দেড় দশক আগে শেষ বার রাজ্য বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা ছিল কংগ্রেসের!
জোট গড়ে সরকার গঠন করতে না পারুক, বিধানসভায় বিরোধী দলনেতার পদ অন্তত এ বার পেতে চলেছে এই দল। প্রশ্ন হল, বিরোধী দলনেতা কে হবেন? ভোটের ফল ঘোষণার পর এখন তা নিয়েই টানাপড়েন শুরু হয়ে গিয়েছে দলের অন্দরে। গত বিধানসভায় কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতা ছিলেন জঙ্গিপুরের বিধায়ক মহম্মদ সোহরাব। এ বার ভোটে তিনি পরাজিত। ফলে পরিষদীয় দলের নেতার পদে নতুন মুখ খুঁজে বার করা এখন অনিবার্য।
কংগ্রেসের একাংশের মতে, বিরোধী দলনেতার পদে বেছে নেওয়া যেতে পারে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি মানস ভুঁইয়াকে। এ বার নিয়ে ছ’বারের বিধায়ক মানসবাবু। এক সময়ে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের নেতাও ছিলেন। বিধানসভায় তাঁর অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন বিষয়ে পড়াশোনা ও প্রজ্ঞা অনেকের তুলনায় বেশি। তবে দলের মধ্যে এই অভিযোগও উঠছে যে, ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে বরাবর ‘অতিশয় সুসম্পর্ক’ রেখে চলতে অভ্যস্ত মানসবাবু। তাঁকে বিরোধী দলনেতা হিসাবে মনোনীত করলে বিধানসভায় শাসক দলের সঙ্গে আপস করে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই আশঙ্কা রয়েছে বাম শিবিরেও। যদিও মানসবাবুর বক্তব্য, তাঁকে খাটো করে দেখাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কেউ কেউ এই রটনা করেন। বাম জমানায় তাঁকে বলা হত, বুদ্ধের মানসপুত্র, তাই মমতার সঙ্গে জোট বিরোধী, আর এখন বলা হয়, মমতার কাছের লোক, তাই বামেদের সঙ্গে জোটের বিরোধী। অথচ ভোটের সময় পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করে সবংয়ে তাঁকে শাসক দল যে ভাবে হেনস্থা করেছে, তা বাংলার মানুষ দেখেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও খুনের মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে।
মানসবাবুর ভূমিকা নিয়ে যাঁদের সংশয় রয়েছে, বিরোধী দলনেতা পদে তাঁদের অনেকেরই পছন্দ আব্দুল মান্নানকে। এ বার নিয়ে তিনিও পাঁচ বারের বিধায়ক। এক বার বিধানসভায় কংগ্রেসের দলের মুখ্য সচেতকও ছিলেন। কংগ্রেসের মধ্যে যে নেতারা জোট গড়ার জন্য প্রথম দিন থেকে সওয়াল করছিলেন, তাঁদের অন্যতম মান্নান সাহেব। সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি থেকে গত তিন বছরে বাম নেতাদের সঙ্গে যৌথ ভাবে বহু আন্দোলন কর্মসূচিতেও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি। একসঙ্গে ভোটে লড়ার পর এ বার বিধানসভায় জোটের সেই সমন্বয় রাখাটাও জরুরি।
তবে টানাপড়েন শুধু এই দুই চরিত্রকে ঘিরে নয়। কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক ও রাজ্য নেতার আশঙ্কা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মুর্শিদাবাদের কোনও বিধায়ককে সেই দায়িত্ব দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। যে হেতু মুর্শিদাবাদ থেকে এ বারও কংগ্রেসের ১৪ জন প্রার্থী জিতেছেন, তাই সেখান থেকেও এ ব্যাপারে জোরালো দাবি উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলনেতা হিসাবে প্রস্তাব করা হতে পারে বহরমপুর থেকে জয়ী মনোজ চক্রবর্তীর নাম। অধীর-ঘনিষ্ঠ মনোজবাবু ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। এ বার দলের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটে (৯২,২৭৩ ) তিনি জয়ী হয়েছেন। তা ছাড়া কট্টর কংগ্রেস নেতা বলে তাঁর খ্যাতিও আছে। তবে বিরোধী নেতা হওয়ার দৌড়ে মান্নান বা মানসবাবুর অভিজ্ঞতার তুলনায় মনোজবাবু কিছুটা পিছিয়ে। যদিও কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘মনোজবাবুকে বিরোধী দলনেতা করলে কংগ্রেসের মধ্যেই বিদ্রোহ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আবদুল মান্নান-মানস ভুঁইয়ারা বেঁকে বসতে পারেন।’’ সাত-পাঁচ এই টানাটানি নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য বলেন, ‘‘দলে এ নিয়ে কোনও টানাটানি নেই। ২৪ মে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠক ডাকা হয়েছে। থাকবেন হাইকম্যান্ডের পর্যবেক্ষকেরও। সেখানে সর্বসম্মত ভাবে বিরোধী দলনেতার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy