Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
অভিনব দাওয়াই ওন্দা পুলিশের

মাথায় হেলমেট নেই, পরিত্রাণ মিলল বাড়িতে ক্ষমা চেয়ে

হেলমেট কোথায়? ওন্দা বাসস্টপে পুলিশের এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ছেলেটি। এই রে! এ বার মোটা টাকার জরিমান দিতে হবে বুঝি? ছেলেটি যখন এমন ভাবছিল, তখন ওন্দা থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় তাকে বাড়িতে ফোন করে মায়ের কাছে হেলমেট না পরার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। দ্বিতীয়বার যাতে সে আর এমনটা না করে সে জন্য মায়ের কাছে শপথ পর্যন্ত করিয়ে নিলেন।

এ বার থেকে হেলমেট পরে বেরোব, বাড়িতে ফোন করে এই শপথ নেওয়াচ্ছেন পুলিশ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

এ বার থেকে হেলমেট পরে বেরোব, বাড়িতে ফোন করে এই শপথ নেওয়াচ্ছেন পুলিশ। ছবি: অভিজিৎ সিংহ।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
ওন্দা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২১
Share: Save:

হেলমেট কোথায়?

ওন্দা বাসস্টপে পুলিশের এই প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় ছেলেটি। এই রে! এ বার মোটা টাকার জরিমান দিতে হবে বুঝি? ছেলেটি যখন এমন ভাবছিল, তখন ওন্দা থানার ওসি মানস চট্টোপাধ্যায় তাকে বাড়িতে ফোন করে মায়ের কাছে হেলমেট না পরার জন্য ক্ষমা চাইতে বলেন। দ্বিতীয়বার যাতে সে আর এমনটা না করে সে জন্য মায়ের কাছে শপথ পর্যন্ত করিয়ে নিলেন।

রবিবার সকাল থেকে পথসচেতন করতে বেড়িয়ে ওন্দা থানার পুলিশের এই অভিনব কৌশল দেখতে লোক জড়ো হয়ে যায়। যেমন নবজীবনপুরের বাসিন্দা এক কলেজ পড়ুয়া আত্মীয়কে বাসে তুলতে মোটরবাইক নিয়ে ওন্দা বাসস্টপে এসেছিলেন। হেলমেটহীন অবস্থায় তাঁকে দেখেই মানসবাবু এগিয়ে গেলেন। হেলমেট না পরার জন্য পুলিশ ধরেছে দেখে তাঁর মুখ শুকিয়ে যায়। কাঁচুমাচু মুখে তিনি বলেন, ‘‘স্যার, ভুল হয়েছে। ছেড়ে দিন।’’ মানসবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “আমার কাছে নয়, মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রতিজ্ঞা করো এ বার থেকে ট্রাফিক আইন মেনে চলবে। তাহলেই ছাড় মিলবে।” কাঁপাকাঁপা হাতে মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করেন ওই যুবক। ছেলের মুখে ট্রাফিক আইন মেনে চলার প্রতিজ্ঞা শুনে ফোনের ওপার থেকে শোনা যায় মায়ের গলা, “তোকে কতবার বলেছি বাবা। তুই তো কথাই শুনিস না। এ বার থেকে আমাদের কথা শুনবি।” ঘাড় নাড়ে ছেলে।

একই ভাবে পুলিশের খপ্পরে পড়ে ওন্দার সিনেমারোডের এক যুবক। তাঁর মা ফোন না ধরলেও কাকিমার কাছে ‘এ বার থেকে হেলমেট পরা’র দিব্যি করে ছাড় পান তিনি। স্কিন টাইট টি-শার্ট পরে, একমাথা চুল হাওয়ায় উড়িয়ে মোটরবাইক হাঁকিয়া ওন্দাবাজারে এসে থামতে না থামতেই পুলিশের হাতে পড়েন খামারবেড়িয়ার আর এক তরুণ। কাকুতি মিনতি করেও ছাড় না মেলায় কাঁপা গলায় পুলিশ কর্মীদের তিনি বলেন, “মাকে না করে, বাবাকে ফোন করলে হবে স্যার? অনুমতি মিলতেই বাবাকে ফোন করে এক নিশ্বাসে তিনি বলে গেলেন, “বাবা, প্রতিজ্ঞা করছি এ বার থেকে হেলমেট ছাড়া আমি আর মোটরবাইক চালাব না।” ওপার থেকে শোনা গেল বাবার বিস্ময় “তুই হঠাৎ এত ভালো ছেলে হয়ে গেলি কী করে?” বাড়িতে গিয়ে সব জানাবেন বলে ফোন কেটে রেহাই পেলেন ওই তরুণ।

শুধু উঠতি যুবকরাই নয়, মোটরবাইকের সামনে হেলমেট ছাড়াই তিন বছরের ছেলেকে চাপিয়ে বাজারে এসে পুলিশের হাতে পড়েন ওন্দার বোসপাড়ার এক বাসিন্দাও। স্ত্রীকে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে ট্রাফিক আইন মানার প্রতিজ্ঞা করার পরেই তিনি ছাড়া পান। এ কথাও জানান, শীঘ্রই তিনি ছেলের জন্যেও একটা হেলমেট কিনবেন। এই ঘটনা দেখে অনেকেই মোটরবাইক ঘুরিয়ে উল্টো মুখো হয়েছেন।

শুধু মোটরবাইকই নয়, সিট বেল্ট না বাঁধে গাড়ি চালাতে দেখে চালকদের আটকেও একই ‘শাস্তি’ দিয়েছে পুলিশ। চন্দ্রকোনা থেকে গাড়ি নিয়ে বাঁকুড়া যাচ্ছিলেন এত ব্যক্তি। পুলিশের হাতে পড়ে তিনি স্ত্রীকে ফোনে না পেয়ে ভাইকে ফোন করেন। তিনি বলেন, “ভাই, আমাকে পুলিশ ধরেছে। চিন্তা করিস না। নিয়ম হচ্ছে পথ নিরাপত্তার নিয়ম না মানলে বাড়ির লোকের কাছে ক্ষমা চাইলেই ছেড়ে দেবে। আমি তোর কাছে ক্ষমা চাইছি। প্রতিজ্ঞা করছি সিট বেল্ট এঁটে এ বার থেকে গাড়ি চালাবো।” ভাইয়ের গলা শোনা গেল “এতো খুব ভালো পুলিশ! এ বারের মতো ফোন করে ছাড়া পেয়ে গেছিস। তবে আর ভুল করিস না।”

এতদিন সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক আইন সচেতন করতে পুলিশ কর্মীদের কখনও ফুল, কখনও চকোলেট বিলি করতে দেখা গিয়েছে। তাতে যে বিশেষ কাজ হয়েছে তা নয়। পরের দিন যথারীতি তাঁদের হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইক নিয়ে এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছে। তবে এ বার ওন্দা থানা পুলিশের এই অভিনব শাস্তিতে লোকজনকে নাস্তানাবুদ হতে দেখে পথচলতিরা হাসিতে ফেটে পড়েছেন। অনেকেই এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন।

বাড়ির লোকের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ায় কিছু মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন হবে বলে আশাবাদী পুলিশ কর্মীরা। ওন্দার ওসি বলেন, “মানুষ সচেতন হোক এটাই আমরা চাই। তাই বাড়ির লোকের কাছেই শপথ করালাম।” ওন্দা পুলিশের এই অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বাঁকুড়ার ডিএসপি (শৃঙ্খলা ও প্রশিক্ষণ) বাপ্পাদিত্য ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

onda police rajdip bandopadhayay helmet
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE