Advertisement
০৫ মে ২০২৪

১০৮ দলের ছৌ প্রতিযোগিতা

জেলা পুলিশ আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের ছৌ নৃত্য প্রতিযোগিতা ঘিরে পৌষের প্রথম দিন থেকেই মেতে উঠল পুরুলিয়া। পুরুলিয়া জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ৯টি থানা এলাকার ছৌ দলগুলিকে নিয়ে একদিনের এই আসর বসেছিল পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে পুরুলিয়া-রাঁচি সড়কের পাশে রায়বাঘিনী ময়দানে।

চলছে ছৌ নাচের প্রদর্শনী।—নিজস্ব চিত্র।

চলছে ছৌ নাচের প্রদর্শনী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৪
Share: Save:

জেলা পুলিশ আয়োজিত জঙ্গলমহল কাপের ছৌ নৃত্য প্রতিযোগিতা ঘিরে পৌষের প্রথম দিন থেকেই মেতে উঠল পুরুলিয়া। পুরুলিয়া জেলার মাওবাদী প্রভাবিত ৯টি থানা এলাকার ছৌ দলগুলিকে নিয়ে একদিনের এই আসর বসেছিল পুরুলিয়া শহর ছাড়িয়ে পুরুলিয়া-রাঁচি সড়কের পাশে রায়বাঘিনী ময়দানে। প্রতিযোগিতায় ১০৮টি দল যোগ দিয়েছিল।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনের প্রতিযোগিতায় মাওবাদী থানা এলাকা থেকে অংশ নেওয়া প্রতিযোগী দলগুলির জন্য মাঠে ১২টি আখড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেই আখড়াতেই নাচ প্রদর্শন করেছেন কোটশিলা, বাঘমুন্ডি, বরাবাজার বা বিভিন্ন এলাকার শিল্পীরা। বেলা যত বেড়েছে বীররসের নাচের ছন্দে আন্দোলিত হয়েছেন দর্শকেরা। দিনের শেষে প্রতিযোগিতার সেরার শিরোপা নিয়ে বাড়ি ফেরার আগে বাঘমুন্ডির চড়িদা ছৌ নৃত্য পার্টির পরিচালক কার্তিক সিং মুড়া বলেন, “এই উদ্যোগ অবশ্যই ভাল উদ্যোগ। একসঙ্গে হাজার শিল্পী নাচে অংশ নিচ্ছে। একজন ছৌ শিল্পী হিসেবে এই দৃশ্য দেখতে ভালো তো লাগছেই।” কার্তিকবাবু পুরুলিয়ার প্রবাদ প্রতিম ছৌ শিল্পী, পদ্মশ্রী প্রাপ্ত গম্ভীর সিং মুড়ার ছেলে।

কার্তিকবাবুর দল প্রতিযোগিতায় অভিমণ্যু বধ পালা করেছে। অভিমণ্যুর ভূমিকায় নৃত্য করেছেন কার্তিকবাবুর ভাই পরশুরাম সিং মুড়া। পরশুরামের নৃত্যে দর্শকেরা তাঁর বাবা প্রয়াত গম্ভীর সিংয়ের নৃত্যশৈলীর ঘরানা দেখে বারেবারে উচ্ছ্বাসে হাততালি দিয়েছেন। পরশুরামের কথায়, “এমন উদ্যোগ ছৌ শিল্পীদের জন্য তো অবশ্যই আনন্দের ব্যাপার।”

কোটশিলার ছৌ দলের পরিচালক ধনঞ্জয় মাহাতো বলেন, “আমরা মহিষাসুরমর্দিনী উপহার দিয়েছি। জেলা পুলিশের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই দাবিও জানাচ্ছি যে, এই ধরনের প্রতিযোগিতা যেন প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়।” তাঁদের কেউ কেউ বলেন, কষ্ট স্বীকার করেও গ্রামে গঞ্জে ছৌ নৃত্যের ধারা আজও বহন করে চলেছেন। ছৌকে ঘিরে তাঁরা যাতে কিছু টাকা অন্তত উপার্জন করতে পারেন সে ব্যবস্থা করলে ভাল হয়।

কোটশিলার কোচাহাতু গ্রামের দল পরিচালক বিকাশ মাহাতোর কথায়, “ছৌ নাচে গ্রামের যে সমস্ত শিল্পীরা অংশ নেন তাঁদের বেশির ভাগই চাষ করেন। কেউ দিনমজুরিও করেন। জেলা পুলিশ যদি এই ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়মিত আয়োজন করে উপকার হয়। এ দিন যে সমস্ত মানুষজন দর্শক আসনে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের অংশগ্রহনে ছৌ এর বৃত্ত আরও বাড়বে।” এই দলটি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে। বোরো গ্রামের শিল্পী আনন্দ সিংয়ের কথায়, নামকরা দলগুলির তো বাজার রয়েছে। কিন্তু সাধারণ দলগুলির জন্যও এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন শিল্পীদের বাড়তি উত্‌সাহ যোগাবে। প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান দখল করে বরাবাজারের আদাবনা গ্রামের তরুণ সংঘ ছৌ নৃত্য সোসাইটি।

জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “ছৌ নৃত্য পুরুলিয়ার একটা ঐতিহ্য ও পরম্পরা। জেলায় অনেক মানুষই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। আমরা তাঁদের শিল্প বা নৃত্যশৈলী আরও বেশি করে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।” চলতি মাসের ২৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে জঙ্গলমহল কাপ ফুটবল(পুরুষ ও মহিলা), তীরন্দাজি প্রতিযোগিতা-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

এ দিনের নৃত্যের আসরে উপস্থিত রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি প্রকল্প বিষয়ক মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “এক সঙ্গে একটি প্রতিযোগিতায় ১০৮টি দল অংশ নিচ্ছে। এত শিল্পী উপস্থিত হয়ে তাঁদের নৃত্য প্রদর্শন করছেন। এতে যেমন শিল্পীদের পরস্পরের মধ্যে একটা যোগসূত্র গড়ে উঠছে। তেমনি সরকারের সঙ্গেও তাঁদের একটা যোগাযোগও গড়ে উঠছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chou competition purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE