Advertisement
১১ মে ২০২৪
আসছেন শমীক ভট্টাচার্য

লোবায় ফের সভা জমিরক্ষা কমিটির, পাশে বিজেপিও

কমিটির নেতাদের মাথায় ঝুলছে পুলিশের দায়ের করা মামলা। ধর্না মঞ্চের পাশে মাটি কাটার যন্ত্রটিও একলাই পড়ে আছে। তারই মাঝে ফের নড়েচড়ে বসল লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে লোবার ধর্না মঞ্চে তারা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সেখানে যোগ দিতে আসছেন বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০০:৫৬
Share: Save:

কমিটির নেতাদের মাথায় ঝুলছে পুলিশের দায়ের করা মামলা। ধর্না মঞ্চের পাশে মাটি কাটার যন্ত্রটিও একলাই পড়ে আছে। তারই মাঝে ফের নড়েচড়ে বসল লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। আজ, মঙ্গলবার দুপুরে লোবার ধর্না মঞ্চে তারা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। সেখানে যোগ দিতে আসছেন বিজেপি-র রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, বিজেপির হাত ধরেই রাজ্য রাজনীতিতে ফের নাম তুলে নিজেদের প্রাপ্য আদায়ই লক্ষ্য লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটির।

ইতিমধ্যেই জেলার রাজনীতিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছে, অরাজনৈতিক মঞ্চ হলেও কমিটির নেতাদের কেউ কেউ সরাসরি বিজেপিতেই যোগ দিতে চলেছেন। কমিটির নেতা জয়দীপ মজুমদার, ফেলারাম মণ্ডল এবং আশিস মিশ্ররা অবশ্য মুখে সে কথা মানতে নারাজ। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, “ন্যায্য দাবি আদায়ই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে আমাদের সমাবেশে সবাইকেই স্বাগত। তবে হ্যা, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব সমাবেশে থাকলে আমরা অবশ্যই খুশি হব।” ওই নেতারা অবশ্য খুশির কারণ ভাঙতে চাননি।

প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লা খনি গড়ার প্রেক্ষিতে লোবার জমিহারা বাসিন্দারা ন্যায্য ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চেয়েছিলেন। সেই দাবিতে তাঁরা খনি গড়তে আসা সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র আটকে আন্দোলন শুরু করেন। ২০১২ সালের ৬ নভেম্বর সেই যন্ত্র উদ্ধারে আসা পুলিশের অভিযানে ছয় গ্রামবাসী জখমও হয়েছিলেন। ঘটনাকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। লোবায় জোরদার জমি আন্দোলনে নেমে পড়েছিল কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। এমনকী, ওই ঘটনা বিরোধীদের হাতে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল। কিন্তু আজ, কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সেই আন্দোলের অভিঘাত অনেকটাই স্থিমিত। গত পঞ্চায়েতে কমিটির সদস্যেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও বারের মুখ দেখতে হয়েছে। তার পরে আন্দোলন বলতে হয়েছে মাঝে মধ্যে দু’একটি সমাবেশ।

আন্দোলন কার্যত ভেঙে পড়ার নেপথ্যে অনেকগুলিই কারণ রয়েছে। প্রথমত, লোবায় প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লাখনি গড়তে আসা সংস্থার (পিপিপি ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ডিভিসি এমটা) বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ছিল, তারা লোবা অঞ্চলের মানুষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে শাসক দলের কিছু নেতার মদতে মারফত জমি কিনে খনির কাজ শুরু করতে চেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে জমিহারারা প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বা পুনর্বাসন কোনওটাই পাননি। এই বঞ্চনার অভিযোগ থেকেই এলাকার মানুষ অরাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে একজোট হয়ে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পুলিশি অভিযানের আগে পর্যন্ত জমি কিনলেও তার পরেই সংস্থাটি এ ব্যপারে পুরোপুরি হাত গুটিয়ে নেয়। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে কার বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করতে হবে, তা নিয়েই কমিটির মধ্যে সংশয় রয়েছে। তার উপর আবার রাজ্য সরকার ‘সিলিং’ বহির্ভূত জমি কেনার জন্য সংস্থার অধিগৃহীত জমি খাস করে দিয়েছে।

দ্বিতীয় আর একটি কারণও বর্তমান। লোবায় গ্রামবাসীদের উপরে গুলি চালনায় রাজ্য সরকারের পুলিশই অভিযুক্ত ছিল। তারা শাসক দলের নির্দেশেই অভিযান চালিয়েছে, এলাকার একটি বড় অংশের মানুষ এমন ধারণাই করতেন। ফলে কৃষিজমি রক্ষা কমিটির সদস্য বা এলাকাবাসীর একটা অংশের সমর্থন তৃণমূল প্রাথমিক ভাবে হরিয়েছিল। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির কাছে সুযোগ ছিল লোবা পঞ্চায়েত দখল করা। নির্বাচনে লড়লেও কমিটির সদস্যেরা ১৪ আসন বিশিষ্ট লোবা পঞ্চায়েতে মাত্র দু’টি আসনে জয়ী হয়েছিল। ৯টি আসন পেয়ে তৃণমূলই ক্ষমতা দখল করে। তিনটি আসন দখল করে পঞ্চায়েতে দ্বিতীয় হয় সিপিএম। এ ছাড়াও পুলিশি অভিযানে গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে আহত হয়েছিলেন ২০ জনেরও বেশি পুলিশ কর্মী। ভাঙচুর হয়েছিল পুলিশ গাড়িও। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল কমিটির সভাপতি ফেলারাম মণ্ডল, সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার, আহ্বায়ক আশিস মিশ্র-সহ বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী নেতার। গ্রেফতার না হলেও ওই মামলা এখনও কমিটির নেতা-কর্মীদের মাথার উপর ঝুলছে। নেতারা বারবার ওই ‘মিথ্যা’ মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কাজ হয়নি। সব মিলিয়ে ক্রমশ লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটির আন্দোলনের রাশ আলগা হয়ে পড়ে।

এখন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে লোবার জমি আন্দোলনকে নতুন করে চাগিয়ে তোলাই কমিটির কাছে আসল চ্যালেঞ্জ। কমিটির নেতাদের কথায়, “প্রস্তাবিত খোলামুখ কয়লা খনি গড়ার পরিবর্তে এলাকার মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। আন্দোলনে বিভিন্ন মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলিকে পাশে পেতেই সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।” সেই প্রেক্ষিতে বিজেপির পাশে থাকা অন্য তাৎপর্যের প্রতিই ইঙ্গিত করছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত। এমনিতে বিভিন্ন সময়ে পিডিএস নেতা সমীর পুততুণ্ড, কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য বা সৌমেন মিত্ররা ধর্না মঞ্চে এসে কমিটির পাশে দাঁড়ানোর অশ্বাস দিলেও তাঁরা কেউ-ই খুব একটা ভরসা জোগাতে পারেননি। লোকসভা উত্তর বিজেপির উত্থানে অন্য একটি বিকল্প রাস্তা খুলেছে কমিটির সামনে। জয়দেববাবুরা মুখে না বললেও রাজনৈতিক মহলের বিশ্লেষণ, বিজেপিকে পাশে নিয়েই একবার ফের ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটি।

জেলা তৃণমূল অবশ্য বিষয়টিকে আমল দিতেই নারাজ। দলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি ভোলানাথ মিশ্রের বলেন, “এটা মাথা ঘামানোর মতো কোনও ব্যাপারই নয়। সরকার এলাকার মানুষের স্বার্থে কাজ করছে। করে যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shamik bhattacharya dubrajpur dharna loba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE