Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হেলিপ্যাড গড়তে ম্যানগ্রোভে কোপ গঙ্গাসাগরে

অনুমতি না-নেওয়ার অভিযোগ পূর্ত দফতর অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছে।

ঢেউসাগরে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে এ ভাবেই তোলা হয়েছে মাটি। —নিজস্ব চিত্র।

ঢেউসাগরে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে এ ভাবেই তোলা হয়েছে মাটি। —নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০৩:১৩
Share: Save:

জীববৈচিত্র ও বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক ঝড়ঝাপটা থেকে আড়াল করার প্রাকৃতিক ঢাল হচ্ছে ম্যানগ্রোভ। অথচ ‘কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন অথরিটি’র অনুমোদন ছাড়াই মাটি কেটে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করে হেলিপ্যাড তৈরি করা হচ্ছে গঙ্গাসাগরে। পূর্ত দফতরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। কার্যক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার কথা ওই পর্ষদের কাছ থেকেই। সেই অনুমতি না-নেওয়ার অভিযোগ পূর্ত দফতর অবশ্য নস্যাৎ করে দিয়েছে।

ডিসেম্বরের শেষে গঙ্গাসাগরের কাছাকাছি হেলিপ্যাড তৈরির জন্য কোস্টাল রেগুলেশন জ়োনের ২০০ বর্গমিটার মাটি কেটে প্রায় ২০০ ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা হয়েছে বলে গঙ্গাসাগর উপকূল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ। হেলিপ্যাড তৈরির কাজ করছে ডায়মন্ড হারবার ডিভিশনের পূর্ত বিভাগ (রাস্তা)। পর্ষদ জানাচ্ছে, থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরে পুলিশ কয়েকটি ট্রাক্টর আটক করেছে। কিন্তু কাজ বন্ধ করেনি।

ঢেউসাগর এলাকায় সমুদ্রতীর থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে দুই একরেরও বেশি জায়গা জুড়ে দু’টি হেলিপ্যাড তৈরির কাজ চলছে। গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা সাগরের বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই পূর্ত দফতরের তরফে সাগরপাড়ে মাটি কাটা ঠিক হয়নি। ডিসেম্বরের শেষ দিকে হেলিপ্যাডের কতা জানাজানি হওয়ার পরে বিষয়টি জেলাশাসককে দেখতে বলেছি।’’ দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘সাগরতটে কেন মাটি কাটা হচ্ছে, সেই বিষয়ে আমরা পূর্ত দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে শো-কজ করেছি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পরে হেলিপ্যাড তৈরির জন্য ওখানে আর মাটি কাটা হচ্ছে না। অন্য জায়গা থেকে মাটি সংগ্রহ করে হেলিপ্যাড গড়া হচ্ছে।’’ তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, সাগর সংলগ্ন এলাকায় মাটি কেটে নেওয়ায় খাল তৈরি হয়েছে। সেখানে ঢুকে যাচ্ছে ভরা কোটালের জল।

হেলিপ্যাড তৈরির দায়িত্বে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার ডিভিশনের পূর্ত বিভাগ (রাস্তা)। অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ওই সংস্থার এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অলোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা অন্য সংস্থাকে হেলিপ্যাড তৈরির দায়িত্ব দিয়েছি। সেই সংস্থার সঙ্গে কথা বলুন।’’ সমুদ্রের লাগোয়া এলাকায় মাটি কাটার জন্য তো অনুমতির প্রয়োজন? অলোকবাবু বলেন, ‘‘হেলিপ্যাড তৈরির জন্য উপকূলবর্তী জায়গা থেকে মাটি কাটা হয়নি।’’ তাঁর বক্তব্য নস্যাৎ করে গঙ্গাসাগর বকখালি উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনিবাহী আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘উনি মিথ্যা বলছেন। পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সাগরে ভাঙনের জন্য কপিল মুনির মন্দির তিন বার সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। তার পরেও ওই মন্দিরের পাশেই ঢেউসাগরের কাছে যে-ভাবে মাটি কেটে ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা হয়েছে, সেটা খাল কেটে কুমির ডেকে আনার সমান। এটা চলতে থাকলে সাগরদ্বীপের ভবিষ্যৎ সঙ্কটে।’’ প্রাক্তন আইএফএস অফিসার সিদ্ধার্থ রায় বলেন, ‘‘সাগরপাড়ে মাটি কাটার জন্য সবার আগে কোস্টাল রেগুলেশন জ়োন অথরিটির অনুমতি দরকার। অনুমতি ছাড়া মাটি কাটা হয়ে থাকলে সেটা ঠিক হয়নি।’’ এই বিষয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PWB Helipad Gangasagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE