Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ফল খেতে চেয়েছিলেন অটলজি

দিনটা ১৬ অগস্ট, ১৯৮৭। সময়, বিকেল সাড়ে ৫টা। অমরনাথবাবুর ভাইয়ের দোকানে বসেছিলেন সঞ্জিতবাবু। দোকানে ডাকাত পড়ে। বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে জখম হন সঞ্জিতবাবু। তাঁকে ভর্তি করানো হয় বর্তমানের আসানসোল জেলা হাসপাতালে। বাড়ির সকলেই তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অটলবিহারী বাজপেয়ী। —ফাইল চিত্র।

অটলবিহারী বাজপেয়ী। —ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৮ ০৫:৫৪
Share: Save:

বাড়িতে তখন হুলস্থূল কাণ্ড। দু’দিন আগে দোকানে হানা দেওয়া ডাকাতদলের গুলিতে জখম হয়ে ঘরের ছেলে ভর্তি হাসপাতালে। তার মাঝেই দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে রানিগঞ্জে আসছেন বিজেপি-র তৎকালীন অন্যতম শীর্ষ নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ী। উঠবেন ওই বাড়িতেই। তবে তার আগে হাসপাতালে গিয়ে ঘরের জখম ছেলেটির সঙ্গে দেখা করে এসেছেন অটলবিহারী।

— শুক্রবার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর শেষকৃত্য টেলিভিশনে দেখতে দেখতে সেই দিনটার কথাই বার বার বলছিলেন রানিগঞ্জের ডালপট্টির বাসিন্দা অমরনাথ কেশরী ও তাঁর ছেলে সঞ্জিতবাবু।

দিনটা ১৬ অগস্ট, ১৯৮৭। সময়, বিকেল সাড়ে ৫টা। অমরনাথবাবুর ভাইয়ের দোকানে বসেছিলেন সঞ্জিতবাবু। দোকানে ডাকাত পড়ে। বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে জখম হন সঞ্জিতবাবু। তাঁকে ভর্তি করানো হয় বর্তমানের আসানসোল জেলা হাসপাতালে। বাড়ির সকলেই তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এর ঠিক ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে, ১৮ অগস্ট অটলবিহারীর দলীয় কর্মসূচি রানিগঞ্জে। রাতে তাঁর থাকার কথা, রানিগঞ্জে অমরনাথবাবুর বাড়িতেই। সময়মতো আসানসোল স্টেশনে নামেন অটলবিহারী। বাইরে অপেক্ষারত অমরনাথবাবুর গাড়িতে চড়েই তিনি প্রথম যান হাসপাতালে, সঞ্জিতবাবুকে দেখতে। বছর পঞ্চাশের সঞ্জিতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘ওই অবস্থায় আমার পক্ষে কথা বলা সম্ভব হয়নি। কিন্তু অটলজি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার প্রার্থনা করেছিলেন।’’

আসানসোল থেকে সোজা আসেন অমরনাথবাবুর বাড়িতে। সেখানেই খাওয়াদাওয়া— সব্জি, চারটি রুটি, সামান্য ভাত, ডাল। আর সঙ্গে অবশ্যই প্রিয় রসগোল্লা। আশি বছরের অমরনাথবাবু বলেন, ‘‘কর্মসূচিতে বেরনোর আগে অটলজি রাতে মিষ্টি নয়, খেতে চেয়েছিলেন ফল।’’

দলীয় কর্মসূচি সেরে বিকেলে অটলবিহারী গিয়েছিলেন তিলক লাইব্রেরিতে। এমনকি, লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের নামাঙ্কিত গ্রন্থাগার দেখে ‘প্রসন্ন’ হওয়ার কথা লিখে যান ‘ভিজিটার্স বুকে’। গ্রন্থাগার পরিচালন কমিটির সদস্য রাজীব ঝুনঝুনওয়ালা বলেন, “আমরা অটলজির হাতের লেখা সযত্নে রেখেছি। আজকের দিনে বিশেষ করে ওই দিনটার কথা মনে পড়ছে।’’

সে দিন সব কাজ সেরে রাত ৮টা বেজে যায় অমরনাথবাবুর বাড়িতে ফিরতে। ফিরে খানিক ফলাহার করেন অটলজি, জানান অমরনাথবাবু। সাংগঠনিক নানা কথাবার্তাও হয়। ঘুম থেকে উঠে সকাল ৮টায় বেরিয়ে পড়েন বীরভূমের দিকে, সভার কাজে।

এ দিন অটলবিহারীর শেষকৃত্যের দিনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কেশরী বাড়ির স্মৃতির কথাই বার বার উঠে আসছে পরিবারের সদস্যদের মুখে। তাঁদের সকলেরই এক রা, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও পরিশ্রমের অন্তত কিছুটা হলেও আন্দাজ পেয়েছিলেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Resident Raniganj Atal Bihari Vajpayee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE