Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কার নামে  বাস, আর কে চালায়

সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংসদ অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘‘উন্নয়নের নামে ভাঁওতা দিতে লজঝড়ে বাস রংচং করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ পুরসভার বাস চালানোর পরিকাঠামো না থাকায় তারা বাসটি লিজে দেয়। গত ২ মার্চ ‘বঙ্গ ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’ নামে একটি সংস্থা লিজ পায়।

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২১
Share: Save:

কী ভাবে সেতু টপকে বাস জলে গিয়ে পড়ল, শুধু এই প্রশ্নই নয়। বাসটি আসলে কার হেফাজতে ছিল, সেই প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে।

বাস যিনি চালাচ্ছিলেন, ডোমকল বক্সীপুরের সেই সেন্টু শেখ (৩৭) জল থেকে উঠতে পারেননি। সন্ধ্যায় উদ্ধার হয়েছে তাঁর দেহ। তাঁর ভাই, বাসের কন্ডাক্টর মিন্টু শেখের দেহ রাত পর্যন্ত শনাক্ত হয়নি, খোঁজও মেলেনি।

গত বছর ৮ জানুয়ারি উত্তর দিনাজপুর ডিপোর বাসটি বহরমপুর পুরসভাকে দেয় পরিবহণ দফতর। বাসটি পুরনো, তবে রংচং করে প্রায় নতুনের চেহারা দেওয়া হয়। সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংসদ অধীর চৌধুরী অভিযোগ করেন, ‘‘উন্নয়নের নামে ভাঁওতা দিতে লজঝড়ে বাস রংচং করে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ পুরসভার বাস চালানোর পরিকাঠামো না থাকায় তারা বাসটি লিজে দেয়। গত ২ মার্চ ‘বঙ্গ ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলস’ নামে একটি সংস্থা লিজ পায়।

ওই সংস্থার অন্যতম প্রাক্তন কর্তা, জলঙ্গি থানার কুমারগ্রামের বাসিন্দা গোলাম রেজাউল সরকার সোমবার দুর্ঘটনার পরে দাবি করেন, বহরমপুর পুরসভা ছ’মাসের চুক্তিতে বাসটি তাঁদের দিয়েছিল। শুরুতে করিমপুর থেকে মালদহ পর্যন্ত যাতায়াত করত সেটি। পরে চলত কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি। গত সেপ্টেম্বরে তাঁদের চুক্তির মেয়াদ ফুরোয়। এর পরে রেজাউল ওই সংস্থা থেকে সরে যান।

এর পরে ওই সংস্থাই ফের লিজ পায়। রেজাউলের দাবি, ‘‘দ্বিতীয় বার দায়িত্ব পেয়ে সেন্টু এবং মিন্টু শেখকে মৌখিক ভাবে সাব-লিজে দেওয়া হয়েছিল বাসটি।’’ মাঝে মাসখানেক বাস চলাচল বন্ধ ছিল। দিন কুড়ি আগে ফের সেটি চলতে শুরু করে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বাসটির প্রায় কোনও রক্ষণাবেক্ষণই করা হত না। কিন্তু সরকারি বাস এ ভাবে সাব-লিজ দেওয়া যায় কি?

উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার মালদহ ও মুর্শিদাবাদ ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তম গণ বিষয়টি কার্যত এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘‘আমরা পুরসভাকে বাস চালাতে দিয়েছিলাম। ওরা কাকে কী শর্তে বাস দিয়েছে, সেটা আমাদের জানার কথা নয়।’’ জেলা আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের আধিকারিক অনন্তচন্দ্র সরকার আবার দায় এড়িয়ে পাল্টা বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থা যা করার নিজেরাই করে। এর সঙ্গে আমাদের দফতরের কোনও যোগ নেই।’’

বঙ্গ ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেলস-এর তরফে অন্যতম কর্তা বাবলু মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা পুরসভার কাছ থেকে সরকারি ভাবে লিজ পাইনি এখনও। সেন্টু-মিন্টুকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। বাস চালিয়ে আমাদের টাকা দিত।’’ পুরসভার তরফে বাস দেওয়ার দায়িত্বে থাকা প্রজেক্ট ম্যানেজার নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘পুরসভার যেহেতু নিজস্ব কোনও চালক বা কন্ডাক্টর নেই, তাই আমরা মাসিক ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে বাস দিয়েছিলাম। এখন তারা নিজেরা না চালিয়ে অন্য কাউকে দিয়েছিল কি না, তা আমাদের জানা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE