Advertisement
২৫ মে ২০২৪

রেশনের চাল নিয়ে নালিশ, গুদামে হানা খাদ্য দফতরের

জেলার কোথাও কোথাও রেশনের চালের গুণগত মান ভাল নয়, এই অভিযোগ পেয়ে এক রেশন ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামে হানা দিল খাদ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে চালের মান নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রবিবার ছুটির দিন আচমকা পুরুলিয়া শহর ও শহর লাগোয়া দু’টি গুদামে হানা দেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:১৫
Share: Save:

জেলার কোথাও কোথাও রেশনের চালের গুণগত মান ভাল নয়, এই অভিযোগ পেয়ে এক রেশন ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামে হানা দিল খাদ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে চালের মান নিয়ে অভিযোগ উঠতে শুরু করায় পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে রবিবার ছুটির দিন আচমকা পুরুলিয়া শহর ও শহর লাগোয়া দু’টি গুদামে হানা দেন খাদ্য দফতরের আধিকারিকেরা।

অভিযানে জেলা খাদ্য নিয়ামক নিজেও ছিলেন। ওই গুদাম দু’টি মানবাজার ১ ব্লক এবং কেন্দা এলাকার রেশন ডিস্ট্রিবিউটরের। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত দফায় দফায় দু’টি গুদামের মজুত চাল ও অন্য খাদ্য সামগ্রী পরীক্ষা করেন দফতরের আধিকারিকেরা। জেলা খাদ্য নিয়ামক লতিফউদ্দিন শেখ অবশ্য বলেন, “এটি রুটিন নজরদারি। তবে কিছু অসঙ্গতি নজরে এসেছে। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেনিয়ম কিছু হয়ে থাকলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ওয়েস্ট বেঙ্গল এমআর ডিস্ট্রিবিউটর অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক দেবকুমার দাঁ বলেন, “কোথাও কোথাও চালের গুণগত মান সঠিক নয় বলে অভিযোগ পেয়েছি। আসলে খাদ্য দফতর এমন চালই পাঠিয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।”

রেশন নিয়ে ক্ষোভ গত কয়েক মাসে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়েছে। মূলত, দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী মানুষজনকে রেশনে প্রাপ্য চালের পরিমাণ কম দেওয়া হচ্ছে, কয়েক মাস আগেই এই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের বিভিন্ন প্রান্তে। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে আড়শায় এক রেশন ডিলারের বাড়ি ভাঙচুর, রেশনপণ্য লুঠও করেছিলেন গ্রামবাসীরা। বিভিন্ন জায়গায় পথ অবরোধও হয়েছে। প্রশাসন বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে রেশন ডিলারদের সঙ্গে বৈঠক করে সেই পরিস্থিতি তখনকার মতো সামাল দেয়। সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বান্দোয়ানে একটি ধান কেনার শিবিরের উদ্বোধন করতে এলে তাঁকেও বান্দোয়ান ও মানবাজার ২ ব্লক এলাকায় গ্রাহকদের একাংশের কাছে শুনতে হয়, রেশনে আটার মান খারাপ। তিনি জেলা খাদ্য নিয়ামককে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

তবে, রবিবার যে দু’টি গুদামে হানা দেওয়া হয়েছে, সেগুলি মানবাজার ১ এবং কেন্দা এলাকার হওয়া সত্ত্বেও গুদামের অবস্থান পুরুলিয়া শহরে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। মানবাজারের বাসিন্দা, ফরওয়ার্ড ব্লকের কৃষক সংগঠন অগ্রগামী কিষান সভার জেলা সম্পাদক বাবলু চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই রেশন ডিস্ট্রিবিউটরের গুদাম দু’টি স্থানীয় এলাকা থেকে ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরের পুরুলিয়া শহরে কেন থাকবে, এ প্রশ্নের জবাব আমরা আজও পাইনি। জেলার অন্য ব্লকের ক্ষেত্রে ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামগুলি তো সংশ্লিষ্ট ব্লক সদরেই রয়েছে! কারণ, এটাই তো বিধি।” তা হলে শুধু মানবাজারের ক্ষেত্রে কেন ব্যতিক্রম হবে, প্রশ্ন বাবলুবাবুর। তাঁর কথায়, “মানবাজারেই পরিবেশকের গুদাম হলে পিছিয়ে পড়া ওই এলাকায় প্রতি সপ্তাহে কমবেশি শ’দেড়েক শ্রমিকের কাজের সংস্থান হত। আমরা ওই গুদাম মানবাজারে নিয়ে আসার দাবিতে বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু, কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সমস্যার সুরাহা হয়নি।” বিডিও (মানবাজার ১) সায়ক দেব বলেন, “আমরা বিষয়টি জেলা খাদ্য দফতরকে লিখেছি। শুধু তাই নয়, গত পুজোর আগে জেলা প্রশাসনের রেশন পণ্য বিতরণ সংক্রান্ত একটি বৈঠকে আমি বিষয়টি তুলেওছি।” জেলা খাদ্য নিয়ামক বলেন, “মানবাজার ও কেন্দা থানা এলাকার পরিবেশকের গুদাম পুরুলিয়া শহরেই রয়েছে। সেভাবেই ওই পরিবেশকের লাইসেন্স রয়েছে। তবু যখন বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে, আমরা বিষয়টি ফের খতিয়ে দেখব।”

যে ডিস্ট্রিবিউটরের গুদামে দফতরের আধিকারিকেরা হানা দিয়েছিলেন, সেই বিজয় কাটারুকার দাবি, তাঁর গুদামে কোনও গণ্ডগোলই পাওয়া যায়নি। কিন্তু, মানবাজারের গুদামের অবস্থান পুরুলিয়া শহর এলাকায় কেন, এ প্রশ্নে বিজয়বাবুর প্রতিক্রিয়া, “তাতে অসুবিধে কিছুই হচ্ছে না। আমরা তো রেশন ডিলারদের দোকানে ঠিকমতোই পণ্য পৌঁছে দিচ্ছি।” বাবলুবাবুরা কিন্তু হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, গুদাম মানবাজারে না করা হলে শ্রমিকদের নিয়ে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন। মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডুর আশ্বাস, “এই বিষয়টি নিয়ে বিডিও বা খাদ্য দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE