রোমের হোটেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য নির্ধারিত ঘর নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্যের কূটনৈতিক মহারণ শুরু হয়ে গেল।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মিশনারিজ অব চ্যারিটির আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পরে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার স্কোয়ারের কাছেই ‘হোটেল গ্র্যান মেলিয়া’-র সাত তলায় তাঁর জন্য একটি বিশেষ সুইট বুক করা হয়েছিল। কিন্তু মমতার সফরের মাত্র দু’দিন আগে রোমে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দফতর থেকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানানো হয়েছে, রোমে কোনও পছন্দসই হোটেলে ঘর পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ‘গ্র্যান মেলিয়া’র সাত তলায় রাজ্য সরকারের নির্ধারিত বেশ কিছু ঘর নিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে ভারত সরকার। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্রবধূ তথা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হরসিমরৎ কউরের জন্য যে ঘর নির্দিষ্ট ছিল, তা তাঁর পছন্দ হয়নি। তাই তাঁকে মমতার ঘরের উল্টো দিকে একটি ঘর দেওয়া হচ্ছে। যে ঘরটি বরাদ্দ ছিল তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। হরসিমরৎ একা নন, তাঁর সঙ্গে এক বিশাল বাহিনী ওই ফ্লোরে থাকবেন।
বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে আজ রাতে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় বেজায় চটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের কাছে মমতা তাঁর ক্ষোভ জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সফর নির্ধারিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্রের ভিত্তিতে। কাজেই বহু দিন আগে, মিশনারিজ অব চ্যারিটির আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেই, মমতা প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে অনুমতি নিয়ে রেখেছিলেন। এমনকী, কোন হোটেলে থাকলে ভাল হয়, বিদেশ মন্ত্রক সেটাও রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেয়। এখন রোমে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অনিল ওয়াদবা হঠাৎ জানাচ্ছেন, কিছু ঘর কেন্দ্রকে নিতেই হবে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নেহাতই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বিরোধী বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূত নিজেও। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মমতা ঠিক করেছেন, হোটেলের সাত তলাতে তিনি থাকবেন না। দলের সব সদস্যকে নিয়ে অন্য কোনও
তলায় থাকবেন।
কেন্দ্রের এই আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমিত মিত্ররাও। সুদীপ রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন, এটা শিষ্টাচার নয়, কূটনৈতিক ভ্রষ্টাচার! আর পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র নিজে রাষ্ট্রদূতকে ফোন করে যা বলেছেন, তার সারমর্ম— ‘এ সব হচ্ছেটা কী মশাই! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওয়াই চটি পরা একজন ‘কমনার’ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। তাই বলে তাঁকে এমন হেনস্থা করবেন আপনারা!’
মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অফিসারেরা জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জেড ক্যাটেগরির নিরাপত্তা পান। তিনি যেখানেই যান, আশপাশের ঘরগুলোতে নিরাপত্তা কর্মীদের থাকতে হয়। ফলে আচমকা ঘর বদলানো যায় না। তা ছাড়া, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডেরেক ও’ব্রায়েন দু’জনেই সংসদ সদস্য। সংসদীয় প্রোটোকল অনুসারে তাঁরাও সুইট পাওয়ার অধিকারী। তাঁদের ঘর বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন হোটেলের অন্য কোথাও সুইট পাচ্ছেন না। একই পরিস্থিতি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালেরও। তাঁকে ওই হোটেলের এক তলায় একটি ঘর দেওয়া হয়েছিল। সেই ঘরটিতেও যথেষ্ট নিরাপত্তা ছিল না। কেজরীবালও তাই মমতার পদাঙ্ক অনুসরণ ওই ঘরটি ছেড়ে দিয়েছেন।
মাদার টেরিজার সন্ত স্বীকৃতির অনুষ্ঠানের এক দিন আগে, ৩ সেপ্টেম্বর, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রোমে এক নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আমন্ত্রণপত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর নাম ছেপে দেওয়া হলেও, তাঁরা দু’জনেই ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। আজ গভীর রাত পর্যন্ত বিদেশ মন্ত্রকে এই আলোচনাই চলছে যে, ওই নৈশভোজে না যাওয়ার জন্যই কী মোদী সরকার এ ভাবে বদলা নিচ্ছেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy