মুরগি কিনে ফেরার পথে অন্ধকার রাস্তায় হঠাৎ গাছ বা বোল্ডার পড়ে থাকাতে দেখে গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হচ্ছেন চালক। কখনও বা অন্য গড়িকে আড়াআড়ি ভাবে রস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। যখনই গড়ির গতি কমছে তখনই অন্ধকার থেকে অস্ত্র হাতে মুখ ঢাকা কয়কজন দুষ্কৃতী বেরিয়ে এসে চালক ও খালাসিদের মারধর করে টাকা-পয়সা, মোবাইল নিয়ে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তারপর গাড়ি থেকে সকলকে নামিয়ে বেশ কিছুটা দূরে ফাঁকা মাঠ বা পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে গামছা বা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে গাড়িভর্তি মুরগি নিয়ে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের কয়কজন। জনা কয়েক দুষ্কৃতী পাহারায় থাকছে চালক ও খলাসিদের। ঘণ্টা কয়েক এ ভাবে কাটানোর পরে খালিগাড়ি ফেরত দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
গত কয়েক মাস থেকে একের পর এক মুরগি ভর্তি গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে রাজনগর, দুবরাজপুর, খয়রাশোল থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। প্রায় প্রতিটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছে। কিন্তু কোনও ঘটনারই কিনারা হয়নি। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। তবে এবারের ঘটনাস্থল সদাইপুর থানা এলাকার বাবুইবোনা জঙ্গল এলাকায় একটি বেসরকারি খামারের মুরগি চুরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে সদাইপুরের হাজরাপুর এলাকার একটি খামার থেকে লরিতে করে ১৪২৪টি মুরগি (বাজার দর প্রায় দু লক্ষ টাকা) ওই খামারের ইলামবাজার ‘মিট প্রসেসিং ফার্মে’ নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাত দেড়টা নাগাদ একই পদ্ধতিতে ছিনতাই হয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এক্ষেত্রে খালি গাড়িটিকে এখনও ফেরত দেয়নি দুষ্কৃতীরা।
এ দিকে, একের পর এক এমন ঘটনায় আতঙ্কে বেসরকারি মুরগি খামার কর্তৃপক্ষ, এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার ‘মার্কেটিং ম্যানেজার’ থেকে ছোটখাটো মুরগি খামারের মালিকেরা। তাঁদের প্রশ্ন, এ ভাবে চললে ব্যবসা করব কী ভাবে? গত ৯ জুন খয়রাশোলের একটি খামার থেকে একটি পিকআপ ভ্যানে করে ১১ কুইন্টাল (৬১২টি মুরগি) নিয়ে ফিরছিলেন বর্ধমানের উখড়ার বাসিন্দা রাধেশ্যাম দাস। খামারের অদূরে রাস্তা আটকে গড়ি ছিনতাইয়ের ঘণ্টা তিনেক পর খয়রাশোল থানার কছে খালি গাড়ি ফেরত পেয়েছেন তিনি। গত ২৯ মে রাতে রাজনগরের ভবানীপুরের একটি খামার থেকে মুরগি আনার পথে একই অভিজ্ঞতা হয় অভিজিৎ গড়াইয়ের। প্রায় ৮৬ হাজার টাকার মুরগি দুষ্কৃতীরা নিয়ে পালিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। ঘটনাস্থল দুবরাজপুর- বক্রেশ্বর রাস্তায় গুন্ডোবা কালভার্ট। কিছুদিন আগে ওই একই রাস্থায় মেটেলার কাছে বর্ধমানের অন্ডালের বাসিন্দা বিশ্বনাথ দাসের মুরগি বোঝাই গড়িটিকে হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তিনিও দাবি করেছেন। বেসরকারি হিসেবে, গত কয়েক মাসে অন্তত ১৫টি গাড়িতে ছিনতাই হয়েছে।
অভিজিৎ গড়াই, রাধেশ্যাম দাস বা বিশ্বনাথ দাসেরা বলছেন, “পুলিশে অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।” একটি বেসরকারি মুরগি খামারের ম্যানেজার পঙ্কজ ভট্টাচার্য, ও অপর একটি বেসরকারি মুরগি খামারের মার্কেটিং ম্যানেজার রূপম সীট বলেন, “পুলিশ তৎপর না হলে এই ব্যবসা ভীষণ সঙ্কটে পড়বে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও ঘটনার কিনারা না হওয়ায় সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।” বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজেরিয়া অবশ্য বলছেন, “সব ঘটনার তদন্ত অনেকটাই গিয়েছে। দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy