Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ভাল মাছ চাষের জন্য নিয়মিত পুকুর সংস্কার

গ্রামবাংলার অধিকাংশ পুকুরই পুরনো, সাবেক আমলের। বর্জ্য, আবর্জনা জমে এই সমস্ত পুকুরের পাঁক বেড়ে যায়, গভীরতা কমে। বেশি পাঁক জমে গেলে পুকুরের প্রাথমিক খাদ্যকণিকা যেমন কমে আসে, তেমনই নানা বিষাক্ত গ্যাস বেরোয়, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।

বিশ্বজিৎ গোস্বামী
শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০৪:৩৩
Share: Save:

গ্রামবাংলার অধিকাংশ পুকুরই পুরনো, সাবেক আমলের। বর্জ্য, আবর্জনা জমে এই সমস্ত পুকুরের পাঁক বেড়ে যায়, গভীরতা কমে। বেশি পাঁক জমে গেলে পুকুরের প্রাথমিক খাদ্যকণিকা যেমন কমে আসে, তেমনই নানা বিষাক্ত গ্যাস বেরোয়, জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। এই সমস্ত কারণে চার থেকে ছয় বছর অন্তর একবার পুকুরের তলদেশ সংস্কার করা জরুরি। সঙ্গে পুকুরের পাড় মেরামত করাও দরকার।

জল না শুকোলে পুকুর সংস্কার করা যায় না। তাই গরমকাল উপযুক্ত সময়। এই সময় জল কমে আসে। ভাসমান আগাছাগুলোকে সরিয়ে পুকুরের বাকি জল বের করে দিতে হবে এই সময়। এর জন্য পাম্প ব্যবহার করা যায়। বাঁধ কেটেও জল বার করা যায়। জল বেরিয়ে গেলে নিমজ্জিত আগাছা বা যেগুলোর মূল পুকুরের তলদেশে যুক্ত, সেগুলোকে উপড়ে ফেলতে হবে। তলদেশের মাটি খুব এবড়োখেবড়ো হলে একটা লেভেল করে ‘কনটুরিং’ করে নিতে হবে। এবার পুকুরের তলদেশ শুকিয়ে মাটি ফাটিয়ে দিতে হবে। পাঁকের নরম মাটি তাড়াতাড়ি ফেটে যায়। কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ওই শুকনো পাঁক বাইরে বার করে দিতে হবে। পাঁক সম্পূর্ণ না শুকোলে বাঁশের ফালি বা কাঠের তক্তার সাহায্যে পাঁক তুলে ফেলতে হবে। বড় পুকুরের মাঝখানটা কিছুতেই শুকোয় না বলে এই অংশের পাঁক তুলে ধারে ফেলে রাখলে কিছু দিন পরে তা শুকিয়ে যায়। তখন তা তুলে ফেলা সহজ হয়।

পায়ের দাগও পড়বে না এমন শুকনো হয়ে গেলে পুকুরের তলদেশ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে রোদ খাওয়ান।

এবার পাড় মেরামতির দিকে নজর দিন। ইঁদুর ও কাঁকড়া পুকুরের বাঁধে যে গর্ত করে দিয়ে গিয়েছে, সেগুলো কাদা বা কাদা চুন দিয়ে ভরে ভাল করে বেঁধে দিতে হবে। বাঁধ মজবুত না হলে অতি বর্ষায় বাঁধের উপরে সরু লম্বা খাত তৈরি হয়। ওই অংশকে মাটি দিয়ে ভরাট করে দুরমুশ দিয়ে পেটাতে হবে এবং ঘাসের চাপড়া দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। বড় পুকুরে জলের ঢেউ বাঁধের গায়ে ধাক্কা দেয়। এটা রুখতে কিছু ভাসমান আগাছা বিশেষ করে কচুরিপানা পুকুরের ধারে ধারে রাখলে ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়। বাঁশের ফালি, ঢেউ খেলানো সিমেন্টের তক্তা দিয়ে খাঁড়া বাঁধকে শক্তিশালী করা যায়। দেশি পুকুরে সাধারণত বাঁধের উচ্চতা কম থাকে। এই সময় সেটা বাড়িয়ে নিতে হবে। এলাকায় সর্বাধিক জলের উচ্চতা যত, তার চেয়েও এক মিটার বেশি উঁচু বাঁধ করতে হবে। বাঁধের উপরের অংশ কমপক্ষে দেড় মিটার চওড়া ও ঢালু হবে। স্থায়ী নির্গমন নলের বন্দোবস্ত করাও দরকার।

বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছচাষের জন্য এরপর পুকুর প্রস্তুত করুন ধাপে-ধাপে

• পুকুরের তলদেশ পুরোপুরি শুকিয়ে ফাটল ধরে গেলে তা ভাল ভাবে চাষ দিয়ে তিন থেকে চার দিন রোদে ফেলে রাখতে হবে।

• পুকুরের পাঁকের অম্লত্ব যাঁচাই করে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

• চুন প্রয়োগের সাত দিন পর পুকুরের তলদেশে হাল্কা কাদা থাকলে ধঞ্চে বীজ ১-২কেজি প্রতি বিঘা হিসাবে ছড়াতে হবে এবং ছড়ানোর ৪৫ দিনের মাথায় ধঞ্চে পাঁকের মধ্যে ভাল ভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।

• এরপর অন্য জলাশয় থেকে জল এনে বা বৃষ্টির জলে উপযুক্ত গভীরতা পর্যন্ত জল ভরতে হবে।

• এক দিন পর বিঘা প্রতি ১০০০-১৫০০ কেজি গোবর, ১০০ কেজি সর্ষের খোল ও ১০ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট একসঙ্গে মিশিয়ে পুকুরে ছড়াতে হবে।

• দু’দিন পরে পুকুরের তলদেশের পাঁক ভাল ভাবে ঘেঁটে দিতে হবে যাতে বিষাক্ত গ্যাস বেরিয়ে যায় ও খাদ্যকণা জলে মুক্ত হতে পারে।

• এর পরের দিন জল পরীক্ষা করে দেখতে হবে পুকুরে উদ্ভিদ ও প্রাণিকণা সঠিক ভাবে জমছে কি না।

• জলের গুণাগুণ ঠিক থাকলে পরের দিন মাছ মজুত করা যাবে।

লেখক দক্ষিণ দিনাজপুর কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্রের মৎস্যবিজ্ঞানী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE