বস্তা বস্তা পোকা ভর্তি নিম্নমানের চাল। রংটাও কালচে। অভিযোগ, সেই চালই দেওয়া হচ্ছে রেশন গ্রাহকদের। এক দিকে, ডিলারদের দাবি, দফতর থেকে আসা চাল বাধ্য হয়েই তাঁরা গ্রাহকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। অন্য দিকে, লিখিত অভিযোগ না মেলার যুক্তি দেখিয়ে এ ব্যাপারে হাত তুলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাদ্য পরিদর্শকও। এ দিকে, অভিযোগ উঠছে, পিছিয়ে পড়া ওই নিম্নমানের চাল নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ জেলা খাদ্য দফতর।
সম্প্রতি এ নিয়ে তিতিবিরক্ত হয়ে জঙ্গলমহলের বোরো থানার বোরো-জারাগোড়ার পঞ্চায়েত এলাকার রেশন গ্রাহকদের একাংশ অভিনব প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিম্নমানের ওই চালের ছবি তুলে দিয়েছেন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে। তাঁদের দাবি, অতীতে বহুবার লিখিত ভাবে অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। তাই রেশন নিয়ে এই দুর্নীতির ছবি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতেই তাঁরা ওই পদক্ষেপ করেছেন। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ফেসবুকের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে অনেকটাই সিদ্ধহস্ত। কিন্তু পিছিয়ে পড়া জঙ্গলমহলের মানুষের এমন ফেসবুক-প্রতিবাদ অভিনব তো বটেই।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে খবর, সম্প্রতি বোরো পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ পঞ্চায়েত কার্যালয়ে এসে রেশনের নিম্নমানের চাল নিয়ে অভিযোগ জানান। পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুনীল মাহাতো বলেন, “ওঁরা আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রেশনে যে চাল দেওয়া হয়েছে, তা খাওয়ার অযোগ্য। পোকায় খাওয়া, কাঁকরে ভর্তি চাল।” অভিযোগ পেয়েই এলাকার রেশন দোকানগুলির পরিদর্শন করেন প্রধান গীতারানি মাহাতো। গীতারানিদেবীর কথায়, “কয়েক জন্য সদস্যকে নিয়ে রবিবারই এলাকার ছ’টি রেশন দোকান পরিদর্শন করি। পাঁচটি দোকানে দেখি গ্রাহকদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ঠিক। ওই চাল মুখে তোলা যাবে না।” অন্য দিকে, ছ’নম্বর দোকানটি আবার বন্ধই ছিল। প্রধান বলেন, “গ্রাহকদের কেন এমন খারাপ চাল দেওয়া হচ্ছে, খাদ্য পরিদর্শকের কাছে জানতে চাইব। পরে ক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা ওই চালের নমুনার ছবি ফেসবুকেও দিয়েছেন।”
এ ধরনের দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাসিন্দারা সাধারণত সংশ্লিষ্ট দফতর বা থানায় অভিযোগ জানান। তা হলে ফেসবুক কেন? যার প্রোফাইল থেকে ওই ছবি আপলোড করা হয়েছে, সেই সঞ্জয় মাহাতো বলছেন, “বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায় কিছু দিন হৈচৈ হয়। তারপরেই সব ঠান্ডা হয়ে যায়। ফেসবুকে তোলা থাকলে সবাই প্রকৃত তথ্য জানবেন।” গীতাদেবী ও সুনীলবাবুরাও বলেন, “আসলে নামমাত্র তদন্ত হয়। তারপর যে কে সেই। ফেসবুকে প্রতিবাদের কথা জেনে উপরমহলের টনক নড়বে।” অন্য দিকে, এলাকার রেশন গ্রাহক ধরমপুর গ্রামের নীলকমল মাঝি, শঙ্কর মাহাতো, বোরো গ্রামের দেবেন মাহাতোরা আবার বলছেন, “আমরা বহুবার অভিযোগ জানিয়েছি। কিন্তু তার কী ফল হয়, তা তো দেখতেই পাচ্ছি।” রেশন দোকান থেকে কেন নিম্নমানের চাল দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে খাদ্য দফতর তার দায় এড়াতে পারে না বলেই তাঁরা মন্তব্য করছেন। এলাকার রেশন ডিলার ব্রজকিশোর মাহাতো, জলধর সেন, ললিতমোহন বাস্কেরা আবার স্পষ্টই বলেন, “চলতি সপ্তাহে দফতর থেকেই ওই চাল দেওয়া হয়েছে। আমরা তা-ই বিলি করেছি।” মানবাজারের দুই ব্লকেই রেশনের মাল সরবরাহ করেন বোরোর বাসিন্দা ডিস্ট্রিবিউটর লছুরাম মাহাতো। লছুবাবুর দাবি, “এ বার বীরভূম থেকে রেশনের চাল এসেছে। কিছু বস্তার চাল খারাপ ছিল। কিন্তু সব চাল পরীক্ষা করা যায় না।”
এ দিকে, মানবাজারের দু’টি ব্লকের খাদ্য পরিদর্শক নরেন্দ্রনাথ হাঁসদা শুধু বলেন, “দু’একজন ফোনে জানিয়েছেন। তবে, কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ জানাননি।” অন্য দিকে, জেলা খাদ্য নিয়ামক লতিফউদ্দিন শেখ বলেন, “ওই এলাকায় চালের মান খুব খারাপ বলে খবর পেয়েছি। বিভিন্ন জেলা থেকে চাল ঢোকে। ফলে সব সময় বস্তা ধরে ধরে চাল পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। আমাদের সেই পরিকাঠামো ও কর্মীও নেই। ওখানে ঠিক কী হয়েছে, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy