Advertisement
১৬ মে ২০২৪

৫০ বছরে পড়ল পূর্বের পুজো

তখন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েতের অধীন। ওই সময় সারাদিনে ৩-৪টি ট্রেন চলাচল করত। অন্য যানবাহন বা বাসের সংখ্যাও খুব কম ছিল। এ হেন সাঁইথিয়ায় ক্লাব বা বারোয়ারি পুজোর তেমন চল ছিল না। হাতেগোনা যে ক’টি পুজো হতো তার সবগুলিই রেল লাইনের পশ্চিম প্রান্তে। পরে রেল লাইনের পূর্ব পাড়ে প্রথম পুজো শুরু করে মেঘদূত ক্লাব।

রেললাইড়ের পূর্বপাড়ে অবস্থিত মেঘদূত ক্লাবের প্রতিমা।  —নিজস্ব চিত্র

রেললাইড়ের পূর্বপাড়ে অবস্থিত মেঘদূত ক্লাবের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০০
Share: Save:

তখন সাঁইথিয়া পঞ্চায়েতের অধীন। ওই সময় সারাদিনে ৩-৪টি ট্রেন চলাচল করত। অন্য যানবাহন বা বাসের সংখ্যাও খুব কম ছিল। এ হেন সাঁইথিয়ায় ক্লাব বা বারোয়ারি পুজোর তেমন চল ছিল না। হাতেগোনা যে ক’টি পুজো হতো তার সবগুলিই রেল লাইনের পশ্চিম প্রান্তে। পরে রেল লাইনের পূর্ব পাড়ে প্রথম পুজো শুরু করে মেঘদূত ক্লাব। নন্দিপুরের ওই পুজো এ বার ৫০ বছরে পড়ল। যাঁরা এই পুজো শুরু করেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ আর বেঁচে নেই। কিন্তু উন্মাদনার খামতি নেই। ৫০ বছর উপলক্ষে পুজোর শ্রষ্টাদেরকে সংবর্ধনা জানানো হবে বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।

তবে সাঁইথিয়ায় প্রথম দুর্গাপুজো শুরু হয় রেল লাইনের পশ্চিমে ছত্রীপাড়ায়। এর পর রথতলাপাড়া ও মনসাতলা পাড়ায় কয়েকটি বাড়ির পুজো শুরু হয়। কিন্তু বারোয়ারি বা ক্লাবের পুজো প্রথম শুরু হয় ৬৭ বছর আগে। কিছু রেল কর্মী মিলে ওই বারোয়ারি পুজো শুরু করেন। বর্তমানে ওই পুজোর সিংহভাগ দায়িত্ব সামলান স্থানীয় মানুষজন এবং কাঁঠালতলা ক্লাবের সদস্যরা। ওই পুজো কমিটির সম্পাদক দুর্বারগতি দত্ত ওরফে ভুটু বলেন, “এই পুজো এ বার ৬৮ বছরে পড়ল। এক সময় এই পুজোটা প্রায় বন্ধ হতে চলেছিল। রেলওয়ে কর্মচারিবৃন্দ যাঁরা পুজো চালাতেন তাঁদের অনুরোধে স্থানীয় কাঁঠালতলা ক্লাবের সদস্যরা ওই পুজোতে যোগ দিই। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।” চার বছর পর সাঁইথিয়া ইয়ংটাউন ক্লাব (বর্তমানে মাছ বাজারের সামনে) দুর্গাপুজো শুরু করে। তাও রেল লাইনের পশ্চিম প্রান্তে। এই পুজো এ বার ৬৪ বছরে পড়ল। বর্তমানে ক্লাবের স্থায়ী মন্দিরে পুজো হয়। কার্যত ইয়ংটাউনের পুজো থেকেই গঞ্জ সাঁইথিয়ায় ক্লাবের দুর্গাপুজোর সূত্রপাত।

কিন্তু কয়েকটি ক্লাব থাকলেও রেলের পূর্ব প্রান্তে কোনও দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল না। ওই সব ক্লাবে সাধারণত সরস্বতী পুজো হত। ওই ক্লাবগুলির অন্যতম মেঘদূত। ক্লাবের বর্তমান সম্পাদক কিষান অগ্রবাল জানান, ক্লাবের জন্ম ১৯৫৫ সালে। সে সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক মেঘদূত ক্লাব গড়ে তোলেন অনেকগুলি উদ্দেশ্য নিয়ে। প্রথমত শরীর চর্চা, খেলাধুলা, যাত্রা-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। সেই সঙ্গে শুরু হয় সরস্বতী পুজো। ক্লাবের প্রবীণ সদস্য তথা পুজো কমিটির সম্পাদক শুভঙ্কর গুহ চৌধুরী বলেন, “মেঘদূত থেকে কিছুটা দূরে আমরা কয়েকজন ওরিয়েন্টাল নামে একটি ক্লাব করতাম। মেঘদূতের পাশাপাশি আমরাও সরস্বতী পুজো করতাম। ১৯৬২ সালে ওরিয়েন্টাল মেঘদূতের সঙ্গে মিশে যায়। পূর্ব প্রান্তে কোনও দুর্গাপুজো না থাকায় মেঘদূতের জন্মদাতা এবং আমাদের অগ্রজ কেশরী চাঁদ অগ্রবাল, নবকুমার চন্দ্র, রমেন্দ্রনাথ সাহাদালাল, প্রবোধ সাহা, বেনীমাধব চক্রবর্তী, সুপ্রকাশ সরকার-সহ ক্লাবের সকলে মিলে পুজো করার সিধান্ত নিই। কেন না, দুর্গাপুজোর সময় দেখেছি এ পারের ছেলেমেয়েদের মন ভার হয়ে থাকত। বাড়ির মেয়েদেরকেও পুজোর ডালি সাজিয়ে অনেকটা পথ যেতে হত। সব বাধা কাটিয়ে এ পারে দুর্গাপুজো চালু করা হয়।” উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নন্দিকেশ্বরী মন্দিরে ঢাক বাজিয়ে এবং মায়ের পাদদেশে একটা লালপাড় শাড়ি দিয়ে প্রথম পুজো শুরু হয়। আজও সেই রীতি চালু রয়েছে।

তবে মেঘদূতের স্থায়ী দুর্গা মন্দিরের সামনে প্রতি বছর মণ্ডপ করা হত এ বার তা হচ্ছে না। উদ্যোক্তারা জানান, এ বার পুজোটি ৫০ বছরে পা দিচ্ছে। তাই পুরনো মন্দিরটিকে প্রায় দশ লক্ষ টাকা ব্যায়ে রাজস্থানের একটি রাজবাড়ির মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয়েছে। মন্দিরের সামনের মাঠ এ বার আলোক সজ্জায় ভরিয়ে তোলা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE