Advertisement
E-Paper

শক্ত হচ্ছে ফাঁস, একই দিনে হানা ৬২ জায়গায়

জাল গুটোনো শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার ফাঁস শক্ত করা শুরু করল সিবিআই। শনিবার সারদা কেলেঙ্কারিতে দেশজুড়ে ৬২টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। ল্যাপটপ ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি গুয়াহাটিতে দু’টি টিভি চ্যানেলের অফিস সিল করে দেওয়া হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:০৪

জাল গুটোনো শুরু হয়েছিল আগেই। এ বার ফাঁস শক্ত করা শুরু করল সিবিআই।

শনিবার সারদা কেলেঙ্কারিতে দেশজুড়ে ৬২টি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। ল্যাপটপ ও নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি গুয়াহাটিতে দু’টি টিভি চ্যানেলের অফিস সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওড়িশায় শাসক দলের (বিজেডি) এক বিধায়ক, ওড়িশা ক্রিকেট সংস্থার সচিব এবং একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের মালিকের বাড়িতেও তল্লাশি হয়েছে। তল্লাশি হয়েছে মুম্বইয়ে দীপক পারিখ নামে এক শেয়ার বাজারের দালালের বাড়ি-সহ দু’জায়গায়। ওড়িশার একটি লগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সমদিত কুন্তিয়া নামে প্রাক্তন কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার এই কেলেঙ্কারির তদন্তে কলকাতার দশটি জায়গায় হানা দিয়েছিলেন সিবিআই অফিসারেরা। তল্লাশি হয় রাজ্য প্রাক্তন ডিজি রজত মজুমদার, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নীতুর বাড়িতে। ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধীর অফিসে তল্লাশির পাশাপাশি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহ ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনা সিংহের দিল্লি ও গুয়াহাটির বাড়িতেও। সে দিন রাতেই মনোরঞ্জনার দু’টি বাড়ি সিল করে দেওয়া হয়েছিল।

সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন তাদের পাঁচ সদস্যের একটি দল গুয়াহাটির দু’টি টিভি চ্যানেলের অফিসে হানা দেয়। এর মধ্যে একটি টিভি চ্যানেলের অফিসে বৃহস্পতিবারেও তল্লাশি চালানো হয়েছিল। অভিযোগ, ওই দু’টি চ্যানেলের মধ্যে একটি চালানোর জন্য সারদা মনোরঞ্জনাকে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছিল। আর একটি চ্যানেল বিক্রি বাবদ টাকা নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সারদা পুরোপুরি স্বত্ত্ব পায়নি বলে অভিযোগ।

গত ৯ মে সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই তদন্তের রায় দেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, এই কেলেঙ্কারিতে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র এবং প্রভাবশালীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে হবে। গত তিন দিনে সিবিআইয়ের তল্লাশি হানায় সেই প্রসঙ্গটাই অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যদিও এ দিন সিবিআইয়ের তদন্ত পদ্ধতি নিয়ে তোপ দেগেছেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “এখন যেটা হচ্ছে, রাজনীতি হচ্ছে। আগে যেটা হয়েছিল, সেটা মানুষকে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রকৃত উদ্যোগ ছিল।”

রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা যা-ই বলুন না কেন, সারদা তদন্তে কিন্তু রাজ্য পুলিশের ভূমিকা বারবার সমালোচিত হয়েছে। সিবিআই তদন্তের রায় দিতে গিয়ে একই সুর মিলেছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের গলাতেও। বস্তুত, সারদা তদন্তে নামার পর কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) আদালতে রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার কথা জানিয়েছিল। তদন্তে নেমে সিবিআই রাজ্যের কাছে নথি না মেলায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। সিবিআই অধিকর্তা রঞ্জিত সিনহা বলেছিলেন, নথি না পেলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। এ দিন একই ইঙ্গিত মিলেছে সিবিআই ও ইডি সূত্র থেকে। কী রকম?

সিবিআই ও ইডি সূত্রের খবর, সারদার কম্পিউটার ও তথ্য বিভাগের এক শীর্ষকর্তাকে জেরা করেছিলেন তদন্তকারীরা। তিনি অভিযোগ করেছেন, সারদা তদন্তে কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) এক অফিসার তাঁর কাছ থেকে তিনটি পেন ড্রাইভ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন। কিন্তু কোনও সিজার লিস্ট দেননি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের অনেকের মতে, ওই পেন ড্রাইভগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ নথি থাকতে পারে। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঠিক কী ঘটেছিল, তা আমরা খতিয়ে দেখব।”

সারদা সংস্থার পাশাপাশি ওড়িশার একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়েও এ দিন তৎপর হয়েছে সিবিআই। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে যেমন সারদার পিছনে রাজনৈতিক নেতা ও সমাজের প্রভাবশালী অংশের মদত থাকার অভিযোগ রয়েছে, তেমনই ওড়িশার ওই সংস্থার পিছনেও সে রাজ্যের নেতা ও প্রভাবশালী অংশের মদত রয়েছে। সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজতেই এ দিন বিজেডি দলের নেতা প্রভাত ত্রিপাঠী, ওড়িশা ক্রিকেট সংস্থা আশীর্বাদ বেহরা, স্থানীয় সংবাদপত্রের মালিক বিকাশ সোয়াইন এবং প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা সমদিত কুন্তিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। সিবিআই জানিয়েছে, সমদিতকে প্রায় এক মাস ধরে খুঁজছিল তারা। কিন্তু সমদিত ক্রমাগত পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এ দিন বাড়ি তল্লাশির সময়েও তিনি হাজির ছিলেন না। পরে অবশ্য বাড়ির পিছনে একটি শুকনো কুয়োর ভিতরে তাঁর হদিস পান গোয়েন্দারা।

এ দিন সিবিআই দাবি করেছে, ওড়িশার ওই অথর্লগ্নি সংস্থা থেকে বিজেডি নেতা প্রভাত ত্রিপাঠী নিয়মিত টাকা নিতেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে প্রভাতের দাবি, তিনি এ বিষয়ে জড়িত নন। সারদা থেকে অবৈধ ভাবে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ব্যবসায়ী রমেশ গাঁধীও।

শনিবার রমেশ গাঁধী লিখিত বিবৃতিতে দাবি করেন, তিনি বা তাঁর সংস্থা রেনবো প্রোডাকসন্স লিমিটেড সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ ভাবে এক পয়সাও নেননি। প্রাক্তন সাংসদ মাতঙ্গ সিংহের সংস্থার টিভি চ্যানেল ‘এনই-বাংলা’ তাঁদের অফিস ব্যবহার করায় বৃহস্পতিবার সিবিআই নথির খোঁজে সেখানে হানা দিয়েছিল। সুদীপ্ত সেন শেষ দিকে চ্যানেলটির একটি বড় অংশ কিনে নিয়েছিলেন। কিন্তু ‘এনই বাংলা’ চ্যানেলে তাঁর কোনও রকম মালিকানার কথা রমেশবাবু অস্বীকার করেছেন।

রেনবো প্রোডাকসন্সের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রমেশবাবুর দাবি, মাতঙ্গ সিংহের সংস্থা ‘নর্থ ইস্ট মাল্টিমিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’-এর সঙ্গে যৌথ ভাবে চ্যানেল চালালেও তাঁর হাতে কোনও শেয়ার ছিল না, তিনি কখনও সংস্থার ডিরেক্টরও ছিলেন না। পরে মাতঙ্গ সিংহ সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে মালিকানার বড় অংশ বিক্রি করে দেন। ২০১১ সালের শেষাশেষি চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণও সারদা গোষ্ঠীর হাতে চলে যায়। সেই থেকে ওই চ্যানেলের সঙ্গে আর তাঁদের কোনও রকম সম্পর্ক নেই।

দূরদর্শন কেন্দ্র কলকাতার ‘প্রাপ্য’ মেটানো নিয়ে রেনবো প্রোডাকসন্সের সঙ্গে তাদের কাজিয়া অনেক আগেই আদালতে গড়িয়েছিল। রমেশবাবুর দাবি, দূরদর্শনকে কোনও ‘ন্যায্য’ পাওনা থেকে তাঁরা বঞ্চিত করেননি। ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে হওয়াতেই দূরদর্শন জাতীয় ইতিহাস আশ্রিত ‘জন্মভূমি’ সিরিয়াল সম্প্রচারের অনুমোদন দিয়েছিল। পরের বছর থেকে কলকাতা দূরদর্শনে প্রথম বেসরকারি সংবাদ ‘খাস খবর’ সম্প্রচার শুরু হয়। গুণগত মানের কারণেই এই দু’টি অনুষ্ঠান ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছিল এবং তার জেরে দূরদর্শন নজিরবিহীন লাভ পেয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও রেনবোর উপরে দূরদর্শন বাড়তি বিলের বোঝা চাপায়, যা তাঁরা মানতে রাজি হননি। বিষয়টির এখনও ফয়সালা হয়নি। কিন্তু এর সঙ্গে দূরদর্শনে রেনবোর অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার সম্পর্ক নেই বলে রমেশবাবুর দাবি।

cbi saradha group rajat majumder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy