Advertisement
E-Paper

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকার ভেঙে ডাকাতি

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জানালার গরাদ কেটে ভিতরে ঢুকে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে লকার ভেঙে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকার অলঙ্কার ও বহুমূল্য সামগ্রী লুঠ করে পালিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ শিলিগুড়ির বাগডোগরা থানার বিহার মোড় লাগোয়া এলাকার ঘটনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০২:৫৮

একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জানালার গরাদ কেটে ভিতরে ঢুকে প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে লকার ভেঙে গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকার অলঙ্কার ও বহুমূল্য সামগ্রী লুঠ করে পালিয়েছে একদল দুষ্কৃতী। বুধবার রাত দেড়টা নাগাদ শিলিগুড়ির বাগডোগরা থানার বিহার মোড় লাগোয়া এলাকার ঘটনা।

ঘটনাস্থল থেকে বাগডোগরা থানার দূরত্ব বড়জোর ৪০০ মিটার। পাশেই পুলিশের সার্কল ইন্সপেক্টরের অফিস। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টা ওই এলাকায় নজরদারি থাকে। তা হলে নজরদারির এমন হাল যে, রাতে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে গ্যাস কাটার দিয়ে লকার ভেঙে লুঠ করা যায়? এই প্রশ্ন তুলে বৃহস্পতিবার সকালে এলাকার ডিসি (পশ্চিম) শ্যাম সিংহকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দাদের অনেকে। শুধু তাই নয়, ডিসির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অনেকেই দুর্ব্যবহার-সহ নানা অভিযোগ তোলেন। এলাকার পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা বারবার বললেও তা কেন হয়নি, সেই প্রশ্নও ওঠে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার আশ্বাসে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘‘পুলিশি নিরাপত্তায় কোনও গাফিলতি নেই। নজরদারি সত্ত্বেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে তদন্ত হবে। বাসিন্দাদের সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। কলকাতা থেকে শুক্রবার সিআইডির ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা এসে আঙুলের ছাপ নেবেন। তাঁদের প্রক্রিয়া শেষ হলে তার পরেই ব্যাঙ্ক খোলার অনুমতি দেওয়া হবে।’’

এ দিন ১০টা নাগাদ ব্যাঙ্কের কর্মীরা সামনের গেটের তালা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখেন, সব লণ্ডভণ্ড। বেশ কিছু লকার কেটে ভিতরের সব কিছু বের করে নেওয়া হয়েছে। এর পরে খবর পেয়ে সিআইডি-র কুকুর নিয়ে তদন্তে আসে পুলিশ। দু’বার। এবং দু’বারই এপাড়া ওপাড়া ঘুরে কুকুরটি খেই হারিয়ে ফেলে। পুলিশ তদন্তে জেনেছে, ওই ব্যাঙ্কে রাতে নিরাপত্তারক্ষী থাকে না। ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক ম্যানেজার উমেশচন্দ্র গুছাইত বলেন, ‘‘রাতে নিরাপত্তারক্ষী রাখার নিয়ম নেই। তবে দিনে নিরাপত্তারক্ষী থাকে। এর বাইরে আমার কিছু করার নেই।’’

যে ভবনটিতে ব্যাঙ্কটি রয়েছে, তার পাশে আরও একটি ছোট মার্কেট কমপ্লেক্স রয়েছে। পুলিশের ধারণা, ওই কমপ্লেক্সের ছাদ দিয়েই দুষ্কৃতীরা উঠেছে। বুধবার রাত একটা নাগাদ ওই ছাদে বসে গ্যাস কাটার দিয়ে ব্যাঙ্কের জানালার গরাদ কাটা হয়েছে। সেখান দিয়ে ঢুকে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত লকারের ভল্ট কাটা হয় বলে জানানো হয়েছে। ওই ভল্টে মোট ৯০টি লকার রয়েছে। তার মধ্যে ১৬টি লকার কেটে সমস্ত লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। তবে তা থেকে কী কী খোয়া গিয়েছে, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি। পুলিশ আপাতত এলাকায় কারও প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় অন্তত পাঁচ-ছ’জন ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা পুলিশের। সিসিটিভি-র সংযোগ কেটে দেওয়ার আগে তিন জনের মুখ ঢাকা চেহারা ধরা পড়েছে তাতে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকে প্রথমেই মেন সুইচ অফ করে দিয়েছিল। তার পরেই সিসিটিভির মূল তার কেটে দেওয়া হয়। ভল্টের মধ্যেও সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। তারও সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। ব্যাঙ্কের ভিতরে মোট আটটি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল বলে জানিয়েছেন রিজিওনাল ম্যানেজার। তার দুটিতে সংযোগ থাকলেও, আলো না থাকায় কিছু বোঝা যাচ্ছে না। ওই ভবনের নীচের তলায় রঞ্জিত মল্লিক নামে একজন পরিচারক থাকেন। তিনি রাতে নিরাপত্তাও দেখেন। তিনিও কিছু টের পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘আমি মাঝরাতে কিছু শব্দ শুনে উঠেছিলাম। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে কিছু দেখতে পাইনি।’’

সকালে খবর ছড়াতেই ব্যাঙ্কে ভিড় করেন উদ্বিগ্ন লকার-মালিকেরা। তাঁদের দাবি ছিল, কোন লকারগুলি থেকে লুঠ হয়েছে, তা জানানো হোক।

তার ভিত্তিতে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করবেন। কিন্তু বিকেল পর্যন্ত তাঁদের কিছু জানানো হয়নি। ফলে ক্ষোভ পরিণত হয় বিক্ষোভে। বাগডোগরার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী সুনীল কুমারের অভিযোগ, ‘‘আমাদের লুঠ হওয়া লকারের নম্বর জানাতে পুলিশ সারাদিন পার করে দিল!’’

শেষ পর্যন্ত পুলিশ লকারের নম্বর জানানোর পরে এক লকারের মালিক মুনমুন নন্দী ভেঙে পড়েন। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘বিয়ের সমস্ত গয়না তাতে ছিল।’’ আর এক লকার-মালিক অরুণকুমার শর্মার দাবি, ‘‘আমাদের খোয়া যাওয়া সমস্ত জিনিসের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ব্যাঙ্ককে দায়িত্ব নিতেই হবে।’’ অমল শিকদারের দাবি, ‘‘নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। সব গাফিলতি তো ব্যাঙ্কের।’’ এগুলোর কোনওটারই উত্তর দিতে চাননি রিজিওনাল ম্যানেজার বা ব্যাঙ্কের অন্য কোনও আধিকারিক। তবে ব্যাঙ্ক সূত্রে খবর, আইন অনুযায়ীই ব্যবস্থা নেওয়ার কথাই ভাবছেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ।

Robbery Bank
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy