Advertisement
১৮ মে ২০২৪

১৩ বছরেও চালু হল না গার্লস হাইস্কুল

স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ চলতে চলতে হঠাত্‌ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পর ১৩টা বছর কেটে গিয়েছে। একের পর এক ভোট পার হয়ে রাজ্যে পালাবদলও ঘটে গিয়েছে। কিন্তু পাত্রসায়র ব্লকের বালসি গ্রামে প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয় ভবনের অসম্পূর্ণ কাজ আজও শেষ হল না। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বারবার এই স্কুল ভবন তৈরির কাজ শেষ করার দাবি তুললেও কাজ আর শুরু হয়নি।

থমকে রয়েছে বালসি গার্লস হাইস্কুল তৈরির কাজ। ছবি: দেবব্রত দাস

থমকে রয়েছে বালসি গার্লস হাইস্কুল তৈরির কাজ। ছবি: দেবব্রত দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪১
Share: Save:

স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ চলতে চলতে হঠাত্‌ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার পর ১৩টা বছর কেটে গিয়েছে। একের পর এক ভোট পার হয়ে রাজ্যে পালাবদলও ঘটে গিয়েছে। কিন্তু পাত্রসায়র ব্লকের বালসি গ্রামে প্রস্তাবিত বালিকা বিদ্যালয় ভবনের অসম্পূর্ণ কাজ আজও শেষ হল না। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বারবার এই স্কুল ভবন তৈরির কাজ শেষ করার দাবি তুললেও কাজ আর শুরু হয়নি।

পাত্রসায়র ব্লকের বালসি এলাকায় একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই দাবি মেনেই বালসি পশ্চিমপাড়া মৌজায় প্রস্তাবিত বালিকা জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বালসি হাইস্কুলের শিক্ষক গোপাল পাল, মধুসূদন ঘোষ, মোহন ঘোষ-সহ কয়েকজন গ্রামবাসী আড়াই বিঘে জমি দান করেন এই স্কুল নির্মাণের জন্য। বালসি পশ্চিমপাড়ায় তাঁদের দান করা সেই জমিতেই ২০০১ সালের ১২ মার্চ ওই বালিকা বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করেন বাঁকুড়া জেলা পরিকল্পনা কমিটির তদানীন্তন সদস্য তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। বিষ্ণুপুরের তত্‌কালীন সাংসদ সুস্মিতা বাউরি সাংসদের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে এবং ইন্দাসের বিধায়ক নন্দদুলাল মাঝি বিধায়ক তহবিল থেকে ৬ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই স্কুলভবন নির্মাণের জন্য। প্রশাসন সূত্রের খবর, সাংসদ তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থে স্কুলের ১২টি শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। চারবছর ধরে সেই কাজ চলে। ৮টি ঘরের ঢালাইয়ের কাজও শেষ হয়েছিল। কিন্তু তারপর হঠাত্‌ ২০০৫ সালে স্কুল ভবন তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রস্তাবিত এই বালিকা বিদ্যালয় তৈরির কাজ।

পাত্রসায়র ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্রাম হল বালসি। বালসি ১, বালসি ২, জামকুড়ি পঞ্চায়েত এলাকার ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে মেয়েদের কোনও উচ্চবিদ্যালয় নেই। ফলে এই বিস্তীর্ণ এলাকার মেয়েরা বাধ্য হয়ে কো-এড স্কুলেই পড়াশোনা করছে। এই কারণে চাপ বাড়ছে বালসি হাইস্কুলের। বর্তমানে বালসি হাইস্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ২০৫০। তারমধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১০৩৭। সংখ্যাধিক্যের হিসেবে জেলার মধ্যে বৃহত্‌ হাইস্কুলগুলির মধ্যে একটি হল এই বালসি হাইস্কুল।

এলাকার বাসিন্দা কল্যাণ কোনার, বালসি হাইস্কুলের শিক্ষক শুভাশিস পাল বলেন, “বালিকা বিদ্যালয়টি হলে আশেপাশের বহু গ্রামের মেয়েদের পড়াশোনার সুবিধা হত। আমরা চাই অনেক দিন হল, এ বার প্রশাসন এই বালিকা বিদ্যালয়টি নির্মাণের কাজ শেষ করুক।’’ গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অসম্পূর্ণ অবস্থায় স্কুল ভবনটি পড়ে রয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সময় স্কুল নির্মাণের কাজ মাঝপথেই বন্ধ হয়েছে। তৃণমূলের বর্তমান সরকারও এই স্কুল নির্মাণের ব্যাপারে পুরোপুরি উদাসীন। সেই সুযোগে সন্ধ্যার পরে ওই অসম্পূর্ণ স্কুল ভবনে বসছে মদ-জুয়ার আসর। বালসি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিত্‌ কোঙার বলেন, “এলাকার ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে মেয়েদের স্কুল নেই। এ দিকে, আমাদের স্কুলে দিন দিন ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে আমাদের স্কুলে ছাত্রের থেকে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। এখানে বালিকা বিদ্যালয়টি তৈরি হওয়া খুবই দরকার।”

এই বালিকা বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ অসম্পূর্ণ থাকা নিয়ে যথারীতি রাজনৈতিক কাজিয়া শুরু হয়েছে সিপিএম ও তৃণমূলের মধ্যে। বালসি ২ পঞ্চায়েত প্রধান তৃণমূল নেতা বুদ্ধদেব পালের অভিযোগ, “ওই বালিকা বিদ্যালয় তৈরি না হওয়ার জন্য দায়ী সিপিএম নেতৃত্ব ও তদানীন্তন বামফ্রণ্ট সরকার। ‘নিউ সেট আপ স্কুল’ হিসাবে ওই বালিকা বিদ্যালয়ের অনুমোদন করাতেই পারেনি ওরা। এরফলে মাঝপথেই স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, ওই স্কুল নির্মাণের কাজ নতুন করে শুরু করার জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন।

সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী আবার এই স্কুল ভবন নির্মাণের কাজ মাঝপথে বন্ধ হওয়ার জন্য শিক্ষা দফতরকে দায়ী করেছেন। তাঁর দাবি, “এলাকায় বালিকা বিদ্যালয় তৈরির চেষ্টা আমরাই প্রথম করেছিলাম। ওই স্কুলটি তৈরির জন্য স্থানীয় বিধায়ক ও সাংসদ তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল। সেই টাকায় কাজও অনেকটা এগিয়েছিল। তারপর মাঝপথে শিক্ষা দফতরের আপত্তিতে সেই কাজ আটকে যায়। শিক্ষা দফতরের নির্দেশ মেনে জমিদানের কাগজপত্র নতুন করে ডিড করানো হয়। কিন্তু শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে স্কুল চালুর অনুমতি না মেলায় পরবর্তী সময়ে জনপ্রতিনিধিদের তহবিল থেকে আর অর্থ বরাদ্দ করা যায়নি। ফলে স্কুল ভবন নির্মাণ শেষ করা যায়নি।” বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সাংসদ সুস্মিতা বাউরি বলেন, “ওই বালিকা বিদ্যালয়টি চালু হলে ভাল হতো। সরকারি কিছু জটিলতার জন্য সেটির নির্মাণ কার্যে নতুন করে তহবিল থেকে আর অর্থ বরাদ্দ করা যায়নি। অসম্পূর্ণ ওই বালিকা বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করে দ্রুত চালু হোক, এটা আমরাও চাইছি।”

জেলা স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) অমিয় গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি অনেকদিন আগের। এখন ওই স্কুলে বিষয়টি কি অবস্থায় রয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।” নেতাদের চাপানউতোর চললেও স্কুল কবে চালু করা যাবে সে উত্তর অধরাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

patrasayar girl's high school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE