদের ঢুকতে না দেওয়া, বুথ জ্যাম করা ও ছাপ্পা ভোট দেওয়া-সহ বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের অভিযোগ, মাড়গ্রাম থানার তপন গ্রামের দু’টি বুথে বিরোধী কোনও নির্বাচনী এজেন্টকে ঢুকতে না দিয়ে ছাপ্পাভোট চালিয়েছে শাসকদলের লোকেরা। সেই সময় তৃণমূলের এজেন্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা হাফিজ খান। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই দু’টি কেন্দ্রে পরে এজেন্ট দিতে পারলেও ফের দু’টি বুথে পুনরায় ভোট করার দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মি। মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটা পঞ্চায়েতের হুচুকপাড়া ও পলাশবুনিতে সকালের দিকে তৃণমূলের সঙ্গে সিপিএমের লোকেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। মহম্মদবাজারের সুদাকৃষ্ণ হাইস্কুল ও জেবি স্কুলের বুথে তৃণমূল সমর্থকেরা ভিড় জমালে উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়। তবে সাঁইথিয়ার কোথাও তেমন গণ্ডগোলের খবর নেই।

এ দিকে, জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে সুষ্ঠু ভাবে ব্যবহার না করার অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় ও বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। উভয়েই বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনীকে আরও সুষ্ঠু ভাবে ব্যবহার করা যেত। অনেক স্পর্শকাতর বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। জেলা পুলিশের সসস্ত্র বাহিনী তেমন নজরদারি না চালানোয় সুযোগের ব্যবহার করতে পেরেছে শাসকদল।” দুধকুমার মণ্ডলের দাবি, “যেখানে যেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না এমন অন্তত ১০-১২টি বুথ থেকে বা বুথে ঢোকার আগেই আমাদের এজেন্টদের ভয় দেখিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। মাইক্রো অবজার্ভার, ভিডিও ক্যামেরাও নজরে পড়েনি। সিউড়ি ২ ব্লকের কোমা, অবিনাশপুর, বনশঙ্কা অঞ্চলের বিভিন্ন বুথে আমাদের দলের নির্বচনী এজেন্টদের ঢুকতে না দেওয়া ও বুথ জ্যাম করে তৃণমূলের লোকেরা।” জেলা সম্পাদকের আরও দাবি, খয়রাশোল, দুবরাজপুর-সহ বেশ কয়েকটি বুথেও নির্বাচনী এজেন্ট দিতে দেয়নি শাসকদলের লোকেরা। অভিযোগ মানেননি জেলা পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান। তিনি বলেন, “যে রাজনৈতিক দল তাঁদের এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন সব ক্ষেত্রে তা তদন্ত করে দেখা হয়েছে। এমনও বলা হয়েছে, আপনাদের এজেন্ট পাঠান পুলিশ গিয়ে বুথে পৌঁছে দেবে।” পুলিশ সুপার আরও জানান, সাদাইপুরের ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন সন্দেহে আরও আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, সিপিএমের জেলা সম্পাদক বা বিরোধী দলগুলি যাই অভিযোগ করুন না কেন, কোনও বুথ থেকে মারধর করে এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে এমন সুনর্দিষ্ট অভিযোগ প্রশাসনের কাছে জামা পড়েনি এবং অভিয়োগ নিয়ে খুব একটা সোচ্চার নয় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও। এমন কী দুবরাজপুরের পদুমা ও যশপুর পঞ্চায়েত এলাকায় গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে প্রার্থী দাঁড় করাতে পারেনি সেই দু’টি পঞ্চায়েতের মোট ৪০টি বুথের ৩৪টিতেই নির্বাচনী এজেন্ট দিতে পেরেছি ও ভোট মোটের উপর ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র। খয়রাশোলের ক্ষেত্রে একই দাবি জোনাল সম্পাদক তপন দাশগুপ্তেরও। একই সুর প্রার্থীদের গলায়ও। এই কেন্দ্রের বাম প্রার্থী কামরে ইলাহি বলেছেন, “সিউড়ি ২ ব্লকের কিছু জায়গায় সন্ত্রাসের অভিযোগ বিক্ষিত ভাবে আগেও ছিল। এ দিনও উঠেছে। তবে সব অভিযোগের বাস্তবতা আমি পাইনি।” অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী জয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেস প্রার্থী সৈয়দ সিরাজ জিম্মিরা বলছেন, “নির্বাচন কমিশনের আরও একটু সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তবে মোটের উপর ভোট শান্তিপূর্ণ। মানুষ তাঁদের মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছেন।”

সহ প্রতিবেদন: ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

ভোট দিলেন না হৃদয়ের পরিবার

সুবিচার না মেলা পর্যন্ত ভোটই দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাড়ুইয়ের বাঁধনবগ্রামের বাসিন্দা নিহত সাগরচন্দ্র ঘোষের পরিবার। শ্বশুরবাড়ি-সহ হৃদয় ঘোষের পরিবারের ৮ সদস্য বুধবার ভোট না দিলেও বাঁধনবগ্রাম, কসবা ও সাত্তোর এলাকার বাসিন্দারা ভোট দিয়েছেন। হৃদয়বাবু বলেন, “আমরা সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত ভোট দেব না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগের দিন খুন হন সাগরবাবু। অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে।

apurba chattopadhyay dayal sengupta birbhum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy