Advertisement
০৪ মে ২০২৪
রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদে সিলমোহর

মঞ্চ থেকেই দিলেন পাঁচ কোটির বরাদ্দ

প্রস্তাবটা দীর্ঘ দিনের। মঙ্গলবার রামপুরহাটে প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চ থেকেই তাতে সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু ঘোষণাই নয়, নতুন বহু প্রতীক্ষিত ‘রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদ’-এর জন্য শুরুতেই ৫ কোটি টাকা অনুদানের আশ্বাসও দিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় মহকুমার (বিশেষ করে তারাপীঠ এলাকার) একটা বড় অংশের এলাকা দূষণ এবং অনুন্নয়ন থেকে এ বার মুক্তি পাবে বলে আশা করছেন বাসিন্দারা।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

প্রস্তাবটা দীর্ঘ দিনের। মঙ্গলবার রামপুরহাটে প্রশাসনিক জনসভার মঞ্চ থেকেই তাতে সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু ঘোষণাই নয়, নতুন বহু প্রতীক্ষিত ‘রামপুরহাট-তারাপীঠ উন্নয়ন পর্ষদ’-এর জন্য শুরুতেই ৫ কোটি টাকা অনুদানের আশ্বাসও দিলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর ওই ঘোষণায় মহকুমার (বিশেষ করে তারাপীঠ এলাকার) একটা বড় অংশের এলাকা দূষণ এবং অনুন্নয়ন থেকে এ বার মুক্তি পাবে বলে আশা করছেন বাসিন্দারা। তবে, পর্ষদ নিয়ে যে আশঙ্কাও নেই, তা নয়। জেলায় আরও একটি উন্নয়ন পর্ষদ রয়েছে (শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ)। কিন্তু, দীর্ঘ দিন পরেও ওই পর্ষদ এলাকাবাসীর অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ মেটাতে পারেনি বলেই অভিযোগ। সেখানে আরও একটি উন্নয়ন পর্ষদ অনুন্নয়নের ওই চিত্রটা কতটা বদলাবে, তা নিয়েই বাসিন্দাদের একাংশের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় খবর, তারাপীঠকে কেন্দ্র করে রামপুরহাট মহকুমার একটা বড় অংশকে নিয়ে এমন একটি পর্ষদ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দীর্ঘ দিনের। বাম আমলে এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু হলেও তা বাস্তব রূপ পায়নি। জাতীয় পরিবেশ আদালতে তারাপীঠ এলাকার দূষণ নিয়ন্ত্রণের নির্দেশকে ঘিরে এ নিয়ে নতুন করে তত্‌পরতী শুরু হয় জেলা প্রশাসনের। গত বৃহস্পতিবার তারাপীঠে জেলা পরিষদের অতিথিশালায় এ ব্যাপারে একটি বৈঠক হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ), ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিক, রামপুরহাটের মহকুমাশাসক, স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক অসিত মাল, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, জেলাপরিষদের নির্বাহী বাস্তুকার-সহ স্থানীয় প্রশাসন, পুরসভা ও পঞ্চায়েতের আধিকারিকেরা। বৈঠক শেষে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী জানিয়েওছিলেন, তারাপীঠের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ‘রামপুরহাট-তারাপীঠ ডেভলপমেন্ট অথরিটি’ (টিআরডিএ) গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এই পরিকল্পনায় তারাপীছ, রামপুরহাট পুরসভা এলাকা ছাড়াও সাহাপুর, খরুণ, বড়শাল ও বুধিগ্রাম এই চারটি পঞ্চায়েতের কিছু এলাকাও থাকবে। এর ফলে তারাপীঠ ও রামপুরহাট এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন বলে প্রশাসনিক কর্তাদের আশা।

এ দিনের ভিড়ে ঠাসা প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী তারাপীঠের উন্নয়নের জন্য তাঁর বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, “তারাপীঠের উন্নয়নের জন্য কিছু কাজ করা হয়েছে। কিন্তু, আমি মনে করি তারাপীঠের উন্নয়নে আরও কিছু করা উচিত।” এর পরেই তিনি দাবি করেন, “রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ, মাত্র দশ-বারো মিনিট গাড়িতে যেতে লাগে। অনেক হোটেল, অনেক থাকার জায়গা। একটা কোর্টের অর্ডারে হোটেলগুলো প্রায় বন্ধই হয়ে যাচ্ছিল। আমরা হস্তক্ষেপ করে আশিসদাকে (রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়) দায়িত্ব দিয়ে পরিবেশ দূষণ দফতর থেকে অনেকগুলোর সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি।” তাঁর আশ্বাস, “বাদ বাকি যেটুকু আছে, আমি সবাইকে অনুরোধ করব কথা বলুন। কারও যদি ক্ষমতা না থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরাও কিছু সাহায্য করতে পারি।”

এই আশ্বাস দেওয়ার পরেই মমতা রামপুরহাট এবং তারাপীঠ নিয়ে একটি নতুন উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি করার কথা ঘোষণা করেন। মঞ্চ থেকেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই ডেভলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নিযুক্ত করছি। ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন জেলাশাসক মিস্টার গাঁধী।” এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূলের রামপুরহাট ২ ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের (তারাপীঠ লজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও) নাম উল্লেখ করে জানান, সুকুমারবাবু এই কমিটির মেম্বার হিসাবে থাকবেন। সেই সঙ্গে কমিটিতে তারাপীঠের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকেও তিনি রাখার পরামর্শও দেন। নতুন এই উন্নয়ন পর্ষদের জন্য এর পরেই পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে মন্ত্রী, পরে উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ঘোষণা করায় তাঁর হৃত মর্যাদা ফিরে এল বলে মত দলের একাংশের।

কী ভাবে কাজ করবে এই পর্ষদ? জেলাশাসক জানান, পুরসভা বা পঞ্চায়েতের কাজ কর্ম নিয়ে কোনও আলাদা ভাগ করা হবে না। তারা তাদের নিজের এলাকায় যেমন কাজ করছিল, সে ভাবেই করবে। পর্ষদের নব নিযুক্ত চেয়ারম্যন হয়ে আশিসবাবু বলেন, “পর্ষদের সদস্য কত জনের হবে, কারা হবে, কীভাবে হবে, সেগুলো এখনও সব কিছু ঠিক হয়নি। সেটা নিয়ে আবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।” এ দিকে, জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, নতুন পর্ষদ তারাপীঠ শ্মশান সংস্কার, তারাপীঠের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, রামপুরহাট থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত ত্রিফলা বাতি লাগাবে। সেই সঙ্গে মঞ্চ থেকেই মমতা মত্‌স্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারিদের উদ্দেশ্য করে বোলপুর, রামপুরহাট, সিউড়ি ও সাঁইথিয়া শহরেও ১ কোটি টাকার ত্রিফলা বাতি লাগানোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আলোর ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে বারবার আমি বলব না। এ সব ক্ষেত্রে কোনও রকম কিপটেমিও বরদাস্ত করা হবে না।” পাশাপাশি এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, রামপুরহাট পুরসভা এলাকার গরিব মানুষদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। খুব শীঘ্র কাজও শুরু হবে।

অন্য দিকে, নতুন এই উন্নয়ন পর্ষদকে আসন্ন পুরভোটের আগে রাজনৈতিক গিমিক বলেই মনে করছে বিরোধীরা। এলাকার প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম বলছেন, “উন্নয়ন হলে তো ভালই। কিন্তু, আদৌ কি উন্নয়ণ হচ্ছে? না কি হবে? ভোটের আগে এই সমস্ত ঘোষণা আসলে চমকের রাজনীতি!” আবার তারাপীঠের বাসিন্দা তথা জেলাপরিষদের প্রাক্তন সহ-সভাধিপতি, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নিতাই মাল দাবি করেন, “আমরা ক্ষমতায় থাকার সময়ই তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ গঠন করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, আমাদের সরকার ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার জন্য সেটা আর কার্যকর হয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আজকে উন্নয়ণ পর্ষদ গঠন করে তারাপীঠের যে সমস্ত উন্নয়ন করার কথা ভাবা হচ্ছে, জেলাপরিষদে থাকাকালীন আমরা তার অনেকটাই করেছি। তারাপীঠের উন্নয়নের তখন সাড়ে ছ’কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল। শ্মশান লাগোয়া তিনখানা ঘাট বাঁধানো হয়েছি। শ্মশান এবং তারাপীঠ এলাকার সৌন্দর্যায়নের কাজও শুরু হয়েছিল।”

আবার পর্ষদ গঠনকে ‘ভাঁওতাবাজি’ বলেই মনে করছে বিজেপি। রামপুরহাটের বাসিন্দা তথা বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি শুভাশিস চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “এ সবই ওদের (তৃণমূল) ভাঁওতা। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা নিয়ে এই সব ভাঁওতাবাজির রাজনীতি ওরা করছে। এমন এক জনকে মুখ্যমন্ত্রী চেয়ারম্যান করেছেন, যিনি রামপুরহাটেই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে লাগানো আলো ঠিক করে জ্বালাতে পারেন না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE