রেলের দাবি, মাতৃভূমি লোকালে মহিলা যাত্রীদের তেমন একটা ভিড় হয় না। অথচ, সব শাখাতেই বিশেষ ওই ট্রেনটির আগে-পরে যে সমস্ত ট্রেন আছে, অফিস টাইমে সেই সব ট্রেনে তিল ধরার জায়গা থাকে না বলে রেলের কাছে বেশ কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ করে আসছিলেন যাত্রীরা। সম্প্রতি সেই অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখে রেল। মাতৃভূমি লোকালের বেশির ভাগ কামরায় খুব একটা ভিড় হয় না বলে রেলের দাবি। ভিড়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে তাই সম্প্রতি রেল সিদ্ধান্ত নেয়, নির্ধারিত কয়েকটি কামরায় পুরুষ যাত্রীরা উঠতে পারবে। সোমবার সকাল থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে এই ব্যবস্থা চালু করা হয়। পুরুশদের জন্য নির্ধারিত কামরাগুলির গায়ে নির্দিষ্ট লোগো-সহ লেখা হয়— ‘মাতৃভূমি লোকালের জন্য এই কোচে পুরুষদের প্রবেশাধিকার আছে’। তবে নির্দেশ কেন ফিরিয়ে নেওয়া হল, সেই বিষয়ে সবিস্তার কিছু জানায়নি রেল। আপাতত রানাঘাট মাতৃভূমি লোকালে কোনও পুরুষ যাত্রী উঠতে পারবেন না বলে জানিয়েছে তারা। বাকি সমস্ত শাখাতেই আগের নির্দেশ অনুযায়ী পুরুষ যাত্রীরা তাঁদের জন্য নির্ধারিত কামরায় উঠতে পারবেন। এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই যে নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়া হল সে কথা মেনে নিয়েছেন রেলের অনেক কর্মীই।
পূর্ব রেলের বিভিন্ন শাখায় মাতৃভূমি লোকালে পুরুষ যাত্রীরা উঠে পড়ায় বিভিন্ন সময়ে গণ্ডগোলের খবর পাওয়া যেত। এ নিয়ে মহিলা যাত্রীরা অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি তাঁরা রেল অবরোধ করেছেন বেশ কয়েক বার। তবে, তাতেও অফিস টাইমের ওই ট্রেনে পুরুষ যাত্রীরা উঠে পড়তেন। এ নিয়ে জিআরপি-র বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আসতে শুরু করে রেলের কাছে। রেলের নিয়ম অনুযায়ী, মহিলাদের কামরা বা ট্রেনে ওঠা পুরুষ যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করতে পারে জিআরপি। অনাদায়ে তাদের আদালতে পেশ করতে হয়। কিন্তু, নিয়মের বাইরে ওই যাত্রীদের অযথা হয়রানি করা হত বলে অভিযোগ ওঠে। প্রচুর টাকা ঘুষও নেওয়া হত বলে অভিযোগ। ঘুষ নিয়ে যেমন তাদের ছেড়ে দেওয়া হত, আবার ওই সব কামরাতে চড়তে দেওয়া হত ঘুষের বিনিময়ে। আগে রেল জানিয়েছেল, এ সব খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এ দিনের গণ্ডগোলের পর সেই নির্দেশ ফিরিয়ে নেওয়ায় অবাক হয়েছেন যাত্রীদের একাংশ!
এ দিনের অবরোধ-বিক্ষোভের জেরে ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য যাত্রী। ট্রেন বন্ধ বলে ট্যাক্সি-অটোচালকদের বিরুদ্ধে উঠেছে সুযোগের সদ্ব্যবহার করার অভিযোগ। এমনিতে ব্যারাকপুর থেকে খড়দহ পর্যন্ত অটোয় ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু, এ দিন সেই ভাড়াই দেড়শো থেকে দু’শো টাকা চাওয়া হয়। ভরা অফিসটাইমে বাসেও ছিল বাদুড়ঝোলা ভিড়। অবরোধের জেরে বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের একাংশের অভিযোগ, ১৫ মিনিটের মধ্যে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। তা হলে, তার আগের তিন ঘণ্টা ধরে কেন অবরোধ চালাতে দেওয়া হল? আর এখানেই রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অবরোধের খবর পেয়ে জিআরপি বা আরপিএফ অবরোধ তুলতে খুব একটা তত্পর হয়নি বলে সকালেই অভিযোগ উঠেছিল। তার পর সেই অবরোধকে মান্যতা দিয়েই নিজেদের নির্দেশও ফিরিয়ে নিল রেল!