Advertisement
E-Paper

যেন যুদ্ধ লেগেছে, বলছে ঝাড়খণ্ড সীমানার গ্রাম

ক’দিন আগেই ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ায় মাওবাদীদের হামলায় ভোট করাতে গিয়ে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। হোক না সেই এলাকা ভিন রাজ্যের কিন্তু মহম্মদবাজারের কাপিষ্ঠা পঞ্চায়েতের মুরালপুর, মকদাপাড়া, জিন্দালপুর, বলিহারপুর থেকে তো খুব বেশি দূরে নয়। রবিরাত রাতে তাই ঘরের পাশে একটানা ভারী বুটের শব্দের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল সোনাই মুর্মু, লক্ষ্মী হাঁসদা, তপন গড়াইদের। কেউ কেউ জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে যা দেখেছিলেন, তাতে তাঁদের ঘুম চটকে গিয়েছিল।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার ও দয়াল সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০১
দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর এলাকাটি খয়রাশোল লাগোয়া। তাই পুলিশ পাহারায় বুথে পৌঁছচ্ছেন ভোটকর্মীরা।  মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর এলাকাটি খয়রাশোল লাগোয়া। তাই পুলিশ পাহারায় বুথে পৌঁছচ্ছেন ভোটকর্মীরা। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

ক’দিন আগেই ঝাড়খণ্ডের শিকারিপাড়ায় মাওবাদীদের হামলায় ভোট করাতে গিয়ে আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। হোক না সেই এলাকা ভিন রাজ্যের কিন্তু মহম্মদবাজারের কাপিষ্ঠা পঞ্চায়েতের মুরালপুর, মকদাপাড়া, জিন্দালপুর, বলিহারপুর থেকে তো খুব বেশি দূরে নয়।

রবিরাত রাতে তাই ঘরের পাশে একটানা ভারী বুটের শব্দের ঘুম ভেঙে গিয়েছিল সোনাই মুর্মু, লক্ষ্মী হাঁসদা, তপন গড়াইদের। কেউ কেউ জানলার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে যা দেখেছিলেন, তাতে তাঁদের ঘুম চটকে গিয়েছিল। জনা ত্রিশেক লোক ভারী বন্দুক নিয়ে আলো হাতে ঘরের পাশে যে হেঁটে বেড়াচ্ছে! এরা কারা? এই প্রশ্ন নিয়েই ভোর পর্যন্ত জেগে কাটান গ্রামগুলোর ছেলে-বুড়ো-মেয়ে-বউরা। সকালে সাহস করে বাইরে বেরিয়ে দেখেন ওঁদের গায়ে জলপাই রঙের পোশাক। অত্যাধুনীক আগ্নেয়াস্ত্র দেখে গ্রামের অনেকেই ঘরের ভিতরে সেঁধিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ওঁরা যখন দরজার সামনে এসে জল চেয়েছিলেন, তারপর ভয় কাটতে দেরি হয়নি।

শিকারিপাড়ার ঘটনার প্রেক্ষিতেই রবিবার থেকে ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বীরভূমের গ্রামে গ্রামে আধা সেনা জওয়ানদের টহল শুরু হয়েছে। কারণ এ বার নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে কমিশন প্রায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এই জেলা রাজনৈতিক উত্তেজনপ্রবণ হলেও কমিশনের নিয়ুক্ত বিশেষ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক শুক্রবার এই জেলায় এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন মাওবাদীরা যাতে নাশকতা না ঘটাতে পারে সে দিকেই সব থেকে বেশি নজর রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, সে কারণেই শিকারিপাড়ার ঘটনার পরে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় আধাসেনার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

সীমানা লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দা দিলদার শেখ, বাপি মণ্ডল, তপতি গড়াই, সরস্বতী মণ্ডলরা এখনও রবিবার রাতের কথা ভুলতে পারছেন না। তাঁরা বলেন, “আমাদের এলাকায় আগে এত জওয়ান একসঙ্গে আসেনি। তাই রাতের অন্ধকারে ওদের পায়ের শব্দে ভয়ে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। ঘর থেকে বেরোনোর সাহসও ছিল না। আধ ঘণ্টা অন্তর শব্দটা ফিরে ফিরে আসছিল। জানালা দিয়ে দেখি ২০-৩০ জন লোক আলো হাতে গ্রামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আতঙ্কে জানালা বন্ধ করে দিই। সকালেও সেই একই পায়ের আওয়াজ। দরজা খুলে দেখি সব সেনা।”

ভয় কাটার পরে গ্রামে কেন এত সেনা এসেছে, তা নিয়ে এখন জ্বল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। প্রায় সত্তর ছুঁই-ছুঁই বিবেক মণ্ডল, গদাই সরেন, মতিউর রহমানরা বলেন, “আমাদের এত বয়স হল, এত নির্বাচন পার করলাম, কখনই এত নিরাপত্তা গ্রামে দেখিনি। মনে হচ্ছে, যেন যুদ্ধ লেগেছে।” তবে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁদের সঙ্গে অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করছেন বলেই তাঁরা জানিয়েছেন। কিন্তু এ গ্রাম-ও গ্রাম করতে গেলেই রাস্তায় আধা সেনারা ধরে পরিচয় পত্র দেখতে চাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে গ্রামের লোকেরা পাকড়াও করে জানতে চাইছেন, এত নিরাপত্তা বাহিনী কেন? তবে কি এই এলাকাকতেও শিকারিপাড়ার মতো ঘটনার ভয় রয়েছে?

মহম্মদবাজারের চরিচা পঞ্চায়েতের চোরচোর জঙ্গল, শিউলি পাহাড়ি, নিমদাসপুর, তানসুলি, কাপিষ্ঠা, ঘেরা পাথর, জিন্দালপুর, বলিহারপুর, মুরালপুর, মকদাপাড়া, রামপুরের বাটের বাঁধ, শ্রীকান্তপুর, আব্দারপুর, দেবগ্রাম চৌমুলি, ভাঁডকাটা পঞ্চায়েতের ঢোলকাটা, রামপাডা, জেঠিয়া, হিংলো পঞ্চায়েতের হিংলো, হরিনসিঙ্গা, চন্দ্রপুর, পড়ন, তালবাঁধ ইত্যাদি এলাকায় বিশেষ নজর রাখছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মহম্মদবাজারের ১২৭টি বুথের সব ক’টি স্পর্শকাতর। তার মধ্যে ৩০টি অতি স্পর্শকাতর। জেলা পুলিশ ছাড়াও প্রচুর আধা সেনা নামানো হয়েছে।

শুধু মহম্মদবাজারই নয়, আধা সেনার টহল চলছে রাজনগর, খয়রাশোল, কাঁকরতলা প্রভৃতি এলাকাতেও। মঙ্গলবার নির্বাচনের আগের দিনে ভারতীয় বায়ু সেনার হেলিকপ্টার সীমানা লাগোয়া এলাকার আকাশে বেশ কয়েকবার চক্কর মারে। জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “শুধু নজরদারি নয়, ভোটারদের সাহস জোগাতেও জওয়ানদের আনা হয়েছে।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “নির্বিঘ্নে এবং সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করাতে যেখানে যেমন প্রয়োজন, সেখানে সেই রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” শিকারিপাড়া থানার সরকা-পলাসি গ্রামে বৃহস্পতিবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকেই ঝাড়খণ্ড পুলিশ ওই এলাকায় নিরাপত্তা ব্যাবস্থা বাড়িয়েছে। মঙ্গলবার দুমকার পুলিশ সুপার নির্মলকুমার মিশ্র বলেন, “ভোটের দিনের নিরাপত্তা নিয়ে বীরভূম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আগেই বৈঠক হয়েছে। ওই ঘটনার পর আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।”

loksabha election bhaskarjyoti mazumder dayal sengupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy