Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গি-তথ্য নিয়ে প্রশ্ন আদালতে

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তকে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তা হলে তো স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
ত্রাস: গাছের টবে জল, আর সেই পরিষ্কার জলেই জন্মাচ্ছে মশা। সল্টলেকের একটি নার্সারিতে। ছবি: শৌভিক দে।

ত্রাস: গাছের টবে জল, আর সেই পরিষ্কার জলেই জন্মাচ্ছে মশা। সল্টলেকের একটি নার্সারিতে। ছবি: শৌভিক দে।

কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে বৃহস্পতিবার রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছিলেন, চলতি বছরে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গিতে মোট ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম-ঠিকানার তালিকাও দাখিল করা হয়েছিল সেই রিপোর্টে। শুক্রবার সংশ্লিষ্ট জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এক আবেদনকারীর আইনজীবী দাবি করেন, ২৫ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বরের মধ্যে সরকারি হাসপাতালেই ডেঙ্গিতে মৃত আরও অন্তত চার জনের ডেথ সার্টিফিকেট তাঁদের কাছে রয়েছে। যে চার জনের নাম সরকারি নথিতে নেই। সে কথা শুনে স্বাস্থ্য দফতরের পেশ করা রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেন বিচারপতিরা।

রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্তকে বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তা হলে তো স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আদালত কী করে ওই রিপোর্ট বিশ্বাস করবে?’’ আবেদনকারীদের তরফে দেওয়া তথ্য সঠিক কি না, তা এজি-র কাছে জানতে চান ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য। এজি বলেন, তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে আদালতকে জানাবেন। বিচারপতি ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের পেশ করা রিপোর্টের কিছু অংশ স্ববিরোধী। রাজ্যের উচিত স্ববিরোধিতা দূর করা।’’ ডেঙ্গি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য হলফনামার আকারে রাজ্যের দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতিরা।

কোর্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের গবেষক দেবর্ষি চক্রবর্তীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী চার জনের ডেথ সার্টিফিকেটের প্রতিলিপি পেশ করে জানান, ২৫ অক্টোবর চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে মারা গিয়েছেন প্রীতম হালদার। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ৩ নভেম্বর মারা গিয়েছে লক্ষ্মী ঘোষ। সাগর দত্ত হাসপাতালে ৬ নভেম্বর মৃত্যু হয় শেফালি রায়ের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ১২ নভেম্বর মারা গিয়েছেন সুমন দে। ডেথ সার্টিফিকেটে এঁদের চার জনেরই মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি বলে লেখা হয়েছে। কিন্তু কারও নামই সরকারি তালিকায় নেই।

এ দিনই অন্য এক আবেদনকারী তথা আইনজীবী রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় আদালতে কয়েকটি ডেথ সার্টিফিকেট দাখিল করে অভিযোগ করেন, সরকারি হাসপাতালে এঁদের ডেঙ্গির চিকিৎসা হলেও মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি লেখা হয়নি। তা শুনে বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি না হলে, কী করে ওই রোগে মৃত্যু হয়েছে তা বলা যাবে?’’ তখন ওই আইনজীবী অভিযোগ করেন, স্বাস্থ্য দফতরের চাপেই বহু ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি লেখা হচ্ছে না। এই ভাবে তথ্য গোপন করছে সরকার।

কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল কৌশিক চন্দ এ দিন আদালতে অভিযোগ করেন, গত বছরই রাজ্যকে বলা হয়েছিল, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়ার মতো ডেঙ্গিকেও ‘নোটিফায়েড ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করতে। তা হলে ওই রোগে আক্রান্ত কেউ বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও সঙ্গে সঙ্গে তা স্বাস্থ্য দফতরকে জানাতে হবে। রাজ্য সে কথায় কান দেয়নি। এমনকী, গত এপ্রিলে বিষয়টি ফের মনে করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তারা নড়ে বসেনি। যদিও বিশ্বরঞ্জনবাবু পরে দাবি করেন, কয়েক বছর আগেই এ রাজ্যে ডেঙ্গিকে ‘নোটিফায়েড ডিজিজ’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।

কৌশিকবাবুর আরও অভিযোগ, ডেঙ্গির জন্য কেন্দ্রের বরাদ্দ করা টাকার কতটা খরচ হয়েছে, তা-ও জানায়নি রাজ্য। বলা হয়েছে, প্রয়োজন হলে কেন্দ্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল পাঠাতে পারে। রাজ্য সে নিয়েও মত জানায়নি।

ডেঙ্গি মোকাবিলায় কেন্দ্রের দেওয়া টাকা রাজ্য খরচ করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর দাবি, ২০১৫-’১৬ সালে কেন্দ্রের দেওয়া ২২ কোটি টাকা এবং ২০১৬-’১৭ সালে ১৯ কোটি টাকা ফেরত চলে গিয়েছে। চলতি অর্থবর্ষে দেওয়া ১৯.৪ কোটি টাকার মধ্যে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে মাত্র ৫.৮ কোটি।

এ দিন ডিভিশন বেঞ্চ এজি-কে জানায়, আদালত মনে করছে, মৃতদের পরিজনকে অন্তর্বর্তিকালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় কি না ও প্রত্যন্ত এলাকার ভ্রাম্যমান রক্ত পরীক্ষা গাড়ি পাঠানো যায় কি না, রাজ্য তা হলফনামা দিয়ে জানাতে পারে। ২৪ তারিখ মামলার পরবর্তী শুনানি।

credibility Dengue High Court health department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy