আলোয় সেজেছে বনগাঁ স্টেশন।
পূর্ব রেলের শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার বেশির ভাগ স্টেশনেই হকার-দৌরাত্ম্য নিয়ে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকারের আরও সহযোগিতার দাবি জানালেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার আর কে গুপ্ত।
শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত ওই রেলকর্তা বারাসত থেকে শুরু করে বনগাঁ পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনের হাল সরেজমিনে পরির্দশন করেন। একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধনও করেন তিনি। হকার-দৌরাত্ম্য নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে বারাসতে তিনি বলেন, ‘‘দমদম ও বারাসতে হকার নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অন্য স্টেশনের ক্ষেত্রেও তা হবে। তবে রাজ্য সরকারের আরও বেশি সহযোগিতা প্রয়োজন।’’ একই সঙ্গে তিনি রেল স্টেশনগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোরও আশ্বাস দেন।
রেলকর্তার এই সফর উপলক্ষে বারাসত, অশোকনগর, হাবরা, গোবরডাঙা, ঠাকুরনগর, বনগাঁ-সহ প্রতিটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের চেহারা রাতারাতি বদলে গিয়েছিল। প্ল্যাটফর্মগুলি হকারমুক্ত করে ধুয়ে সাফ করে দেওয়া হয়েছিল। যা দেখে শনিবার সকালে খুশি হয়েছেন নিত্যযাত্রীরা। কিন্তু রেলকর্তার পরিদর্শন রাতে হওয়ায় অনেক সমস্যার কথা তাঁকে জানানো গেল না বলে আক্ষেপ করেছেন নিত্যযাত্রীরা। রেলকর্তা অবশ্য জানিয়েছেন, রেলের পরিদর্শন রাতেই হওয়া নিয়ম।
শিয়ালদহের ডিআরএম জয়া বর্মা-সহ দফতরের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে শুক্রবার রাতে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার প্রথমে যান বারাসত স্টেশনে। সেখানে কারশেডের কাজকর্ম তদারক করেন তাঁরা। রেলের আবাসনে গিয়ে রেলকর্মীদের পরিবারের কাছে সমস্ত খুঁটিনাটি, সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে খোঁজ নেন। বিভিন্ন স্টেশনের অটোমেটিক সিগন্যাল চালুর প্রক্রিয়া সরেজমিনে দেখেন তাঁরা। তা ছাড়াও, রেল স্টেশনগুলির সৌন্দর্যায়নের জন্য শিশু উদ্যান, মডেল রেল কলোনি-সহ বেশ কিছু প্রকল্পের সূচনা করেন। হাবরায় নবনির্মিত তিনটি টিকিট কাউন্টারের উদ্বোধন করা হয়। বনগাঁয় প্রস্তাবিত আরপিএফ অফিস কাম ব্যারাকের শিলান্যাস করেন রেলকর্তা।
হাবরায় টিকিট কাউন্টারের উদ্বোধনের পর প্রথম টিকিট কাটছেন জিএম আর কে গুপ্ত।
মধ্যমগ্রাম এবং বারাসতে আন্ডারপাসের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে বলেও জানান আর কে গুপ্ত। বারাসতে সংবাদমাধ্যম তাঁর কাছে ‘মাতৃভূমি লোকালে’ পুরুষ যাত্রী ওঠা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি স্পর্শকাতর জানিয়ে বলেন, ‘‘যাত্রীরাই ঠিক করবেন কী হলে তাদের সুবিধা হয়। সে জন্য যাত্রীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’রেলকর্তার এই পরিদর্শন ঘিরে তুমুল তৎপরতায় যে ভাবে স্টেশনগুলির ভোল বদলে দেওয়া হয়, তাতে নিত্যযাত্রীদের প্রশ্ন, ‘‘রোজ কেন এমন ব্যবস্থা দেখা যায় না? কিন্তু বোঝা গেল যে, ইচ্ছে থাকলে রাতারাতি স্টেশনের হাল বদলে ফেলা যায়।’’
বাস্তবিকই, শুক্রবার রাত ২টো নাগাদ বনগাঁ স্টেশনে গিয়ে দেখা গেল, তখনও সাফাই কর্মীরা দ্রুত গতিতে প্ল্যাটফর্ম এবং ট্রেনের কামরা পরিষ্কার করছেন। রেল অনুমোদিত দু’টি দোকান খোলা। টিকিট কাউন্টারে ইউনিফর্ম পরা কর্মীরা। টিকিট পরীক্ষকেরা ঘুরছেন। আরপিএফ ও জিআরপি কর্মীতে স্টেশন চত্বর ছেয়ে গিয়েছে। চারদিকে আলো জ্বলছে। শৌচাগারগুলি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আবর্জনা ফেলার জন্য চারদিকে বসানো হয়েছে ভ্যাট।
হাবরা পুরসভার চেয়ারম্যান নীলিমেশ দাস ওই রেলকর্তার কাছে মূলত হাবরা-শিয়ালদহ লোকালের সংখ্যা বাড়ানো এবং হাবরার ২৮ নম্বর রেলগেট থেকে ৩০ নম্বর রেলগেটের মধ্যে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান। রেলকর্তা তা বিবেচনার আশ্বাস দেন।
পরিদর্শন শেষে রেলকর্তা স্টেশনগুলির হাল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা মনে করছেন, রেলকর্তার হঠাৎ করে দিনে পরিদর্শনে এলে তবেই বাস্তব পরিস্থিতি জানতে পারতেন। এই সাজসজ্জা কয়েক দিনের মধ্যেই হারিয়ে গিয়ে স্টেশনগুলি ফের আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক ও শান্তনু হালদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy