—ফাইল চিত্র।
বিজেপির রথযাত্রা সংক্রান্ত মামলা আরও গড়াল। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ যাত্রা নিয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। শুক্রবার ডিভিশন বেঞ্চ যাত্রায় স্থগিতাদেশ দিয়ে বিশেষ নির্দেশ-সহ মামলা আবার সিঙ্গল বেঞ্চে ফিরিয়ে দেয়। যার ফলে আজ, শনিবার থেকেই বিজেপি যে যাত্রার পরিকল্পনা করেছিল, তা ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
বৃহস্পতিবার যাত্রার অনুমতি দিয়ে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী যে রায় দিয়েছিলেন, এ দিন তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দেবাশিস কর গুপ্ত ও বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ— রথযাত্রা নিয়ে রাজ্য বিভিন্ন জেলার যে সব গোয়েন্দা রিপোর্ট বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালতে মুখবন্ধ খামে পেশ করেছিল, তিনি সেগুলি খুলেই দেখেননি। উচিত ছিল সব রিপোর্ট দেখে রথযাত্রার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা। সেই কারণে মামলাটি ফের বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালতে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, সব রিপোর্ট দেখে তার পরে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।
বিচারপতি চক্রবর্তীর দেওয়া নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এ দিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে আপিল মামলা দায়ের করেছিল রাজ্য।
২৪ ডিসেম্বর থেকে কলকাতা হাইকোর্টে বড়দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে। আদালত খুলবে ২ জানুয়ারি। আইনজীবীদের একাংশের অনুমান, আদালত খোলার পরেই নতুন করে মামলাটির শুনানি হবে।
এ দিন আপিল মামলার শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত জানান, রথযাত্রার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত একেবারেই প্রশাসনিক। সাম্প্রদায়িক গোলমালের আশঙ্কায় প্রশাসন ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি একান্তই রাজ্যের বিবেচনার বিষয়। প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত ঠিক, না ভুল তা নিয়ে আদালতের বিচার করা উচিত হবে না। এজি-র আরও বক্তব্য, সিঙ্গল বেঞ্চে (বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালত) কেবল কোচবিহার জেলার গোয়েন্দা রিপোর্ট পেশ হয়নি। অন্য জেলার রিপোর্টও পেশ করা হয়। ওই বেঞ্চ সেই সব রিপোর্ট না পড়েই পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে— সাম্প্রদায়িক গোলমাল হতে পারে বলে প্রশাসন যে আশঙ্কা করছে, তা কল্পনামাত্র।
আরও পড়ুন: রথযাত্রা নিয়ে ফের জট, হতাশ বিজেপি
রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং অতিরিক্ত ডিজি-র (আইন-শৃঙ্খলা) হয়ে এ দিন সওয়াল করেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি জানান, বিজেপি কোনও সভা বা সমাবেশ করলে পুলিশ তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না। প্রয়োজনে তা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কিন্তু যাত্রা যাবে জাতীয় সড়ক দিয়ে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, জাতীয় সড়ক দিয়ে এই ধরনের যাত্রা করা বেআইনি। সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ৩৯ দিন ধরে রাজ্য জুড়ে যাত্রা চলবে। যদি ধরেও নেওয়া হয়, গড়ে দেড় হাজার লোক তিনটি যাত্রায় অংশ নেবেন, তা হলে কমপক্ষে ১৫ মিটার করে লম্বা ৩০টি বাস তাঁদের নিয়ে চলবে। তা হলে এক কিলোমিটার লম্বা একটি কনভয় দিনের বেশির ভাগ সময় ধরে রাস্তা আটকে চলবে। এ ছাড়া, বড়দিন, গঙ্গাসাগর মেলার মতো উৎসব রয়েছে। পুলিশের পক্ষে এত দিন ধরে যাত্রা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।
বীরভূম, পুরুলিয়া ও উত্তর দিনাজপুর জেলার গোয়েন্দা রিপোর্ট আদালতে পেশ করে আইনজীবী জানান, ৩১টি জেলার রিপোর্ট সিঙ্গল বেঞ্চে পেশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, যাত্রায় অংশগ্রহণকারী লোকজন উত্তেজক স্লোগান দিতে পারেন, এমন খবর রয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বসবাসের নিরিখে এ রাজ্য দেশের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম। সেই কারণেই যাত্রার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিচারপতি চক্রবর্তী সব রিপোর্ট না পড়েই রায় দিয়েছেন।
বিজেপির পক্ষে এ দিন সওয়াল করেন আইনজীবী সুরেন্দ্রকুমার কপূর। তিনি জানান, পুলিশ এখন এই সব কথা বলছে। এ সব নিয়ে তো আগেই আলোচনা হতে পারত! কোথায়, কী ভাবে যাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তা রাজ্য জানিয়ে দিক। অথচ রাজ্য মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি-র মাধ্যমে কেবল তার নীতিগত সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy