দিন তিনেক আগেই শ্যামনগরে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের অবরোধে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল শিয়ালদহ মেন শাখার ট্রেন চলাচল। বুধবার বন্ধ চটকল খোলার দাবিতে কাঁকিনাড়ায় চার ঘণ্টার রেল অবরোধে ফের দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেন বন্ধ থাকে ওই শাখায়। নাকাল হন হাজার হাজার নিত্যযাত্রী।
নোট বাতিলের প্রতিবাদ করায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রোষে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূলের সাংসদ-নেতাদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে রবিবার অবরোধে নেমেছিলেন ওই দলের কর্মী-সমর্থকেরা। আর কাঁকিনাড়ার নফরচাঁদ জুট মিল খোলার দাবিতে এ দিন রেল অবরোধ করেন সেখানকার শ্রমিকেরা। তার জেরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থমকে থাকে ট্রেন।
ট্রেন না-পেয়ে নিত্যযাত্রীর ভিড় আছড়ে পড়ে সড়কপথে। এক সময়ে বিটি রোড ও ঘোষপাড়া রোডে এমনই ভিড় হয় যে, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ নামিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। বাধ্য হয়েই যাত্রীরা বাড়তি টাকা দিয়ে টোটো, অটো বা ট্যাক্সিতে গন্তব্যে পৌঁছন। মওকা বুঝে অনেক চালক অল্প দূরত্বের যাত্রীদের কাছ থেকেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছে।
শ্রমিকেরা এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ কাঁকিনাড়া স্টেশনের কাছে ২৯ নম্বর রেলগেটে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। শ’তিনেক শ্রমিক লাইনের উপরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকায় আটকে যায় ট্রেন। শ্রমিকদের অভিযোগ, আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে নফরচাঁদ চটকল। মালিকানা বদলের কথা চলছিল। ওই মিলের মালিকানা অধিগ্রহণ করার কথা ছিল হাওড়ার হনুমান চটকলের মালিক ভাগচাঁদ জৈনের। আশা ছিল, তার পরে চটকল ফের খুলবে। কিন্তু তা হয়নি। চটকলটি খোলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলতে থাকায় তাঁরা বাধ্য হয়েই অবরোধের পথ নিয়েছেন বলে জানান নফরচাঁদের শ্রমিকেরা।
অবরোধের জেরে শিয়ালদহ মেন লাইনের আপ ও ডাউন লাইনের সব ট্রেন চলাচলই বন্ধ হয়ে যায়। রেলের খবর, চার ঘণ্টার অবরোধের সময়ে ১০টি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। রাতে বাতিল করতে হয়েছে আরও কয়েকটি লোকাল। দু’টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। অন্য দু’টি ট্রেন মাঝপথে আটকে থাকে প্রায় চার ঘণ্টা। অবরোধকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করতে যান ভাটপাড়া পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর প্রমোদ সিংহ। কিন্তু শ্রমিকেরা তাড়া করায় তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধকারীদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফায় আলোচনা হয়। কিন্তু কোনও মতেই শ্রমিকদের টলানো যায়নি।
অবশেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই চটকলের মালিক পক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়। পরে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, মালিক পক্ষ ১৫ জানুয়ারি চটকলটি খোলার ব্যবস্থা করছেন। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এআই চাঁপদানি গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নির্মল পূজারা জানিয়েছেন, মালিকানা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সমস্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখে ১৫ তারিখে কারখানাটি চালু করা হবে।’’ ওই বৈঠকের পরে, বেলা ১টা নাগাদ অবরোধ উঠে যায়।
কিন্তু সন্ধ্যা পর্যন্ত শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এমনিতেই শিয়ালদহে ট্রেন চলে সময় না-মেনে। তার উপরে এ দিনের অবরোধের জেরে শহরতলির বিভিন্ন স্টেশনে ট্রেন আটকে থাকায় সেগুলি ফিরতি পথে আসতে দেরি হয়। তাই সন্ধ্যাতেও শিয়ালদহ থেকে ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়ার ব্যবস্থা করতে পারেননি রেল-কর্তৃপক্ষ। ফলে রাতেও ওই অবরোধের বিলম্বিত যন্ত্রণা ভুগতে হয়েছে যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy