Advertisement
০৭ মে ২০২৪

জেলের অন্দরে তাণ্ডবে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষে সোমবার হুগলি জেলে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পর নতুন করে কোনও সমস্যা না হলেও এই ঘটনা জেলের অন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

তাণ্ডবের পরে মঙ্গলবার হুগলি জেল পরিদর্শনে এডিজি (কারা)।—নিজস্ব চিত্র।

তাণ্ডবের পরে মঙ্গলবার হুগলি জেল পরিদর্শনে এডিজি (কারা)।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০১:৫৯
Share: Save:

দুষ্কৃতীদের সংঘর্ষে সোমবার হুগলি জেলে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির পর নতুন করে কোনও সমস্যা না হলেও এই ঘটনা জেলের অন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে।

কারাকর্মীদের একাংশই বলছেন, পরিস্থিতি যা হয়েছিল তাতে যে কোনও সময় কারও মৃত্যুও হতে পারত। মারমুখী দুষ্কৃতীদের ঝামেলা থামাতে গিয়ে কারারক্ষী অথবা পুলিশকর্মীরাও খুন হয়ে যেতে পারতেন। সোমবারের গোলমালে সব মিলিয়ে ৮ জন আহত হন। ফলে, জেলের নিরাপত্তা বড় প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

সোমবারের ঘটনার পর সরকারি পর্যায়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে ঠিক কাদের অঙ্গুলি-হেলনে জেলের অন্দরে ওই পরিস্থিতি হল এবং তা কর্তৃপক্ষের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল। ঘটনার তদন্তে মঙ্গলবার এডিজি (কারা) অধীর শর্মা এবং আইজি (কারা) কমল মুখোপাধ্যায় হুগলি জেলে তদন্তে যান। তাঁরা দীর্ঘক্ষণ জেলের ভিতরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের পদস্থ কর্তারাও।

এডিজি (কারা) অধীর শর্মা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই তদন্তে যদি কারও যোগসাজশ প্রমাণিত হয়, তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

কুখ্যাত দুষ্কৃতী নেপু গিরিকে দমদম সেন্ট্রাল জেলে পাঠানোর নির্দেশ নিয়ে সোমবার ধুন্ধুমার হয় হুগলি জেলে। প্রথমে নেপুর শাগরেদদের তাণ্ডব, জেলে ভাঙচুর। পরে বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতীদের পাল্টা আক্রমণ, মারপিট, ফটকে আগুন লাগানো। কারারক্ষীরাও আক্রান্ত হন। পুলিশ নামলে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, জেলের মধ্যে দুষ্কৃতীরা কী করে সমস্ত আইন উপেক্ষা করে ওই পর্যায়ের তাণ্ডব চালাল? আগুন লাগানোর মতো রসদ সংগ্রহ করল বিনা বাধায়?

কারাকর্মীদের একাংশ মনে করছেন, ঢিলেঢালা নিরাপত্তার ফাঁক দিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে জেলে অস্ত্রও ঢুকতে পারে কোনও প্রতিরোধ ছাড়াই। বস্তুত, নানা ঘটনার পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, হুগলি জেল চত্বর এবং অন্দর বরাবরই দুষ্কৃতীদের অবাধ কর্মক্ষেত্র। দুষ্কৃতীদের স্বার্থে বাধা পড়লেই তার জেরে বারেবারে সেখানে নানা ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের কর্তারা কার্যত প্রমাণ করে দিয়েছেন, সেই সব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে তাঁদের কিছু করার নেই। আর সেই কারণেই, আদালতের নির্দেশে হুগলি জেলে যে সব কয়েদিদের পাঠানো হয়, তারা জেলের অন্দরের দুষ্কৃতীদের নজরানা দিতে বাধ্য হয়। সেই নজরানা না দিলে আগত কয়েদিদের উপরে নানা অত্যাচার চালায় দুষ্কৃতীরা। নজরানার পরিমাণ কত তা-ও স্থির করে দেয় দুষ্কৃতীরা।

তা হলে গণ্ডগোল বাধে কেন?

কারাকর্মীরা জানাচ্ছেন, নজরানার বখরা নিয়েই দুষ্কৃতীদের মধ্যে বিবাদ বাধে। যে দুষ্কৃতীদের দলে নেপু গিরি বা কাশীর মতো কোনও বড় মাথা থাকে, তাদের পাল্লা অবধারিত ভাবেই ভারী হয়। জেলের মধ্যে তাদের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তা হলে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। আর তাই হুগলি জেলে নেপুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য মাথাব্যথা ছিল দুষ্কৃতীদের। জেল কর্তৃপক্ষের একাংশের মদত না থাকলে দুষ্কৃতীরা ওই গোলমাল করতে পারত না বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jail Question security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE