Advertisement
E-Paper

ভিড় দেখিয়েই ক্ষমতা প্রদর্শন

এক বছরও হয়নি, বদলের হাওয়া ঘুরছে পাড়ুইয়ে মাটিতে। লোকসভা ভোটের পর এই পাড়ুইয়ে মাটিতে দাঁড়িয়েই তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। রবিবার সেই পাড়ুইয়ে ভিড়ে ঠাসা জনসভা করে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হুঙ্কার, ‘‘এলাকায় তথা রাজ্যে বিজেপি নেই, পদ্মফুল শুকিয়ে মরে গিয়েছে!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৪৯
স্বমহিমায় জেলা তৃণমূল সভাপতি। রবিবার দুপুরে পাড়ুইয়ের জনসভায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

স্বমহিমায় জেলা তৃণমূল সভাপতি। রবিবার দুপুরে পাড়ুইয়ের জনসভায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

এক বছরও হয়নি, বদলের হাওয়া ঘুরছে পাড়ুইয়ে মাটিতে।

লোকসভা ভোটের পর এই পাড়ুইয়ে মাটিতে দাঁড়িয়েই তৃণমূলের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। রবিবার সেই পাড়ুইয়ে ভিড়ে ঠাসা জনসভা করে জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হুঙ্কার, ‘‘এলাকায় তথা রাজ্যে বিজেপি নেই, পদ্মফুল শুকিয়ে মরে গিয়েছে!’’ বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে তাঁর এ দিনের সভা থেকে কটাক্ষ, “রূপা গাঙ্গুলি ভাবল, আমি বড় বড় কথা বলব। নাচব, লোক জড়ো করব। সে জায়গা আর নেই বন্ধু। পশ্চিমবঙ্গ মা-মাটি-মানুষের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জায়গা।”

রাহুলবাবুর সভার পর মাঝের এই বারো মাসে পাড়ুইয়ে রাজনীতিতে ঘটে গিয়েছে তেরো পার্বণ। অনুব্রত বিরোধী গোষ্ঠী একসময় এসে ভিড় করেছিল পাড়ুইয়ের রাজনীতিতে। বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা হৃদয় ঘোষ, নিমাই দাসদের নেতৃত্বে এক সময় পাড়ুইয়ে বিজেপি পায়ের নীচে জমিও করে ফেলে। যার নেতৃত্ব দেন সে সময় বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। এ দিকে এলাকা দখল নিয়েই লড়াইয়ে জেরে অশান্তিও বাড়ে। বোমা-গুলির লড়াইয়ে বার বার তেতে ওঠে চৌমণ্ডলপুর, মাখড়া, কসবা, মঙ্গলডিহি, হাঁসড়া। সে আঁচ নিভতে না নিভতেই শুরু হয়ে যায় দল বদলের রাজনীতি। কিছুদিন আগেই ফের দল বদলে তৃণমূলে ফিরেছেন হৃদয়-নিমাই। আর পাড়ুই থানা এলাকা এখনও কতখানি তাঁদের দখলে, রবিবার শাসক দলের ক্ষমতা প্রদর্শনের সেই সভাই ছিল পাড়ুই বাস স্টপ লাগোয়া ভোলাগড়িয়া আহমদিয়া হাই মাদ্রাসার ফুটবল মাঠে।

রবিবারের সভা ‘শাসকদলের সভা’ বলা চাইতে, এলাকার বিভিন্ন দল থেকে আসা বিক্ষুব্ধ তৃণমূলদের ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার কর্মসূচি’ বলা ভাল! পাড়ুই থানা এলাকায় চৌমণ্ডলপুর, মাখড়ার মতো ঘটনার পর এই প্রথম শাসক দল তৃণমূল পাড়ুই থানার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে কোনও জনসভা করল। জেলা তৃণমূলের এক নেতৃত্বের কথায়, এ দিনের সভা আদতে ছিল এলাকায় হৃদয়-নিমাইদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে অনুব্রতর কাছে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণের। দলের অন্দরের খবর, উপরমহলের নির্দেশ ছিল ওই জনসভায় ‘লক্ষাধিক কর্মী-সমর্থকদের ভিড় যেন তেন প্রকারে করতেই হবে।’

গত কয়েক দিন ধরেই তৃণমূল এলাকায় এলাকায় ছোট ছোট সভা করে সভায় হাজির হওয়ার বার্তা দিচ্ছিল। এ দিন মাদ্রাসার ফুটবল মাঠ নজরে আসতেই মালুম হল, ভিড়। কয়েক শো বাস, ট্রাক্টর, ছোট গাড়ি নিয়ে পাড়ুই এলাকা কার্যত স্তব্ধ ছিল দিনভর। এ দিন দুপুর থেকেই সিউড়ি-বোলপুর রাস্তা এবং সংলগ্ন বেশ কয়েকটা রাস্তাও কার্যত নানা যানবাহনে অবরুদ্ধ ছিল দীর্ঘ সময়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘‘মা মাটি মানুষের উন্নয়নের সরকার রুটের বাস তুলে নেওয়ায়, রাস্তায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে তাঁদের।’’ তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। সভার অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূলের অন্যতম সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্যে বার বার ঘুরে ফিরে আসে হৃদয়-নিমাইদের নাম। সভায় ছিলেন, দুই বিধায়ক মনিরুল ইসলাম ও গদাধর হাজরা, সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরী, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রমুখ। অনুব্রত বলেন, ‘‘ভাই-ভাইয়ের ঝগড়া মিটেছে। ঘরছাড়াদের আর ওই এলাকার অন্য দলের লোকজনকেও বলছি, দরজা খোলা আছে, দয়া করে আসুন।’’

ঘটনা হল, অনুব্রত সহ-বক্তারা তাঁদের বক্তব্যে ‘এলাকায় বিজেপি নেই’ দাবি করলেও, জনসভা তথা ‘মিলন মেলার’ মঞ্চে আগাগোড়া বক্তাদের নিশানায় ছিল বিজেপি। এমনকী সদ্য বিজেপি থেকে ছেড়ে আসা নিমাই-হৃদয় এবং কামিনী মোহন বাবুর মতো লোকেদের মঞ্চের সামনে তুলে শক্তি প্রদর্শনও করে তারা। এবং এ দিনই ওই মঞ্চে বিক্ষুব্ধ তথা বিজেপির দখলে থাকা কসবা পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের হাতে তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলেদেন অনুব্রতবাবু।

এ দিনের সভায় রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “নিমাই, হৃদয় ও দেবাসিশদের অভিমানের সুযোগে রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, জয় বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ভেবে ছিলেন গোটা এলাকাকে বিজেপি করবে। তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করছে। বিজেপি নেই। পুরনো সিপিএম কিছু লোক বিজেপির পতাকা সামনে রেখে সন্ত্রাসের শাসন কায়েম করতে চাইছে যেমনটা, ৩৪ বছর চালিয়েছিলেন। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না, তাই চক্রান্ত করছে।’’

মন্ত্রীর কথার প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ ও জেলা সম্পাদক রামচন্দ্র ডোম বলেন, “সিপিএম সেই রাজনীতি করে না। এলাকায় মানুষ এখনও ভীত, সন্ত্রস্ত। শাসক দলের মুখ্য টার্গেট সিপিএম। অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা কারা ধরেছিল, সেটা জনসভাতে প্রকাশ।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি অর্জুন সাহা বলেন, “বিজেপি আছে কি না আমরা সেটা দেখাব। অনুব্রতবাবুকে বলছি, ‘‘অপেক্ষা করুন। কোন ফুল শুকিয়েছে, আর কে ফুটছে সময় বলবে।’’

Panrui Trinamool Birbhum Bolpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy