সবার নজরে মিঠুন। বুধবার ওন্দায় ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।
তীব্র দাবদাহ ও প্রখর রোদেও খোলা মাঠে দুপুর একটা থেকে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ হাঁ করে তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। সাদা ও সবুজ রঙের চপারটা যখন আকাশে প্রথম দেখা দিল ঘড়ির কাঁটা তখন সাড়ে তিনটে দেখাচ্ছে। অধীর হয়ে উঠল জনতা।
আর চপার থেকে নেমে যখন সাদা জামা, কালো প্যান্ট ও চোখে কালো রোদ চশমা পরা রূপালি পর্দার সেই ‘হিরো’ প্রথমবার দেখা দিলেন তখন উচ্ছ্বাসের চাপে ভেঙে গেল ব্যারিকেড, হুমড়ি খেয়ে পড়লেন প্রায় হাজার খানেক মানুষ।
বুধবার ওন্দায় মিঠুন চক্রবর্তীর জনসভার প্রাথমিক চিত্র এটাই। তাঁকে দেখতে কাতারে কাতারে মানুষ ভিড় জমিয়ে ছিলেন বাড়ির ছাদে, মাঠের গাছে। জনতার এই উচ্ছ্বাস সামলাতে হিমশিম খেতে হল খোদ মিঠুনকেও। সিনেমার সংলাপ বলে গাছের ডাল আঁকড়ে থাকা দর্শকদের সঙ্গে মজা করলেন, কখনও বা নিজেকে তুফানের সঙ্গে তুলনা করলেন।
কিন্তু কোনও ফিল্মি চরিত্রই জনতার উছ্বাসে লাগাম টানতে না পারায় শেষে অবতীর্ণ হলেন তৃণমূল সাংসদ হয়ে। তিনি বললেন, “আপনারা বসে পড়ুন। এটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপুর্ণ, যাতে কালকে কেউ না বলে আমাদের তৃণমূলের কোনও শৃঙ্খলা নেই। তাই ‘প্লিজ’ সবাই চুপ করে বসুন। এতেও অবশ্য শান্ত করা যায়নি দিনমজুরির কাজ ফেলে মাথায় গামছা নিয়ে সভায় আসা ওন্দার মদন বাগদি, অমিত দাসদের। সব শেষে মঞ্চ থেকে নামার আগে মঞ্চের খুব কাছে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ছবি তুলতে থাকা এক ভক্তকে দেখে মেজাজ হারিয়েও ফেলেন মিঠুন। মাইক্রোফোনের স্যুইচ বন্ধ করে ফাটাকেষ্টর মতো হাতের ‘পাঞ্চ’ দেখিয়ে সেই ভক্তকে হুমকিও দেখাতে থাকেন তিনি।
এক কথায় জেলার তৃণমূল নেতাই হোক আর সভায় আসা সাধারণ জনতা, মিঠুনকে দেখতে লাগাম ছাড়া উচ্ছ্বাস ছিল সবার মধ্যেই। মঞ্চের বাঁ’দিকে বসে মুখে গুটখা চিবোতে চিবোতে পলকহীন দৃষ্টিতে এই নায়ককে দেখতে দেখতে ওন্দার জীবন সেন যেমন চিৎকার করে উঠলেন, “তোমার জবাব নেই গুরু”। তেমনই মঞ্চে মিঠুনের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা তৃণমূল ছাত্র নেতা শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “ছোট থেকে যাঁর অন্ধ ভক্ত, তাঁকে এতো কাছ থেকে দেখতে পেয়ে অভিভূত হলাম।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বললেন, “বৃদ্ধ থেকে স্কুল ছাত্র, মিঠুনের জন্য মানুষ পাগল।”
মঞ্চের সামনের জমসমুদ্র এ দিন শুধু যে মিঠুনের জন্যই এসেছেন, তা বেশ বুঝে গিয়েছিলেন মিঠুনের সঙ্গী তথা রাজ্যের মন্ত্রী মদন মিত্রও। তাই মাইক হাতে তিনি এ দিন এক মিনিটের বেশি কথাই বলেননি। তাঁর সীমিত কথাতেও ‘মিঠুন’ ছাড়া রাজনীতির লেশ মাত্র ছিল না। মিঠুন অবশ্য লোকসভা ভোটে তাঁর দলের সাফল্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। শেষে মঞ্চ থেকে নামার আগে মিঠুন জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছোঁড়েন, “আমার কথা বুঝেছেন তো?”
নিতুড়িয়ার সরবড়িতেও মিঠুন বলেন, “রাজ্যে ভোট কাটাকুটির খেলা চলছে। সবাই বলছে ভোট কাটবো, আর তৃণমূলকে হারিয়ে দেব।” তৃণমূলকে বেশি সংখ্যক আসনে জিতিয়ে রাজ্যর অধিকার আদায় করতে হবে বলে আবেদন করেছেন তারকা সাংসদ। তিনি বলেন, “লোকসভা নির্বাচন অঙ্কের খেলা। যে বেশি সংখ্যয় আসন নিয়ে দিল্লি যাবে সেই বেশি অধিকার ছিনিয়ে আনতে পারবে। তৃণমূল বেশি আসন পেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিতার থাবার মত অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে আসবেন।” জনপ্রিয় অভিনেতার মুখে অবশ্য শুধু রাজনৈতিক বক্তব্য শুনতে চায়নি উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের দাবি মেনে বক্তব্যের শেষদিকে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গীতে নিজের জনপ্রিয় সিনেমার কিছু সংলাপও বলেন মিঠুন।
সড়বড়ি গ্রামের মাঠে সভায় বক্তব্য রাখার সময়ে পরিবহন মন্ত্রী মদন মিত্র সিপিএমের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “হিম্মত থাকলে বলুন ৩৪ বছরে কী করেছ? বলতে পারছ না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে বদনাম করছ? তার পরিবারের নামে কুৎসা করছ? প্রমাণ করতে হবে। না হলে পুরুলিয়ার মাটিতে এই গরমে সিপিএম নেতাদের নাকখত দেওয়ানো হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy