একাসনে শিবদুর্গা। —নিজস্ব চিত্র
দেবী এখানে অসুরনাশিনী নয়। দুর্গার সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ থাকলেও পাশে রয়েছে শিব। সঙ্গে নন্দী-ভৃঙ্গি।
চারপাশে যখন অসুরদলনী দেবী দুর্গার আরাধনা হয়, তখন বিষ্ণুপুর শহরের ঢেলাদুয়ার আঁইসবাজারের বাসিন্দারা এই শিব দুর্গাকে নিয়ে মেতে ওঠেন। বিষ্ণুপুরের সঙ্গে পাত্রসায়র, বাঁকুড়া শহর-সহ জেলার এমন কয়েকটি মণ্ডপে শিব-দুর্গা এক সঙ্গে পূজিত হন।
এখানে কেন দুর্গার সঙ্গে শিবের পুজো করা হয়? বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এর সুস্পষ্ট কারণ অবশ্য জানা যায়নি। আঁইসবাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক সমীরকুমার কর বলেন, “এই পুজোর ইতিহাস ঘেঁটে আমরা জানতে পেরেছি, ১৪১ বছর আগে কৃষ্ণগঞ্জের মুখোপাধ্যায় বংশের কাছ থেকে পুজোর জন্য ঢেলাদুয়ার চৌমাথায় সিকি কাঠা জায়গা বার্ষিক এক টাকা খাজনাতে নিয়েছিলেন শ্রীপতিচরণ কর, রাইচরণ গরাই, নদিয়ার চাঁদ চন্দ্র, নিতাই দাস, সদয় কর ও এলাকার আরও পাঁচজন। মাটির দেওয়াল, খড়ের চালার এই মন্দির গড়ে তুলে প্রথম পুজো শুরু করা হয়।” কিন্তু কী কারণে দুর্গা ও শিবের একসঙ্গে এখানে পুজো শুরু করা হল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা জানান, বাংলার ১৩১২ সালে খিলান-সহ লোহার কড়ি-বরগা দিয়ে এই দালান মন্দিরটি নির্মাণ করেন শ্রীপতি চরণের ছোট ভাই কেশবচন্দ্র কর। কয়েক বছর আগে পাড়া ষোলো আনার উদ্যোগে মন্দিরটি সুন্দর ভাবে সংস্কার করা হয়।
ঢেলাদুয়ার আঁইসবাজার ষোলোআনা দুর্গোত্সব কমিটির সম্পাদক অসীম বরাট জানান, শুরুর দিকে পুজোর যা যা নিয়ম ছিল, এখনও সে সব তাঁরা মেনে চলেন। প্রথা মেনে এখনও অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের সময় চাল মাশকলাই বলি দেওয়া হয়। পুজোর সময় তিনটি ঘটের মধ্যে ধাতু নির্মিত ঘটটি বিসর্জন দেওয়া হয় না। সেই ঘটেই দেবীর মায়ের নিত্য সেবা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যায় দু’বেলা পুজো করা হয়।
তবে অতীতে পুজোর রাতগুলিতে হরিনাম সংকীর্তনের আসর বসত এখানে। তাই এই শিব-দুর্গার মন্দিরটি ‘নামমেলা’ নামেও পরিচিত ছিল। সময়ের তালে একমাত্র সেই প্রথাটি ধরে রাখা যায়নি। তার বদলে এখন পুজো প্রাঙ্গণে চারদিনই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy