Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আইসিইউতে ‘হাতুড়ে’, নাভিশ্বাস রোগীদের, উঠছে অভিযোগ

শ্বাসকষ্টের রোগিণীকে ভর্তি করা হয়েছিল নার্সিংহোমের আইসিইউ-তে। ডাক্তারের আচরণে সন্দেহ হয় রোগীর পরিবারের। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানেন, ওই ডাক্তার এমবিবিএস নন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক! অ্যালোপ্যাথির অ-আ-ক-খ তাঁর অজানা।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৪
Share: Save:

শ্বাসকষ্টের রোগিণীকে ভর্তি করা হয়েছিল নার্সিংহোমের আইসিইউ-তে। ডাক্তারের আচরণে সন্দেহ হয় রোগীর পরিবারের। তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানেন, ওই ডাক্তার এমবিবিএস নন, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক! অ্যালোপ্যাথির অ-আ-ক-খ তাঁর অজানা।

এই অভিযোগ নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ভবন, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল, এমনকী স্থানীয় থানাতেও অভিযোগ করেছেন ওই রোগিণীর আত্মীয়েরা।

স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানান, এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সল্টলেক ও বাইপাসের বহু হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাতের শিফটের দায়িত্বে থাকারা অ্যালোপ্যাথ নন। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, সল্টলেকের এক হাসপাতালে ভর্তি এক রোগিণীর মেয়ে তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁর মাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। তখন রাতের শিফটে থাকা আরএমও প্রতিটি ওষুধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছিলেন। মহিলার অভিযোগ, ‘‘উনি জানান, উনি আয়ুর্বেদের ডাক্তার।’’

এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা কী? ওই কর্তা বলেন, ‘‘ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট অ্যাক্ট মেনে যা করা যায়, আমরা করতে পারি।’’ সেটা কী? তিনি জানান, সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নম্বর-সহ তালিকা পাঠাতে বলা হবে। স্বাস্থ্য দফতর সেই নম্বর মিলিয়ে দেখবে।

উদাহরণ আরও আছে। বাঁশদ্রোণির বাসিন্দা ইলা মজুমদার দীর্ঘদিন কার্ডিওলজিস্ট রঞ্জন শ্রীবাস্তবের কাছে চিকিৎসাধীন। সেপ্টেম্বরে শ্বাসকষ্ট নিয়ে রঞ্জনবাবুর তেঘড়িয়ার নার্সিংহোমে ভর্তি হন তিনি। সেখানে ইলাদেবীর অবস্থা খারাপ হয়। তাঁর ছেলে সুব্রতবাবুর অভিযোগ, ওই নার্সিংহোমের বহু ডাক্তার এমবিবিএস পাশ নন। অনেক আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকও রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘এক চিকিৎসক ওষুধের নামও পড়তে পারেন না। ‘মেডিক্যাল টার্ম’-এর সঙ্গে পরিচিত নন।’’ চিকিৎসক রঞ্জন শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘সুব্রতবাবু মেডিক্লেমে ভুল তথ্য পেশ করেছিলেন। আমরা ধরে ফেলি। তাই উনি এ সব বলছেন।’’ যদিও ওই নার্সিংহোমের একাধিক চিকিৎসকের একই অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, অ-চিকিৎসকদের আরএমও করে রেখে লোক ঠকানো হচ্ছে।

রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল সুব্রতবাবুর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেছে। কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজি বলেন, ‘‘নামীদামি বেসরকারি হাসপাতালেও আয়ুর্বেদ ও হাতুড়ে ডাক্তারদের আরএমও হিসেবে রাখা হচ্ছে বলে খবর। বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার, ডিরেক্টর ও সিইও-দের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’’ ঘটনার প্রতিবাদ করেছে চিকিৎসক সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Quack Doctor Complain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE