Advertisement
E-Paper

জালে রিয়াজ, আত্মসমর্পণ কি না ধন্দ রইলই

হাওড়ার হোটেল মালিক সুমিত নাহার মৃত্যুর ন’দিন পরে ধরা পড়ল ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত রিয়াজ আহমেদ। এই ঘটনার অন্য প্রধান অভিযুক্ত দীপক সাউ অবশ্য এখনও ফেরার। ঘটনার পরে পরেই রিয়াজ ও দীপককে কেন গ্রফতার করা হয়নি, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সুমিত নাহার পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ট বলেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৪ ০৩:৪৭

হাওড়ার হোটেল মালিক সুমিত নাহার মৃত্যুর ন’দিন পরে ধরা পড়ল ঘটনার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত রিয়াজ আহমেদ। এই ঘটনার অন্য প্রধান অভিযুক্ত দীপক সাউ অবশ্য এখনও ফেরার।

ঘটনার পরে পরেই রিয়াজ ও দীপককে কেন গ্রফতার করা হয়নি, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সুমিত নাহার পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল, তৃণমূল নেতাদের ঘনিষ্ট বলেই পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করছে না। এ দিন রিয়াজ গ্রেফতার হওয়ার পরেও এই বিতর্ক থামেনি। কারণ, রিয়াজকে সত্যিই পুলিশ গ্রেফতার করেছে, নাকি তিনিই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের দাবি, রিয়াজকে পুলিশই গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন চিহ্নিত করেই রবিবার সকাল আটটা নাগাদ হাওড়া স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে রিয়াজকে। যদিও রিয়াজের বাবা শেখ চাঁদের দাবি, পুলিশ ও তৃণমূলের চাপেই তাঁর ছেলে এ দিন আত্মসমর্পণ করেছেন।

কমিশনারেট সূত্র অবশ্য রিয়াজের আত্মসমর্পণের খবর অস্বীকার করেছে। কমিশনারেটের পদস্থ কর্তাদের দাবি, সুমিত নাহার মৃত্যুর খবর জানার পরেই তিনি ভয় পেয়ে পটনায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। রিয়াজের চারা মাছের ব্যবসা রয়েছে। সেই সূত্রেই পটনায় তাঁর যাতায়াত ছিল। যদিও বাড়ির লোক ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল রিয়াজের। বন্ধুদের কাছ থেকে তিনি তদন্ত নিয়ে তথ্য নিচ্ছিলেন বলে তদন্তকারীরা জেনেছেন। পুলিশের এক সূত্র জানিয়েছে, তৃণমূল নেতাদের একাংশ যে তাঁর আত্মসমর্পণ চাইছে, এ খবরও রিয়াজ পেয়েছিল। শাসক দলের চাপেই পটনা থেকে ট্রেনে এ দিন রিয়াজ হাওড়ায় এসে পৌঁছন বলে তাঁর পরিবার সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের একাংশের দাবি, এ দিন হাওড়ার এক পুলিশ কর্তার বাংলোয় আত্মসমর্পণ করতে আসেন রিয়াজ। পুলিশ সূত্রের খবর, সদ্য দাড়ি-গোঁফ কামানো রিয়াজ হাতে একটি বড় ব্যাগ নিয়ে সকাল আটটা নাগাদ ওই পুলিশ কর্তার বাড়ি ঢোকেন। তাঁর পরনে ছিল লাল-কালো চেক শার্ট, ব্লু ডেনিম জিন্স। মাথায় ছিল কালো টুপি। সেখানেই রিয়াজকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরে তাঁকে গোলাবাড়ি থানায় আনা হয়। সেখানেও তাঁকে জেরা করে পুলিশ।

গত ২২ জুন রাতে বাগুইআটির বাসিন্দা ও হাওড়ার একটি বেসরকারি লজের মালিক সুমিত নাহার কাছে বেশ কয়েকটি ফোন আসে। এর পরেই তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সুমিতবাবুর পরিবারের অভিযোগ, দাবি মতো তোলা না দিতে পারায় রিয়াজ ও দীপক ফোনে হুমকি দিচ্ছিলেন। এই চাপেই সুমিতের মৃত্যু হয়েছে। এর পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যান রিয়াজ ও দীপক।

পুলিশের ধারণা, রিয়াজকে জেরা করেই আর এক পলাতক দীপক সাউয়ের খোঁজ মিলবে। পুলিশ সূত্রের খবর, সুমিত নাহার মোবাইলের কললিস্ট থেকে জানা গিয়েছে, ২২ জুন রাত ১০টা ৫৫-য় তাঁকে ফোন করে রিয়াজ। তার পরে রাত দেড়টা পর্যন্ত চারটে ফোন এসেছিল সুমিতবাবুর মোবাইলে। সেগুলি ছিল ভিন রাজ্যের। কে বা কারা ওই সময়ে সুমিত নাহাকে ফোন করেছিল, তা-ও জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এ দিন বেলা একটা নাগাদ রিয়াজকে হাওড়ার এসিজেএম অনুশ্রী রায়ের আদালতে তোলার পরে পুলিশ জানায়, তাঁকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন। এর পরেই রিয়াজকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সুমিত নাহার মৃত্যুর পরে হাওড়া কমিশনারেট ছাড়া বাগুইআটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তাঁর পরিবার। এ দিন হাওড়ার এসিজেএম আদালতে বাগুইআটি থানার কেস ডায়েরিও এসে পৌঁছয়।

রিয়াজ ধরা পড়ার খবরে অবশ্য কিছুটা হলেও স্বস্তিতে সুমিত নাহার মা মঞ্জুদেবী। তিনি বলেন, “আমি খুশি। পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়ছে। আশা করি, দীপকও দ্রুত ধরা পড়বে। ওরা তো এক সঙ্গেই আমাদের হোটেলে আসত।” তাঁর ছেলের সঙ্গে দীপকদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে বিভিন্ন মহল থেকে যে দাবি করা হয়েছে, সে সম্পর্কে এ দিন মঞ্জুদেবী বলেন, “যারা আমার ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ওঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কি করে থাকে? হোটেল চালাতে গেলে তোলা দেওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। টাকা নিতেই ওরা হোটেলে আসত।”

ashish manna sumit naha riaz ahmed dipak sau howrah bridge lodge
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy